মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘির তৃণমূল বিধায়ক বাইরন বিশ্বাস। —ফাইল চিত্র।
টানা ১৯ ঘণ্টা ধরে আয়কর বিভাগের তল্লাশি চলল মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘির তৃণমূল বিধায়ক বাইরন বিশ্বাসের বাড়ি ও তাঁর পরিবারের অন্য প্রতিষ্ঠানগুলিতে। বৃহস্পতিবার বাইরন নিজেই জানিয়েছেন, তাঁর বাড়ি থেকে ৬০ লক্ষ টাকা আটক করা হয়েছে। তিনি বলেন, “আমাদের একাধিক স্কুল, হাসপাতাল, চায়ের কারখানা, বিড়ি কোম্পানি রয়েছে। কাজেই বহু ক্ষেত্রে নগদ টাকার ব্যবহার হয়। কয়েকশো কর্মচারী রয়েছেন। তাঁদের জন্য খরচ আছে। আমাদের পারিবারিক খরচও রয়েছে। কাজেই আটক (বাজেয়াপ্ত) ৬০ লক্ষ টাকা হিসেব বহির্ভূত টাকা নয়। আমার সরকারি নথিপত্রের কিছু কপিও আয়করের আধিকারিকেরা নিয়ে গিয়েছেন। আর কিছুই মেলেনি এই তল্লাশিতে।’’
বুধবার রাতে বাইরন টানা জিজ্ঞাসাবাদের সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাড়ির কাছেই তাঁর নিজেরই হাসপাতালে বাইরনকে ভর্তি করানো হয়। তবে কিছু ক্ষণের মধ্যেই তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ দিন বাইরন বলেন, ‘‘রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় সমস্যা হয়েছিল। হাসপাতালে গিয়ে ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই বাড়ি ফিরে আসি। এখন সুস্থ, তবে সবাই কিছুটা ক্লান্ত। বাবার বয়স হয়েছে। তাই কিছুটা চিন্তিত। কারণ এই ধরনের তল্লাশির মুখোমুখি কখনও হতে হয়নি আমাদের।’’ বাইরন দাবি করেছেন, ‘‘দীর্ঘ তল্লাশিতে পরিবারের উপর একটু চাপ তো পড়েই। কিন্তু ব্যবসা যখন করি, তখন যাবতীয় নথিপত্র রেখেই করি।’’
বুধবার সকাল ৬টা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত আয়কর বিভাগের জনা ১৮ অফিসার একসঙ্গে বাইরনের বাড়ি ও তাঁর পরিবারের সাতটি প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালান। বাইরনেরা তিন ভাই। প্রত্যেকেই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। যুক্ত তাঁর বাবা ও বাড়ির মহিলা সদস্যেরাও। ২০২১-২২ সালে বাইরন ও তাঁর স্ত্রী মিলে প্রায় ৯৬ লক্ষ টাকা আয়ের উপর আয়কর দিয়েছেন। নির্বাচন কমিশনের কাছে দাখিল করা হিসাব মতো গত পাঁচ বছরে বাইরন তাঁর আয় দেখিয়েছেন বছরে ৫৮ লক্ষ থেকে ১.১৫ কোটি টাকা পর্যন্ত। ফেব্রুয়ারি মাসে পেশ করা হিসাব মতো তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ১৯ কোটি টাকা। পাশাপাশি, তাঁর ঋণের পরিমাণও ছ’কোটি টাকা।
আয়কর বিভাগের আধিকারিকেরা অবশ্য কোনও কথা বলতে চাননি। রাতে বেরোনোর সময় তাঁরা বলে যান, এই অভিযান সম্পর্কে কিছু জানানোর এক্তিয়ার তাঁদের নেই।
এ দিন কলকাতায় ফিরহাদ হাকিম বলেন, “এর আগে বিড়ি ব্যবসায়ী জাকির হোসেনের বাড়িতেও আয়কর হানা হয়েছিল। এ বার বাইরনের বাড়িতে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘আয়কর দফতরকে ওঁরা হিসাব দেবেন। এটা সম্পূর্ণ তাঁদের ব্যাপার। তবে, যে হেতু বাইরন তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন, তাই হানা দিয়েছে আয়কর।’’ এর পরে ফিরহাদ বলেন, ‘‘এমন হানার পরেও তৃণমূল বাড়বে এবং তল্লাশি অভিযানও বাড়তে থাকবে।”
বিড়ি মালিক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রাজকুমার জৈন বলেন, “দু’-চার জন ছাড়া বিড়ি ব্যবসায়ীদের প্রায় কেউই রাজনীতি করেন না। তাঁদের বাড়িতেও তো এ বার আয়কর হানা দিয়েছে। তাই রাজনীতির সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই।”
দেড় দিন ধরে আয়কর দফতরের অভিযান চলছে পূর্ব বর্ধমানের ভাতারের নর্জায় একটি কাগজকলেও। বুধবার দুপুর ১টা নাগাদ অভিযান শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত তা চলছে। কারখানা সূত্রে জানা গিয়েছে, বিভিন্ন কম্পিউটার, ফাইল ও কিছু কর্মীর মোবাইল ফোন পরীক্ষা করা হচ্ছে। কারখানা কর্তৃপক্ষের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।