(বাঁ দিকে) সুখেন্দুশেখর রায়, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। —ফাইল ছবি।
শাসকদল তৃণমূলের দলীয় মুখপত্র ‘জাগো বাংলা’র সম্পাদক হলেন মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। মঙ্গলবারই তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে তাঁকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দুপুরে একটি বিশ্বকর্মা পুজোর অনুষ্ঠানে ব্যস্ত ছিলেন তিনি। সেখানেই দলের তরফে তাঁকে ফোন করে মুখপত্রের সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়ার কথা জানানো হয়। তৃণমূল সূত্রে খবর, মঙ্গলবার থেকেই সম্পাদকের নাম পরিবর্তন করা হচ্ছে। সে কথা শোভনদেবকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। দায়িত্ব পেলেও, নিজের কর্মসূচির কারণে মঙ্গলবার ‘জাগো বাংলা’র দফতরের তাঁর যাওয়া হবে না তা-ও দলকে জানিয়েছেন। বুধবার তিনি দফতরে গিয়ে সম্পাদকের দায়িত্ব বুঝে নেবেন। নিজের দায়িত্ব পাওয়ার কথা স্বীকার করে শোভনদেব বলেন, ‘‘দল আমাকে যখন যে দায়িত্ব দিয়েছে, তা পালন করার চেষ্টা করেছি। এ বার দলীয় মুখপত্রের দায়িত্ব দিয়েছে, সেই দায়িত্ব নিজের সাধ্যমতো পালন করার চেষ্টা করব।’’
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ২২ জুলাই মাসে ইডির হাতে গ্রেফতার হন তৃণমূলের তৎকালীন মহাসচিব তথা রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর জেলযাত্রার পর তৃণমূল মুখপত্রের সম্পাদক করা হয়েছিল তৎকালীন তৃণমূলের রাজ্যসভার মুখ্যসচেতক সুখেন্দুশেখরকে। সম্প্রতি আরজি কর হাসপাতালের ঘটনায় তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে মতান্তর তৈরি হয় তাঁর। সূত্রের খবর, সেই বিবাদের জেরেই সোমবার দলের মুখপত্রের সম্পাদক পদ থেকে ইস্তফা দেন তিনি। জুন মাসে লোকসভা ভোটের পরেই তাঁকে রাজ্যসভার সংসদীয় দলের মুখ্যসচেতক পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। বাংলার রাজনীতির কারবারিদের মতে, সেই ঘটনার পর থেকেই তৃণমূলের সঙ্গে সম্পর্কে ফাটল তৈরি হয়েছিল তাঁর। আরজি কর হাসপাতালের ঘটনার পর দলীয় অবস্থানের সমালোচনা করলে সেই ফাটল আরও চওড়া হয়।
মঙ্গলবার সকালে ইস্তফার খবর নিশ্চিত করেছেন সাংসদ নিজেই। তিনি জানান, সোমবার সন্ধ্যাতেই তিনি পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন। যদিও সোমবার সকালে প্রকাশিত দলীয় মুখপত্রে সম্পাদক হিসাবে নাম ছিল তাঁরই। আর বিকেলেই শোভনদেবকে পরবর্তী সম্পাদক হিসেবে বেছে নিয়ে তাঁর ইস্তফাপত্র গ্রহণ করার ইঙ্গিত দিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। প্রসঙ্গত, শোভনদেব তৃণমূলের প্রতীকে জয়ী প্রথম বিধায়ক। ১৯৯৮ সালে বারুইপুর বিধানসভার কংগ্রেসের বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে রাসবিহারী থেকে উপনির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থী হয়ে জয়লাভ করেছিলেন। আবার পার্থ ইডির হাতে গ্রেফতার হলে, পরিষদীয় মন্ত্রীর দায়িত্ব তাঁকেই দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই এই সিদ্ধান্তের পর বাংলার রাজনৈতিক মহলে আলোচনা এই যে, এ ক্ষেত্রেও আবার তৃণমূল নেত্রী ভরসা করলেন তাঁর পুরনো সৈনিকের ওপরেই। প্রসঙ্গত, ২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতাবদল হলে কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে এনে সুখেন্দুশেখরকে রাজ্যসভার সাংসদ করেছিলেন মমতা। কিন্তু বর্তমানে আরজি কর-কাণ্ডে সরকারের সমালোচনা করে শাসকদলের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করেছিলেন তিনি।