কাগজের ব্যাগ গছিয়ে গয়না হাতিয়ে চম্পট

কথায় বলে, বিশ্বাসে মিলায় বস্তু। মিনতি ঘোষ টের পেলেন, বিশ্বাসে বস্তু তো মেলায়ই। সঙ্গে মিলিয়ে যায় বিশ্বাস করেছেন যাকে, সে-ও!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কাটোয়া শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:৪৯
Share:

কথায় বলে, বিশ্বাসে মিলায় বস্তু। মিনতি ঘোষ টের পেলেন, বিশ্বাসে বস্তু তো মেলায়ই। সঙ্গে মিলিয়ে যায় বিশ্বাস করেছেন যাকে, সে-ও!

Advertisement

হাতের সোনা বাঁধানো শাঁখা-পলা আর কানের দুল জোড়া খুইয়ে ওই বৃদ্ধা এখন অল্প পরিচিতকে বিশ্বাস করার খেসারত কতটা, তা বুঝতে পারছেন। অন্তঃসত্ত্বা নাতনিকে নিয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে কাটোয়া হাসপাতালে এসেছিলেন নদিয়ার কালীগঞ্জের গোবরার বাসিন্দা মিনতিদেবী। সারা সন্ধ্যা এবং শুক্রবার সকালেও তাঁকে গল্প করতে দেখা যায় সদ্য আলাপ হওয়া এক যুবকের সঙ্গে। দিনের শেষে ওই যুবকই বৃদ্ধার হাতে নিজের কাগজ ভরা ব্যাগ ধরিয়ে তাঁর গয়নাগাঁটি হাতিয়ে পালায় বলে অভিযোগ। কাটোয়া থানায় অজ্ঞাতপরিচয়ের নামে অভিযোগ করেছেন ওই বৃদ্ধা।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতে মিনতিদেবীক নাতনি পাপিয়া একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। সারা রাত হাসপাতালেই ছিলেন মিনতিদেবী। তাঁর দাবি, দু-এক জন রোগীর আত্মীয়দের সঙ্গে টুকটাক কথা বলছিলেন। তখনই আলাপ হয় ছিপছিপে ওই যুবকের সঙ্গে। এ কথা-সে কথায় ছেলেটি জানায়, তারও এক আত্মীয় ভর্তি রয়েছে হাসপাতালে। অস্ত্রোপচারের জন্য টাকাপয়সা নিয়ে এসেছে সে। কিছুক্ষণ কথাবার্তার পরে অবশ্য চলে যায় যুবকটি।

Advertisement

মিনতিদেবী জানান, এ দিন সকালে নাতনি মোটামুটি ভাল আছে দেখে জরুরি বিভাগের সামনে একটি দোকানের বেঞ্চে গিয়ে একটু বসেছিলেন তিনি। একটু পরেই সেখানে হাজির হয় সেই যুবক। সে জানায়, তাদের রোগীকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করে দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু, সঙ্গে আনা প্রায় ৫০ হাজার টাকা নিয়ে যেতে ভরসা পাচ্ছেন না তাঁরা।

বৃদ্ধার দাবি, ‘‘ছেলেটাকে দেখে মনে হচ্ছিল, চিন্তায় আছে। ও বলে, হাসপাতাল থেকে বেরোলেই কয়েক জন টাকার জন্য ওর পিছু নিচ্ছে।’’ বৃদ্ধার সামনেই দু-এক বার কিছুটা এগিয়ে আবার ফিরে আসে ছেলেটি। বলে, ‘মাসিমা, আপনার গায়েও তো গয়নাগাঁটি আছে। ওগুলো বরং খুলে রাখুন।’ সধবা হয়ে হাতের শাঁখা-পলা বাঁধানো খুলতে ইতস্তত করেন মিনতিদেবী। ওই যুবক তখন তাঁকে নিয়ে নার্স কোয়ার্টারের কাছে একটি গাছের নীচে গিয়ে বসে। বৃদ্ধাকে নিজের ‘টাকা ভরা’ কালো ব্যাগ ধরতে দিয়ে তালা কিনতে যায় ওই যুবক। ফিরে এসে ব্যাগে তালা দিয়ে আবারও গয়না খোলার কথা বলে। মিনতেদেবী বলেন, ‘‘ওর কথা শুনে, দুল আর হাতে যা ছিল খুলে ফেলি। ছেলেটাই ছোট একটা ব্যাগে মুড়ে পকেটে ভরে নেয়। বলে এখন বসুন, যাওয়ার আগে দিয়ে দেব।’’

বৃদ্ধার দাবি, ক্লান্ত শরীরে গাছতলায় চোখ লেগে গিয়েছিল তাঁর। ‘‘ঘুম ভাঙতে দেখি, ছেলেটা নেই। তবে ওর ব্যাগটা আছে। কিন্তু অনেক অপেক্ষা করেও আর দেখা পেলাম না।’’—বললেন মিনতিদেবী। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, গাছতলায় ওই যুবকের ব্যাগ আঁকড়ে ধরে থ মেরে বসেছিলেন বৃদ্ধা। চেনের ফাঁক দিয়ে একশো টাকার নোট দেখা যাচ্ছিল। কিন্তু, তালা ভেঙে দেখা যায়, ওই একটাই নোট, বাকি কাগজ। পাশের গাড়ি স্ট্যান্ডের অন্য চালকেরা জানান, একটি সবুজ গাড়িতে চড়ে ওই যুবককে চলে যেতে দেখেছেন।

এই ঘটনায় উদ্বিগ্ন রোগীর আত্মীয়েরা। বোনের চিকিৎসা করাতে আসা বিল্লেশ্বরের বাসিন্দা প্রবীর মাঝির কথায়, ‘‘টাকা বা গয়না থাকলেই বিপদ দেখছি। কিন্তু চিকিৎসার জন্য টাকা তো আনতেই হয়।’’ বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করেননি হাসপাতালের সুপার রতন শাসমল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement