ব্যাট-বল নিয়ে অশোক ভট্টাচার্য। হিলকার্ট রোডে। ছবি: স্বরূপ সরকার
বেসরকারি বাস প্রায় চলবে না, জানাই ছিল। সরকারি বাস চললেও তাতে বিশেষ সুরাহা হয়নি। রাজ্যের বহু জায়গায় রেল অবরোধও করা হয়। কোথাও দোকান-বাজার প্রায় বন্ধ রইল, আবার কোথাও প্রায় স্বাভাবিক। সব মিলিয়ে কেন্দ্রীয় কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে ডাকা ভারত বন্ধে মিশ্র সাড়া পড়ল রাজ্যে। সোমবারের গোলমালের পরিপ্রেক্ষিতে এ দিন উত্তরবঙ্গ বন্ধ ডেকেছিল বিজেপি। কিন্তু আলাদা করে তার কোনও প্রভাব কার্যত বোঝা যায়নি।
দিল্লিতে সমবেত কৃষকদের তরফে বুধবার বেলা ১১টা থেকে ৩টে পর্যন্ত বন্ধ ডাকা হলেও সাতসকালেই পথে নেমে পড়েন সমর্থনকারীরা। সিপিএম প্রভাবিত কৃষক সভার পাশাপাশি সব বাম দল এবং কংগ্রেসের সমর্থকেরা সাধ্য মতো পথ ও রেল অবরোধ থেকে শুরু দোকানপাট বন্ধ করানোর চেষ্টা করে গিয়েছেন। বিভিন্ন জেলায় জি টি রোড, দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে, কোনা এক্সপ্রেসওয়ে, ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক বা নানা রাজ্য সড়কে অবরোধ করা হয়। সকাল ৭টা থেকে থেকে পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব রেলের অনেক জায়গায় অবরোধ হয়।
শিয়ালদহে ২৯টি এবং হাওড়ায় আটটি লোকাল ট্রেন বাতিল হয়। বন্ধ সমর্থকেরা শিয়ালদহ-ডায়মন্ড হারবার শাখার হোটর ও বারুইপুর স্টেশনের মাঝে ওভারহেড তারে কলাপাতা ফেলায় ট্রেন চলাচল বিঘ্নিত হয় প্রায় দু’ঘণ্টা। সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ যাদবপুর স্টেশনে অবরোধের জেরে শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখায় রেল চলাচল থমকে যায়। অবরোধ হয় শিয়ালদহ উত্তর শাখার হাবড়া, অশোকনগর, মধ্যমগ্রাম, দমদম ক্যান্টনমেন্ট ও হাওড়া শাখার রিষড়াতেও। রেল চলাচল স্বাভাবিক হতে দুপুর গড়িয়ে যায়। তবে যাত্রী সংখ্যা ছিল কম।
কলকাতা-সহ গোটা দক্ষিণবঙ্গে বড় অশান্তির ঘটনা তেমন নেই। কলেজ স্ট্রিট, মৌলালি, হাজরা, যাদবপুর, যশোহর রোডের কিছু জায়গায় পথ অবরোধ, টায়ার জ্বালানো, দোকান বন্ধ করানোর ঘটনা ঘটে। বিধাননগর, নিউটাউন ও ৫ নম্বর সেক্টরে শিল্পতালুকে রাস্তায় লোকজন ও গাড়ি কম ছিল।
উত্তরবঙ্গে কয়েক জায়গায় গোলমালে জড়িয়ে পড়ে বিজেপি। শিলিগুড়িতে সকাল থেকেই রাস্তা ছিল প্রায় শুনশান। শহরের মেয়র তথা সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্য ফাঁকা হিলকার্ট রোডে ক্রিকেট খেলতে নেমে পড়েন৷ তিনি চলে যাওয়ার তাঁর মিনিট দশেকের মধ্যে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে বচসা বাধে। প্রথমে এয়ারভিউ মোড়, পরে হাসমিচকে দু’পক্ষের সমর্থকেরা অপর পক্ষের পোস্টার-ব্যানারে আগুন ধরিয়ে দেন। মালদহে কংগ্রেসের মিছিল নিয়েও বিজেপির সঙ্গে বচসা হয়। কোচবিহার জেলা পরিষদে বিজেপি সমর্থকেরা ভাঙচুর চালান বলে অভিযোগ। দিনহাটায় আবার বিজেপির দফতরে ভাঙচুরের অভিযোগ রয়েছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে।
কৃষকদের ডাকা বন্ধের দিনেও ‘শস্যগোলা’ পূর্ব বর্ধমানে মাঠে চাষ করতে নেমেছেন বহু চাষি। তাঁদের অনেকেরই বক্তব্য, এই বন্ধের প্রতি সমর্থন থাকলেও ফসল নষ্টের আশঙ্কায় তাঁরা কাজে নেমেছেন। এ দিনই জেলায় দলীয় কর্মসূচিতে এসে মধ্যপ্রদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, বিজেপির নরোত্তম মিশ্র দাবি করেন, কৃষি আইনে চাষিরা লাভবান হবেন। তাই সাধারণ চাষিরা আইন সমর্থন করছেন।
জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ারে অধিকাংশ চা বাগান খোলা ছিল। হাওড়ার ১৩টি চটকলের মধ্যে ১০টি পুরোপুরি, বাকি তিনটি আংশিক বন্ধ ছিল। নদিয়া, মুর্শিদাবাদ ও বীরভূমে বেশির জায়গাতেই মিশ্র প্রভাব পড়ে। মেদিনীপুর শহরে প্রভাব না থাকলেও ঘাটাল, বেলদা, দাঁতন, গড়বেতা বা হুগলির আরামবাগে ভাল রকম বন্ধ হয়েছে। বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ার জঙ্গলমহলেও যথেষ্ট প্রভাব পড়েছে।