রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে রাজভবনে বৈঠকে পার্থ চট্টোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র।
বিধানসভার বাজেট অধিবেশনের আগে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে দেখা করে এলেন পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। অধিবেশন শুরু হওয়ার কথা রাজ্যপালের প্রারম্ভিক ভাষণ দিয়ে। তার আগে রাজ্যপাল নিয়মিতই যে ভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে রাজ্য সরকারের উপরে চাপ সৃষ্টি করে চলেছেন, তার প্রেক্ষিতে পরিষদীয় মন্ত্রীর এই সাক্ষাৎকে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।
পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থবাবু অবশ্য এই সাক্ষাৎকে মূলত ‘সৌজন্যমূলক’ বলে বর্ণনা করেছেন। রাজ্যপালের সাম্প্রতিক ভূমিকা নিয়েও মন্তব্য করতে চাননি তিনি। রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে ঠিক হয়েছিল, বিধানসভার বাজেট অধিবেশন শুরু হবে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি। অর্থমন্ত্রী রাজ্য বাজেট পেশ করবেন ১০ তারিখ। সূত্রের খবর, অধিবেশন তলব করার চিঠিতে রাজ্যপাল এখনও সই করেননি। সেই বিষয়েই ধনখড়কে অনুরোধ করেছেন পার্থবাবু। রাজ্যপালের সম্মতি পেলে বিধানসভার সচিবালয় মারফত আনুষ্ঠানিক ভাবে অধিবেশন সূচনার বিজ্ঞপ্তি জারি হবে।
রাজভবন থেকে বেরিয়ে রবিবার রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে তৃণমূলের সিএএ-বিরোধী ধর্না-স্থলে এসেছিলেন পার্থবাবু। সেখানেই তিনি বলেন, ‘‘এটা সৌজন্য সাক্ষাৎ। আগে তো রোজই দেখা করতে যেতাম। এখন সময়াভাবে যাওয়া হয়ে ওঠে না।’’ কথা হল কী নিয়ে? পার্থবাবুর জবাব, ‘‘পরিষদীয় মন্ত্রী হিসেবে আমার কিছু দায়িত্ব আছে। বিধানসভার অধিবেশন তলবের বিষয়টি নিয়ে কথা হয়েছে।’’ রাজ্য সরকারের তৈরি করে দেওয়া ভাষণ বিধানসভায় রাজ্যপালের পাঠ করা নিয়ে সদ্যই জটিলতা তৈরি হয়েছিল কেরলে। তবে ভাষণের খসড়া নিয়ে রাজ্যপাল ধনখড়ের সঙ্গে আলোচনা হয়নি বলে দাবি করে পার্থবাবুর বক্তব্য, ‘‘এখনও তো অধিবেশন ডাকাই হয়নি! ভাষণ নিয়ে তার আগেই কী কথা হবে!’’ রানি রাসমণি থেকে কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে গিয়েছিলেন পার্থবাবু।
রাজ্যপাল যে প্রতিনিয়ত রাজ্য সরকারের সমালোচনা করছেন, আইনশৃঙ্খলা নিয়ে বিবৃতি দিচ্ছেন, সেই প্রসঙ্গেও এ দিন পরিষদীয় মন্ত্রীর জবাব, ‘‘রাজ্যপালকে নিয়ে কিছু বলি না, এখনও বলতে চাই না। যিনি বিবৃতি দিচ্ছেন, এটা তো তাঁর ব্যাপার। আমরা চাই, বিধানসভার গরিমা যেন অক্ষুণ্ণ থাকে, যেন সেটা কলুষিত না হয়।’’ ঘটনাচক্রে, এ দিনই কলকাতা বইমেলায় একটি অনুষ্ঠানের অবসরে মেঘালয়ের রাজ্যপাল তথাগত রায় মন্তব্য করেছেন, বাংলায় রাজ্য সরকার রাজ্যপালের সঙ্গে ‘ইতরামি’ করছে! এই প্রসঙ্গে পার্থবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘কুকথার প্রতিযোগিতায় উনিও নামলেন! দেশের সংস্কৃতিটাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন ওঁরা!’’
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়ে ফিরে আসতে হয়েছিল রাজ্যপালকে। তার পরে ওই ঘটনা নিয়ে প্রকাশ্যে তো বটেই, রাজভবনে দেখা করতে যাওয়া বঙ্গ বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়ের কাছেও ‘উষ্মা’ প্রকাশ করেছিলেন রাজ্যপাল। সেই বিষয়ে কথা হয়েছে কি না, প্রশ্ন করা হলে পার্থবাবু বলেন, ‘‘ওটা অনেক পুরনো ব্যাপার!’’ সমাবর্তনে অবশ্য শিক্ষামন্ত্রী পার্থবাবুও যাননি।