নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে ভাষণ দিচ্ছেন নরেন্দ্র মোদী। পিটিআই
রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সদর দফতরে দাঁড়িয়ে কারও নাম না করে তুলেছিলেন যুব সমাজকে ‘ভুল বোঝানো’র অভিযোগ। গঙ্গা পেরিয়ে আবার কলকাতায় এসে, আরও বাড়ালেন আক্রমণের ধার। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম উচ্চারণ করলেন না ঠিকই। কিন্তু ‘কাটমানি’ আর ‘সিন্ডিকেট’ প্রশ্নে তীব্র কটাক্ষ ছুড়লেন মমতার সরকারের দিকে। কাটমানি মিলবে না বলেই প্রধানমন্ত্রী কিসান সম্মান নিধি বা আয়ুষ্মান ভারতের মতো প্রকল্প চালু করতে দেওয়া হচ্ছে না বাংলায়— বললেন মোদী।
নেতাজি ইনডোরে এ দিনের অনুষ্ঠানই ছিল প্রধানমন্ত্রীর এই দু’দিনের বাংলা সফরের শেষ অনুষ্ঠান। কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের ১৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত সেই অনুষ্ঠানে নিজের ভাষণের শুরুতে কলকাতা বন্দরের গুরুত্ব এবং তার ইতিহাস নিয়েই বলছিলেন মোদী। সে প্রসঙ্গের শেষ দিকে পৌঁছে মোদী জানান যে, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের নামে এ বার এই বন্দরের নামকরণ করা হচ্ছে। সেই সূত্র ধরেই মোদী ঢোকেন শ্যামাপ্রসাদের অবদান প্রসঙ্গে। শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের তৈরি করা নানা নীতি এবং পরামর্শকে পরবর্তী কালে অবহেলা করা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। তার পরে পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান সরকারকে আক্রমণ করা শুরু করেন।
কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি টাকা পাঠানোর যে প্রকল্প গত বছরের বাজেটে ঘোষণা করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার, সেই ‘প্রধানমন্ত্রী কিসান সম্মান নিধি’কে (পিএমকিসান) পশ্চিমবঙ্গে চালু হতে দেওয়া হচ্ছে না বলে মোদী অভিযোগ করেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম না করে মোদী বলেন, ‘‘আমি জানি না, তিনি চালু হতে দেবেন কি না। কিন্তু যদি চালু হতে দেন, তা হলে অনেকে উপকৃত হবেন।’’
শুধু পিএমকিসান প্রকল্প নয়, আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পও বাংলায় চালু হতে দেওয়া হয়নি বলে এ দিন মন্তব্য করেন মোদী। তার পরেই ছুড়ে দেন কটাক্ষ। ওই সব প্রকল্পের টাকা সরাসরি প্রাপকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঢোকে বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘কোনও দালাল নেই, কোনও কাট (কাটমানি) নেই, কোনও সিন্ডিকেট নেই।’’ এতেই থামেননি মোদী। কটাক্ষের সুর আরও স্পষ্ট করে তুলে তিনি বলেন, ‘‘যেখানে কোনও কাট মেলে না, যেখানে সিন্ডিকেটের কথা চলে না, সে প্রকল্প চালু করে লাভ কী!’’
‘কাটমানি’ এবং ‘সিন্ডিকেট রাজ’ প্রশ্নে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এবং তাঁর সরকারকে বার বারই আক্রমণ করেছে বিরোধীরা। লোকসভা ভোটের আগে নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহ যতগুলি জনসভা এ রাজ্যে করেছেন, প্রায় সবক’টি থেকেই সুর চড়িয়েছিলেন ‘কাটমানি’ এবং সিন্ডিকেট রাজ’ ইস্যুতে। দু’দিনের কলকাতা সফরে শেষ কর্মসূচিতে সেই প্রসঙ্গ আবার টেনে আনলেন প্রধানমন্ত্রী।
শনিবার কারেন্সি বিল্ডিঙে আয়োজিত অনুষ্ঠানেও মোদী ভাষণ দিয়েছিলেন। সে সময় তিনি রাজ্য সরকারকে কটাক্ষের পথে হাঁটেননি। রবিবার সকালে বেলুড় মঠে যে ভাষণ তিনি দেন, সেখানে সিএএ-র পক্ষে সওয়াল এবং সিএএ বিরোধীদের জন্য কটাক্ষ ছিল। কিন্তু দুর্নীতি বা অন্যান্য প্রশ্নে নিজের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে মোদী সে মঞ্চ থেকেও আক্রমণ করেননি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গতকাল একাধিক বার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর দেখা হওয়ার কথা ছিল। তার মাঝে মমতার সরকারের দিকে কটাক্ষ ছুড়ে পরিস্থিতি তিক্ত করে তুলতে চাননি মোদী। আর রবিবার সকালের ভাষণ ছিল রামকৃষ্ণ মিশনের মতো প্রতিষ্ঠানের মঞ্চ থেকে। সে মঞ্চে ‘কাটমানি’ বা ‘সিন্ডিকেট’ প্রসঙ্গ তুলে বিতর্ক বাড়াতে চাননি মোদী। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলা সফরের একেবারে শেষ লগ্নের জন্য মোদী অপেক্ষা করছিলেন। দু’দিনের কর্মসূচি প্রায় মসৃণ ভাবে মিটে যাচ্ছে, এমনটা নিশ্চিত করে নেওয়ার পরেই তিরটা ছুড়লেন মোদী। মমতাকে বিঁধে উড়ে গেলেন দিল্লির দিকে।