প্রতীকী ছবি।
বেলা তখন সাড়ে এগারোটা। লাইন দিয়ে পরীক্ষার্থীরা ঢুকছে ইসলামপুর স্টেট ফার্ম কলোনি হাইস্কুলে। এ দিন কাউকে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশি করা হচ্ছে না। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মাইকে ঘোষণা করছেন, কেউ যেন মোবাইল ফোন বা স্মার্ট ঘড়ি পরে না ঢোকে। এর মধ্যে হঠাৎ হইচই। এক ছাত্রের কাছ থেকে মিলল মোবাইল ফোন। তা দেখে রীতিমতো ক্ষিপ্ত স্কুলের অন্য শিক্ষকরা। কয়েক জন শিক্ষক বলতে শুরু করলেন, ‘‘এই জন্যই মেটাল ডিটেক্টর প্রয়োজন।’’ কেউ কেউ আবার প্রশ্ন তুললেন, ‘‘এ বার পর্ষদ কী বলবে!’’ পরে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক স্বপন সরকার বলেন, ‘‘মেটাল ডিটেক্টর নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। তাই আমরা আর সে সব ব্যবহার করছি না। তবে মেটাল ডিটেক্টর ব্যবহার করা হলে ছাত্রছাত্রীরা মোবাইল নিয়ে ঢুকছে কিনা, তা সহজেই জানা সম্ভব হয়।’’
উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরে দু’টি স্কুলে মেটাল ডিটেক্টর ব্যবহার নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। একটি ইসলামপুর স্টেট ফার্ম কলোনি হাইস্কুল, অন্যটি শ্রীকৃষ্ণপুর হাইস্কুল। মধ্যশিক্ষা পর্ষদ অবশ্য জানিয়েছে, তারা এই সংক্রান্ত কোনও নির্দেশিকা জারি করেনি। তার পরেও মেটাল ডিটেক্টর ব্যবহার করায় পরীক্ষার্থীদের কিছুটা অসুবিধা হচ্ছে বলেও অভিভাবকদের একাংশ জানিয়েছে। এ দিন দু’টি স্কুলে গিয়েই দেখা গেল, মেটাল ডিটেক্টর উধাও। শ্রীকৃষ্ণপুর হাইস্কুলে দরজা খোলে সকাল ১১টায়। দরজায় পুলিশের সঙ্গে দাঁড়িয়েছিলেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক স্বপন পাল। ছিলেন অন্য শিক্ষকরাও। এ দিন মেটাল ডিটেক্টর নেই কেন, এই প্রশ্নের জবাবে স্বপনবাবু বলেন, ‘‘আর তার (মেটাল ডিটেক্টরের) প্রয়োজন নেই। ছাত্রীরা কয়েক দিনে বুঝতে পেরেছে, মোবাইল পুরোপুরি নিষিদ্ধ।’’
স্টেট ফার্ম কলোনি হাইস্কুলের পরিস্থিতি এতটা সহজ নয়। এখানে কিছু ছাত্রের থেকে ডিজিট্যাল ঘড়িও মিলেেছে। মোবাইল নিয়ে আসা ছাত্রের দাবি, তার এক আত্মীয় মারা গিয়েছে। পরীক্ষা হওয়ার পরে বাড়ির লোককে যাতে সে ফোন করে নিতে পারে, তাই মোবাইল এনেছিল। তার দাবি, সে মোবাইলটি জমা দিয়েই দিত। ছাত্রটিকে অবশ্য পরীক্ষায় বসতে দেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। স্বপনবাবু বলেন, ‘‘পরীক্ষা শুরুর আগেই মোবাইল পাওয়া গিয়েছে। তাই ছাত্রটির পরীক্ষার বসতে দেওয়া হয়েছে।’’
আরও পড়ুন: ট্রেন যোগাযোগের উন্নতি হোক, আবেদন রানিগঞ্জে
এ দিন বাঁকুড়ার ছাতনায় একটি স্কুলে পরীক্ষার্থীদের জুতো-মোজা খুলিয়ে তল্লাশি চালানোর অভিযোগ ওঠে। অভিভাবকরা পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘পুলিশ স্কুলের মূল দরজার দায়িত্বে ছিল। জুতো-মোজা খুলিয়ে তল্লাশি হয়েছে কিনা, জানি না।’’ জেলার পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাও বলেন, ‘‘খোঁজ নিচ্ছি।’’
পরীক্ষাকেন্দ্রে মোবাইল নিয়ে ঘোরার অভিযোগ উঠেছে এক পার্শ্ব শিক্ষকের বিরুদ্ধেও। শনিবার নকশালবাড়ির নন্দ প্রসাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের ঘটনা। নজরদারি শেষ না করেই কেন্দ্র ছেড়ে চলে যাওয়ার অভিযোগও উঠেছে তার বিরুদ্ধে। মাধ্যমিকের সমস্ত পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাঁর স্কুলে ঢোকা নিষিদ্ধ করেছে পর্ষদ।