মোদীর শপথে ডাক পাইনি, আক্ষেপ গঙ্গাধরের মায়ের

সৌভাগ্য হয়নি জগৎবল্লভপুরের যমুনাবালিয়া গ্রামের জওয়ান গঙ্গাধর দলুইয়ের পরিবারের। কাশ্মীরের উরিতে ২০১৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর জঙ্গি হানায় নিহত হন গঙ্গাধর।

Advertisement

নুরুল আবসার

জগৎবল্লভপুর শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৯ ০১:৫৮
Share:

গঙ্গাধর দলুইয়ের মা। ফাইল চিত্র

আড়াই বছরের ব্যবধানে কাশ্মীরের জঙ্গি হানায় হাওড়ার দুই জওয়ান নিহত হন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নরেন্দ্র মোদীর দ্বিতীয় বারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে হাজির থাকার আমন্ত্রণ পেল এক জওয়ানের পরিবার, অন্য পরিবার পেল না!

Advertisement

গত ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামায় সিআরপিএফ কনভয়ে জঙ্গি হানায় যে ৪৯ জন জওয়ান নিহত হন, তাঁদের মধ্যে ছিলেন বাউড়িয়ার চককাশীর বাবলু সাঁতরা। আজ, বৃহস্পতিবার তাঁর পরিবার প্রধানমন্ত্রীর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে হাজির থাকার আমন্ত্রণ পেয়েছেন। কিন্তু সেই সৌভাগ্য হয়নি জগৎবল্লভপুরের যমুনাবালিয়া গ্রামের জওয়ান গঙ্গাধর দলুইয়ের পরিবারের। কাশ্মীরের উরিতে ২০১৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর জঙ্গি হানায় নিহত হন গঙ্গাধর। শপথে ডাক না-পাওয়ায় কিছুটা আক্ষেপও শোনা গিয়েছে তাঁর পরিবারের লোকজনের মুখে।

বুধবার দুপুরে তাঁর বাবা ওঙ্কারনাথবাবু বলেন, ‘‘আমার ছেলে যখন মারা যায়, তখনও মোদীজিই প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। উরির সব ঘটনা তিনি জানেন। ফের তিনি প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন, আমরা খুশি। কিন্তু যেহেতু জেলারই আরও নিহত জওয়ানের পরিবার তাঁর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যাওয়ার আমন্ত্রণ পেয়েছেন, তাই আমরাও পেলে ভাল লাগত।’’ গঙ্গাধরের মা শিখাদেবী বলেন, ‘‘দেশের একটা বড় ভরসা মোদী। তিনি যে ভাবে সেনার পাশে দাঁড়ান, তাতে আমরা গর্বিত। সেই কারণেই যদি তাঁর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে হাজির থাকার আমন্ত্রণ পেতাম তাঁকে নিজের চোখে দেখার সুযোগ হতো। সেটা পেলাম না।’’

Advertisement

কেন তাঁদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে ডাকা হল না?

বিজেপির হাওড়া (গ্রামীণ) জেলা সভাপতি অনুপম মল্লিক বলেন, ‘‘জেলা সভাপতিদেরই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল সেনা পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করার। আমার গ্রামীণ জেলা এলাকায় বাবলু সাঁতরার পরিবার বাস করেন। তাই তাঁকে আমরা আমন্ত্রণ জানিয়েছি। গঙ্গাধর দলুইয়ের পরিবারের বিষয়টি দেখার কথা সদর জেলার। ওরাই এটা বলতে পারবে।’’ সদর জেলা সভাপতি সুরজিৎ সাহা বলেন, ‘‘সেনা পরিবারকে আমন্ত্রণ জানানোর ব্যাপারে আমাদের কাছে কোনও নির্দেশিকা ছিল না। তাই এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারব না।’’

গরিব পরিবারের ছেলে গঙ্গাধর নিহত হন মাত্র ২২ বছর বয়সে। তার দু’বছর আগে তিনি সেনাবাহিনীতে চাকরি পান। গ্রামে তাঁদের টালির চালের মাটির বাড়ি ছিল। ছুটিতে ফিরে পাকা বাড়ি করার পরিকল্পনা ছিল তাঁর। সে জন্য পাশের গ্রাম প্রতাপপুরে জমিও কিনেছিলেন। কিন্তু জঙ্গিরা তাঁর স্বপ্ন খান খান করে দেয়। উরিতে গঙ্গাধরদের সেনা-ছাউনিতে হামলা চালিয়েছিল জঙ্গিরা। বোমা-বিস্ফোরণে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় গঙ্গাধরের দেহ।

সেই জমিতেই ছোট্ট দু’কামরার পাকা বাড়ি করেছেন ওঙ্কারনাথ। সেখানেই এখন ছোট ছেলে বরুণ এবং স্ত্রী শিখাদেবীকে নিয়ে থাকেন তিনি। বরুণ বিএ প্রথম বর্ষের ছাত্র। ঘরে এখনও গঙ্গাধরের সামরিক উর্দি পরা ছবি রয়েছে। তাতে দু’বেলা শ্রদ্ধা জানান পরিবারের সকলে। সেনাবাহিনীর তরফ থেকে গঙ্গাধরের মৃত্যু পরবর্তী সব ধরনের সহায়তা করা হয়েছে জানিয়েছে কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেন ওঙ্কারনাথ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement