প্লাবিত পুরুলিয়া থেকে ফিরে মন্ত্রী মাতলেন জলসায়

রাজ্যের লক্ষ লক্ষ মানুষ বন্যায় দিশাহারা। খোদ মুখ্যমন্ত্রী বিলেত-সফর কাটছাঁট করে ফিরে এসে প্লাবন-পরিস্থিতির উপরে নজর রাখতে রাত জাগছেন নবান্নে। তার মধ্যে কৃতী ছাত্রছাত্রীদের বই বিলির অনুষ্ঠানে জলসার ব্যবস্থা করে বিতর্কে জড়িয়ে পড়লেন রাজারহাট-গোপালপুর এলাকার বিধায়ক তথা রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৫ ০৩:৩২
Share:

বন্যার মধ্যেই বিচিত্রানুষ্ঠান। শিল্পী জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে রয়েছেন দোলা সেন এবং পূর্ণেন্দু বসু। সোমবার স্বাতী চক্রবর্তীর তোলা ছবি।

রাজ্যের লক্ষ লক্ষ মানুষ বন্যায় দিশাহারা। খোদ মুখ্যমন্ত্রী বিলেত-সফর কাটছাঁট করে ফিরে এসে প্লাবন-পরিস্থিতির উপরে নজর রাখতে রাত জাগছেন নবান্নে। তার মধ্যে কৃতী ছাত্রছাত্রীদের বই বিলির অনুষ্ঠানে জলসার ব্যবস্থা করে বিতর্কে জড়িয়ে পড়লেন রাজারহাট-গোপালপুর এলাকার বিধায়ক তথা রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু।

Advertisement

বন্যা-পরিস্থিতি ঘিরে সারা বাংলা যখন উদ্বিগ্ন, সেই সময়েই এক জন মন্ত্রীর এ-হেন সুরের অনুষ্ঠান যে ভয়ানক আসলে বেসুরো ঠেকছে, রাজনৈতিক শিবির সেই বিষয়ে একমত। প্রশ্ন উঠছে: বন্যা ভয়াল হয়ে ওঠায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্ধারিত সময়ের আগেই লন্ডন থেকে ফিরে আসছেন। অন্য সমস্ত কর্মসূচি বাতিল করে বন্যাদুর্গতদের জন্য দুর্ভাবনায় রাত জাগছেন। তাঁর নির্দেশে কয়েক জন মন্ত্রীও বিভিন্ন জেলায় গিয়ে ত্রাণকাজের তদারক করছেন। পূর্ণেন্দুবাবুকেও পুরুলিয়ায় বন্যা-পরিস্থিতির উপরে নজর রাখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অথচ তিনিই এমন অনুষ্ঠান করছেন কী ভাবে?

কৃষিমন্ত্রীর জবাব, তিনি পুরুলিয়ায় গিয়েছিলেন। এ দিনের অনুষ্ঠানের জন্যই ফিরে এসেছেন। মঙ্গলবার ফের তাঁর ওই জেলায় যাওয়ার কথা।

Advertisement

কিন্তু তাঁর অনুষ্ঠানটা কী?

সোমবার দমদমের শূরের মাঠ এলাকায় রবীন্দ্র ভবনে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের কৃতীদের বই দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন কৃষিমন্ত্রী। অনুষ্ঠান বই বিতরণে সীমিত থাকলে হয়তো প্রশ্ন উঠত না। কিন্তু সেই সঙ্গে মনোর়ঞ্জনের জন্য মন্ত্রী আয়োজন করেছিলেন জমাটি বিচিত্রানুষ্ঠানেরও। যদিও তা নিয়ে মোটেই কুণ্ঠিত নন পূর্ণেন্দুবাবু। উল্টে ওই অনুষ্ঠানের পক্ষে তাঁর যুক্তি, ‘‘বন্যাই শুধু জীবন নয়। গানও হল আর একটা জীবন।’’

কিন্তু তাঁর দলের নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী তো বন্যাকবলিত মানুষের কথা ভেবেই সব কর্মসূচি বাতিল করেছেন? কৃষিমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘রাজ্যে বন্যা-পরিস্থিতি অতটা ভয়াবহ নয় যে, অনুষ্ঠান বাতিল করতে হবে। রাজ্য সরকার পুরো পরিস্থিতির উপরে নজর রাখছে। পরিস্থিতিও এখন নিয়ন্ত্রণে।’’ শুধু পূর্ণেন্দুবাবু নন। রাজ্যসভার তৃণমূল সদস্য দোলা সেন একই সুরে বলেন, ‘‘জাতীয় শোকের জন্য পরপর তিন দিন অনুষ্ঠান বাতিল হয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বারবার তো বাতিল করা যায় না।’’

বন্যা-পরিস্থিতি ভয়াবহ নয় বলে দাবি করলেও অনুষ্ঠান শুরুর আগে মঞ্চে উঠে ছাত্রছাত্রীদের কাছে পূর্ণেন্দুবাবুর আবেদন ছিল, ‘‘এখন বন্যা-পরিস্থিতি চলছে। তার জেরে যারা লেখাপড়া করতে পারছে না, তোমরা যে-কোনও ভাবে তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করো।’’ এ দিনের অনুষ্ঠানে দু’হাজার ছাত্রছাত্রীর হাতে বই তুলে দেওয়া হয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement