প্রতীকী ছবি।
ভিন্ রাজ্যে আটকে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকদের ফেরানোর বিষয়ে কেন্দ্র-রাজ্য সঙ্ঘাত জারিই রইল। শনিবার সকালে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখে শ্রমিকদের ঘরে ফেরা প্রসঙ্গে একাধিক অভিযোগ তুলেছিলেন। অমিতের অভিযোগ মিথ্যা, পাল্টা দাবি করে তৃণমূলও। সারা দিন যখন এই বিতর্ক জারি রইল তখন ‘শ্রমিক স্পেশাল’ নিয়ে এ দিন রাতে রেল মন্ত্রক একটি টুইট করে। সেখানে দাবি করা হয়, অমিতের চিঠির পরেই শ্রমিকদের ঘরে ফেরাতে তত্পর হয়েছে রাজ্য। রেলমন্ত্রকের এই দাবিকে বেঠিক এবং বিভ্রান্তিকর বলে রাজ্যের তরফে পাল্টা টুইট করেন স্বরাষ্ট্রসচিব। আক্রমণাত্মক সেই টুইট দেখে ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক আসলে সঙ্ঘাতের পথেই হাঁটছে।
শনিবার সকালেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়ে বিতর্ক উস্কে দেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি অভিযোগ করেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা এ রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে পশ্চিমবঙ্গ অসহযোগিতা করছে। তাঁর চিঠির স্পষ্ট ইঙ্গিত ছিল, কেন্দ্র বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি ফেরানোর ব্যবস্থা করতে চাইলেও রাজ্যের উদ্যোগে ঘাটতি আছে। কার্যত রাজ্যের সদিচ্ছা নিয়েই প্রশ্ন তোলেন শাহ। যদিও সেই বক্তব্য খণ্ডন করে এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে সরাসরি কোনও আক্রমণের পথে না গিয়েই এ দিন বিকেলে বিবৃতি দেয় রাজ্য। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে রাজ্যও কী কী ব্যবস্থা নিয়েছে সাংবাদিকদের পরিসংখ্যান দিয়ে জানানো হয়। শুধু তাই নয়, রাজ্যের শ্রমিকদের ঘরে ফেরাতে সরকার যে কতটা দৃঢ় সঙ্কল্প এবং উদগ্রীব সে বিষয়টিও জানানো হয় সে বিষয়েও। যদিও কেন্দ্রের অভিযোগ নিয়ে একটি কথাও বলা হয়নি।
কিন্তু পরিস্থিতির পরিবর্তন হয় এ দিন রাত ৯টা নাগাদ রেল মন্ত্রকের তিনটি টুইট প্রকাশ্যে আসার পরেই। রেল মন্ত্রকের ওই টুইটে দাবি করা হয়েছে, বিভিন্ন রাজ্যের শ্রমিকদের বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রায় ৩০০ ‘শ্রমিক স্পেশাল’ ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে তারা। ওই টুইটগুলোতে বিশেষ ভাবে উল্লেখ করা হয় পশ্চিমবঙ্গের কথা। সেখানে দাবি করা হয়, এর্নাকুলাম এবং অজমের শরিফ থেকে শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে রাজ্যের কাছ থেকে দুটি আবেদন পেয়েছিল রেল মন্ত্রক।
আরও পড়ুন: শ্রমিক ফেরাতে ‘অসহযোগিতা’! মমতাকে অমিতের চিঠি ঘিরে তরজা
আরও পড়ুন: আটকে থাকা শ্রমিকদের ফেরানো এবং পাঠানোয় কী ব্যবস্থা নিয়েছে রাজ্য, জানালেন স্বরাষ্ট্রসচিব
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে শনিবার সকালেই চিঠি পাঠানোর পর নবান্নের তরফে কয়েকটি ট্রেনের ব্যবস্থা করার আবেদন জানানো হয়েছে। পঞ্জাব এবং তামিলনাড়ু থেকে ২টি, কর্নাটক থেকে ৩টি এবং তেলঙ্গানা থেকে ১টি ট্রেনের আবেদন জমা পড়েছে রেলমন্ত্রকের কাছে। রেল মন্ত্রকের দাবি, এই ট্রেনগুলোর ব্যবস্থাপনা করা হয়ে গিয়েছে। এ প্রসঙ্গে তৃতীয় টুইটে রেলমন্ত্রক দাবি করেছে, মহারাষ্ট্রে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে এখনও কোনও আবেদন করেনি পশ্চিমবঙ্গ। রেলের দাবি, তাদের তরফে পাঠানো আরও ৬টি ট্রেনের প্রস্তাব এখনও নবান্নে পড়ে রয়েছে। রাজ্যের তরফে এখনও কোনও সবুজ সঙ্কেত আসেনি।
রেল মন্ত্রকের এই টুইটের পরেই রাত ১১টা নাগাদ পাল্টা টুইট করেন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই টুইটে জানানো হয়, রেল মন্ত্রকের বক্তব্য বিভ্রান্তিকর এবং বেঠিক। তার পরের লাইনেই উল্লেখ করা হয়েছে পঞ্জাব, তামিলনাড়ু, কর্নাটক ও তেলঙ্গানার যে ট্রেনগুলোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে রেল মন্ত্রকের টুইটে তার প্রস্তাব গত কালই (৮ মে) অনুমোদন করেছিল রাজ্য। এবং সেই অনুসারে সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলোর সঙ্গে প্রয়োজনীয় যোগাযোগও করা হয়েছে। অর্থাত্ রাজ্যের ইঙ্গিত খুব স্পষ্ট যে, অমিত শাহের চিঠি পেয়ে পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে রাজ্য নড়েচড়ে বসেছে, কেন্দ্রের এই প্রচার সম্পূর্ণ বেঠিক। রাজ্য স্বতঃপ্রণোদিত হয়েই ভিন্রাজ্যে আটকে পড়া শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সচেষ্ট। শুধু তাই নয়, এর জন্য রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনা আগেই করা হয়ে গিয়েছে। রাজ্যের তরফে এটাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন শনিবার (৯ মে) নতুন করে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
কেন্দ্রের আন্তঃমন্ত্রক দল, রাজ্যপালের সঙ্গে পত্রযুদ্ধ— তালিকায় এ বার যোগ হল পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়েও কেন্দ্র-রাজ্য বিতর্ক। এ দিন রাতের রাজ্যের তরফে করা টুইট দেখে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা, সঙ্ঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হবে জেনেও রাজ্যের তরফে এই আক্রমণাত্মক টুইট যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)