ফাইল ছবি
দিনভর কালো আকাশ নেই। নেই অঝোরবর্ষণও। এ বার দক্ষিণবঙ্গে আষাঢ় এখনও পর্যন্ত যেন পঞ্জিকাতেই বন্দি! আবহাওয়া দফতরের তথ্য বলছে, আষাঢ় মাসের শেষে দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টির ঘাটতি গিয়ে ঠেকেছে ৪৬ শতাংশে। পরিণামে দ্বিমুখী বিপদ ঘনিয়ে আসতে পারে বলে আশঙ্কা আবহবিদদের। বৃষ্টির এই অভাব চাষে প্রভাব তো ফেলতেই পারে, সেই সঙ্গে ক্ষতি করতে পারে ভূগর্ভস্থ জলের ভাঁড়ারেরও। তার ফলে এই অঞ্চলে আর্সেনিক, ফ্লুয়োরাইডের মতো ক্ষতিকর রাসায়নিকের পরিমাণ ও প্রভাব বৃদ্ধির আশঙ্কা প্রবল।
জুনে প্রবল বৃষ্টির জেরে বর্ষার উদ্বৃত্ত ৬০ শতাংশ পেরিয়ে গিয়েছিল। কয়েক দিন বৃষ্টির দাপট কম থাকায় উদ্বৃত্ত রেখচিত্র নেমেছে। বাড়তি বৃষ্টির পরিমাণ এসে ঠেকেছে ১১ শতাংশে। তবে শনিবার আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, আগামী সপ্তাহে উত্তরবঙ্গে ভারী বৃষ্টি মিলতে পারে। তবে এর আগে উদ্বৃত্ত বৃষ্টির জন্য সেখানেও মানুষের বিপদ বেড়েছে।
তবে দক্ষিণের বিপদের মাত্রা একটু বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন পরিবেশবিজ্ঞানীদের অনেকে। তাঁদের বক্তব্য, বর্ষাকালে বৃষ্টির জলে ভূগর্ভের ভান্ডার পূর্ণ হয়। ফলে সারা বছর মাটির তলার জল যে-হারে তুলে খরচ করা হয়, বর্ষাকালে তা পুষিয়ে নিতে পারে প্রকৃতি। কিন্তু এ বছর বর্ষাকালে বৃষ্টির আকালে ভূগর্ভের জলভান্ডারের ক্ষতিপূরণ তো হচ্ছেই না, উল্টে খরচ বাড়তে পারে। অর্থাৎ আয় বন্ধ হবে, উল্টো দিকে বাড়বে ব্যয়ের বহর! কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের প্রাক্তন ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল গোকুলচন্দ্র দেবনাথ জানান, এই সময়ে আমন ধানের যে-বীজতলা তৈরি হয়, তাতে প্রচুর জল লাগে। বীজতলা তৈরির ক্ষেত্রে বৃষ্টির জলেই ভরসা রাখেন চাষিরা। তা না-পেলে ভূগর্ভের জল দিয়েই সেচের কাজ করবেন তাঁরা।
আর এখানেই বিপদ দেখছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব এনভায়রনমেন্ট স্টাডিজ়ের অধ্যাপক তড়িৎ রায়চৌধুরী। তাঁর মতে, একেই সারা বছর ধরে বিভিন্ন জায়গায় নির্বিচারে মাটির নীচের জল তোলা হয়। তার পরে বর্ষায় বৃষ্টি না-হলে সেচ-সহ নানা কাজের জন্য জল তোলা হবে। তাতে ভূগর্ভে থাকা আর্সেনিক, ফ্লুয়োরাইডের মতো বিষাক্ত রাসায়নিক উপরের স্তরে উঠে আসবে এবং অচিরেই সেগুলি পরিবেশেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।
গাঙ্গেয় বঙ্গে বর্ষার যা পরিস্থিতি তাতে ঘাটতির শীর্ষে রয়েছে মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, উত্তর ২৪ পরগনার মতো জেলা। মালদহ এবং দুই দিনাজপুরেরও অবস্থা ভাল নয়।