কলকাতাতেও বড়সড় ভূমিকম্পের আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
আগামী দু’মাসের মধ্যে বড়সড় ভূমিকম্প হতে চলেছে কলকাতায়! রবিবার ভোর রাতে পুরুলিয়া এবং তার আগে কখনও বাঁকুড়া, কখনও অসম-অরুণাচলপ্রদেশের ভূমিকম্পে কলকাতার উপর এমনই শঙ্কার মেঘ দেখছেন বিজ্ঞানীরা। মাঝারি মাত্রার বারবার কম্পনে কলকাতার নীচ দিয়ে যাওয়া প্লেট নড়ে গিয়ে এই বড় ভূমিকম্প হতে পারে বলে বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা।
রবিবার পুরুলিয়া-সহ ঝাড়খণ্ড লাগোয়া কিছু জায়গায় ভূকম্পন হয় ভোর আড়াইটা নাগাদ। সূত্রের খবর, এ দিন পুরুলিয়া থেকে ১০ কিলোমিটার নীচে এই কম্পনের কেন্দ্র ছিল। রিখটার স্কেলে যার মাত্রা ছিল ৪। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, গত ক’দিন ধরেই ভারতের নানা প্রান্তে এরকমই মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হচ্ছে। এ দিনই আবার রাত ১টা নাগাদ জম্মু-কাশ্মীরেও ভূমিকম্প হয়। রিখটার স্কেলে যার মাত্রা ছিল ৩.২। তেমন শনিবার রাতে বাঁকুড়া জেলাতে কম্পন অনুভূত হয়েছে। শনিবার অরুণাচলপ্রদেশের পূর্ব কামেঙ্গ জেলায় ভূমিকম্প হয়েছে। যার তীব্রতা ছিল রিখটার স্কেলের ৫.৫। শুক্রবার বিকেলে ভূমিকম্প হয় অসমে। যার মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৫.৬। প্রতিটার তীব্রতার মাত্রা মাঝারি মাপের হওয়ার এবং খুব অল্প সময়ের জন্য কম্পন হওয়ায় কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
তবে বারবার এই ভূমিকম্পের ফলে একটা বিষয়ই ভাবাচ্ছে বিজ্ঞানীদের। তা হল, গত চার দিনে ঘটা ভূমিকম্পের উৎস। দেখা গিয়েছে, প্রতি ক্ষেত্রেই যে অঞ্চলে ভূমিকম্প হয়েছে, ভূত্বক থেকে ১০ কিলোমিটার নীচে রয়েছে তার এপিসেন্টারগুলো। পুরুলিয়া, বাঁকুয়া, জম্মু-কাশ্মীর, অরুণাচলপ্রদেশ এবং অসম সব জায়গাতেই পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে ১০ কিলোমিটার নীচে পৃথিবীর প্লেটগুলো খুব অল্প সময়ে পর পর কয়েক বার নড়াচড়া করে ফেলেছে। ভূত্বক থেকে অনেকটা নীচে হওয়ায় তার তীব্রতা কম হয়েছে। কিন্তু কলকাতা নিয়ে বিজ্ঞানীদের আশঙ্কার বিষয়টা অন্য জায়গায়।
আরও পড়ুন: কিশোর মন জয়ে চাঁদের হাতছানি, কুইজে সফল হলেই শ্রীহরিকোটার টিকিট, ঘোষণা মোদীর
খড়গপুর আইআইটির জিওফিজিক্স বিভাগের অধ্যাপক শঙ্কর নাথ জানাচ্ছেন, পুরুলিয়া এবং বাঁকুড়ায় ভূমিকম্পের এপিসেন্টার থেকে ২০০-২২৫ কিলোমিটার দূরে রয়েছে ইয়াসিন প্লেট। ইয়াসিন রেঞ্জ কলকাতার মাত্র ৪ কিলোমিটার নীচ দিয়ে গিয়েছে। ইয়াসিন প্লেটের বিস্তৃতি অনেক বড় হওয়ায় একে ইয়াসিন রেঞ্জ বলা হয়। দীর্ঘ ২৫ কিলোমিটার চওড়া সেই হিঞ্জ জোন কলকাতা থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত বিস্তৃত। যা বেঙ্গল বেসিনের পূর্ব দিকে যমুনা ফল্টে গিয়ে মিশেছে। ওই সংযোগস্থলে ভয়াবহ ভূকম্পে অতীতে দারুণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঢাকা, বরিশাল, পাবনা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ-সহ একটি বিশাল এলাকা।
বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, বারবার এই ছোট কম্পনগুলোও ইয়াসিন রেঞ্জে বড় ধাক্কা দিতে পারে। যার ফলে ভারতের বিভিন্ন জায়গা বড় ভূমিকম্পের মুখোমুখি হতে পারে। এমনকি বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, আগামী দু-এক মাসের মধ্যে কলকাতায় বড়সড় ভূমিকম্প হতে পারে।
আরও পড়ুন: বয়স্ক কর্মীদের কি আগাম অবসর! রেল নিয়ে ভাবনা শুরু কেন্দ্রের
খড়গপুর আইআইটির তথ্য বলছে, কলকাতায় ভূমিকম্প হলে কার্যত তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়তে পারে পার্ক স্ট্রিট, সল্টলেক, নিউ টাউন, রাজারহাট, দমদম, নাগেরবাজারের মতো জনবহুল এলাকাগুলি। ভয়াবহ ভূকম্পে ধূলিসাৎ হয়ে যেতে পারে সিঁথি, কালিদহ, নোয়াপাড়া, দক্ষিণদাড়ি, গোপালপুর, তেঘরিয়া, বেরাবেরি, দুর্গানগর ও মহিষবাথান-সহ বিশাল একটি এলাকা। ভূমিকম্প কতটা নাড়িয়ে দিতে পারে শহর কলকাতা আর তার আশপাশের এলাকাগুলিকে তা বুঝতে বছর খানেক আগে কেন্দ্রীয় ভূবিজ্ঞান মন্ত্রকের তত্ত্বাবধানে একটি ‘সিসমোলজিক্যাল মাইক্রোজোনেশন ম্যাপ’ বানিয়েছিল খড়্গপুরের আইআইটি। সেই মানচিত্রই ওই ভয়াবহ ছবি উঠে এসেছে।
আরও পড়ুন: বাঘ বাঁচাতে গিয়ে গুজবের শিকার হতে হতে বাঁচলেন বাঙালি দম্পতি
ওই মানচিত্র জানাচ্ছে, ভূগর্ভের জলস্তর অন্য জায়গাগুলির তুলনায় অনেক উপরে থাকায় ও তার খুব সামান্য নীচে পলিমাটি থাকায় তীব্র জলোচ্ছ্বাসে কার্যত ‘সলিলসমাধি’ ঘটতে পারে রাজারহাট, কৃষ্ণপুর, নিকো পার্ক, মহিষবাথান, নিউ টাউন, সল্টলেক, নারকেলডাঙা, শিয়ালদহ স্টেশন, বেলেঘাটা, বাগবাজার, বিবাদি বাগ, পার্ক স্ট্রিট, পার্ক সার্কাস, বালিগঞ্জ, ঢাকুরিয়া ও কসবা-সহ বিস্তীর্ণ এলাকার।