আসাদউদ্দিন ওয়াইসি। ফাইল চিত্র।
বাংলায় সক্রিয়তা বাড়াতে চাইছে আসাদউদ্দিন ওয়াইসির মজলিস-ই ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (এমআইএম)। ওয়াইসির এই ঘোষণার জেরে বাংলায় মুসলিম ভোটের অঙ্ক নিয়ে নতুন চর্চা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক শিবিরে। প্রশ্ন উঠেছে, এ রাজ্যে সংখ্যালঘু ভোটে এমআইএম থাবা বসালে আখেরে লাভ কার? কিছু রাজ্যে এমআইএম-এর কৌশলে বিজেপিরই ফায়দা হয়েছে এখানেও এই সক্রিয়তার পিছনে গেরুয়া শিবিরের চাল দেখতে পাচ্ছে রাজনৈতিক শিবির।
বিহারের কিষাণগঞ্জে বিধানসভা ভোটের প্রচারের সূত্রে ওয়াইসি বলেছেন, বাংলায় তাঁর দলের অস্তিত্ব রয়েছে। কী ভাবে পরিকাঠামো বাড়িয়ে সেখানে কাজ করা যায়, তা দেখা হচ্ছে। ঘটনা হল, কিছু দিন ধরেই বিহার-ঘেঁষা উত্তর দিনাজপুর এবং কলকাতার কিছু উর্দুভাষী এলাকায় এমআইএম-এর কার্যকলাপ চোখে পড়ছে। এখন সক্রিয়তা আরও বাড়িয়ে তারা রাজ্যের বিধানসভা ভোটে প্রার্থী দেয় কি না, কৌতূহল তৈরি হয়েছে সেই প্রশ্নে। এবং সেই সূত্রেই শাসক তৃণমূল থেকে বিরোধী বাম ও কংগ্রেস নেতৃত্ব মনে করছেন, এমআইএম-এর দৌলতে সংখ্যালঘু ভোট সামান্য ভাগ হলেও তাতে ঘুরপথে বিজেপির সুবিধা। কারণ, সংখ্যালঘু ভোট বিজেপির কব্জায় নেই। বরং, এমআইএম-এর মতো ‘কট্টরপন্থী’ শক্তি ময়দানে থাকলে তার প্রতিবর্ত ক্রিয়ায় তাদের হিন্দুত্বের তাস খেলতে আরও সুবিধা হবে।
ইউনির্ভাসিটি অফ লন্ডন থেকে পাশ করে আসা ওয়াইসি বিজেপি তথা হিন্দুত্ব ব্রিগেডের বিরুদ্ধে কড়া ও গরম বক্তৃতায় চোস্ত। কিন্তু ভিন্ রাজ্যের অভিজ্ঞতা থেকে বাংলার নেতারা বলছেন, ওয়াইসির ওই ধরনের কাজকর্মে উল্টো দিকে বিজেপিই সুবিধা পেয়ে এসেছে। তা ছাড়া, বাংলায় সংখ্যালঘু জনতার উপরে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের নেতা তথা তৃণমূল সরকারের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী বা ত্বহা সিদ্দিকির মতো ধর্মীয় নেতাদেরও প্রভাব আছে। সেখানে ওয়াইসির সংগঠন আলাদা করে কতটা জায়গা করতে পারবে, তা নিয়ে অনেকেই সন্দিহান। ইদানীং ত্বহার পরিবারে ভাঙন ধরানোর রাজনৈতিক চেষ্টা জারি থাকলেও তৃণমূল নেতৃত্বের আশা, তাঁর সমর্থন শাসক দলের দিকেই থাকবে।
শাসক তৃণমূলের নেতৃত্ব এখনই ওয়াইসিকে নিয়ে বিচলিত নন। তাঁদের মতে, বাংলাভাষী এবং গ্রামীণ যে সংখ্যালঘু সমাজ গত লোকসভা ভোটেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সমর্থন করেছে, সেই অংশের উপরে ওয়াইসির প্রভাব নেই বললেই চলে। উর্দুভাষীরা এখানে সংখ্যালঘু ভোটের নিয়ন্ত্রক নন। তা ছাড়া, উত্তর ভারতে সংখ্যালঘু জনমত যে ভাবে ভোটবাক্সে যায়, এখানে একই কৌশলে ভোট হয় না। তৃণমূল নেতা ও রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের কথায়, ‘‘আরও অনেকের মতো সংখ্যালঘু মানুষও বিজেপিকে হারাতে চান। তাঁরা জানেন, বাংলায় বিজেপিকে হারানোর শক্তি রাখেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে অন্য কে কী বলল, তাতে তাঁরা প্রভাবিত হবেন না।’’
বাম ও কংগ্রেস নেতাদের আবার দাবি, প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতার হাওয়া সংখ্যালঘুদের মধ্যেও আছে। তৃণমূলের প্রতি ‘মোহভঙ্গ’ হওয়া সংখ্যালঘু ভোট যাতে বাম ও কংগ্রেস জোটের দিকে না আসে, তার জন্যই এমআইএম-কে এগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানের বক্তব্য, ‘‘অতীতে বিহারে লোকসভা বা মহারাষ্ট্র, তেলঙ্গানা, অন্ধ্রের মতো রাজ্যে বিধানসভায় এমআইএম প্রার্থী দেওয়ায় বিজেপি বা তার সহযোগীদের সুবিধা হয়েছে। সংখ্যালঘু-প্রধান কেন্দ্রে এমন প্রার্থী থাকলে সেখানে বিজেপিরই লাভ। অতি বিপ্লবী মুসলিম সেজে বাংলাতেও ওরা তৃণমূল এবং বাম-কংগ্রেসের যাত্রাভঙ্গ করে বিজেপির হাত শক্ত করতে চাইছে!’’ একই যুক্তি দিয়ে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘পর্দার আড়ালে এগুলো বিজেপিরই খেলা। ভোট ছাড়াও এমআইএমের মতো শক্তি যত কট্টরপন্থী সুর চড়াবে, বিজেপি-আরএসএসের তত হিন্দুত্ব করতে সুবিধা হবে! তবে বাংলার মানুষ সচেতন। তাঁরা সুচিন্তিত ভাবেই সিদ্ধান্ত নেবেন।’’