ভাগীরথীর সঙ্কটের পিছনে রাজনীতির অভিযোগ তুলে সরব কংগ্রেস

রাস্তায় দুধ ফেলে প্রতিবাদে গোয়ালারা

দুধ কেনা নিয়ে রাজনীতির অভিযোগ তুলে গোয়ালাদের বিক্ষোভে উত্তাল হল বহরমপুর। মঙ্গলবার ভাগীরথী দুগ্ধ সমবায় সমিতির সামনে প্রায় তিনশো লিটার দুধ ফেলে বিক্ষোভ দেখান গোয়ালারা। জেলা কংগ্রেসের ডাকে সংগঠিত ওই কর্মসূচিতে গোয়ালারা অভিযোগ করেন, দুধ বিক্রি না হওয়ায় তাঁদের অনেকেরই সংসার সামলানো দায় হয়ে উঠেছে! জেলা প্রশাসন বা রাজ্য মিল্ক ফেডারেশনকে বিষয়টি বারবার জানানোর পরেও সুরুহা হয়নি।

Advertisement

সুজাউদ্দিন

বহরমপুর শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৫ ০১:০১
Share:

প্রতিবাদে মঙ্গলবার সমিতির গেটের সামনের রাস্তায় প্রায় তিনশো লিটার দুধ ফেলে বিক্ষোভ দেখান গোয়ালারা। — নিজস্ব চিত্র

দুধ কেনা নিয়ে রাজনীতির অভিযোগ তুলে গোয়ালাদের বিক্ষোভে উত্তাল হল বহরমপুর। মঙ্গলবার ভাগীরথী দুগ্ধ সমবায় সমিতির সামনে প্রায় তিনশো লিটার দুধ ফেলে বিক্ষোভ দেখান গোয়ালারা। জেলা কংগ্রেসের ডাকে সংগঠিত ওই কর্মসূচিতে গোয়ালারা অভিযোগ করেন, দুধ বিক্রি না হওয়ায় তাঁদের অনেকেরই সংসার সামলানো দায় হয়ে উঠেছে! জেলা প্রশাসন বা রাজ্য মিল্ক ফেডারেশনকে বিষয়টি বারবার জানানোর পরেও সুরুহা হয়নি।
সেই সূত্রেই এসেছে দুধ নিয়ে রাজনীতির অভিযোগ। চলতি মাসের প্রথম দিন থেকেই ভাগীরথী দিনে দু’বেলার পরিবর্তে একবার মাত্র দুধ কিনতে শুরু করেছে। সমিতির দাবি, রাজ্য মিল্ক ফেডারেশন এক ধাক্কায় অনেকটা দুধ কেনা কমিয়ে দেওয়ায় বাধ্য হয়ে এই সিদ্ধান্ত। রাজ্য মিল্ক ফেডারেশনের কর্তার আবার জানাচ্ছেন, যখন দুধের ভাল যোগান থাকে (ফ্লাস সিজন) তখন ভাগীরথী চল্লিশ হাজার লিটার দুধ এনে হাজির করে। সঙ্কটের সময়ে মাত্র একশো, দু’শো লিটার দুধ দেয়। অনিয়মিত যোগানের জন্যই দুধ কেনা কমানো হয়েছে। মুর্শিদাবাদ দুগ্ধ উৎপাদক সঙ্ঘের যুগ্ম সম্পাদক পীযূষ ঘোষ মিল্ক ফেডারেশনের যুক্তি উড়িয়ে রাজনীতির তত্ত্ব এনেছেন। তাঁর সরাসরি অভিযোগ, ‘‘আসলে রাজ্য সরকার চাইছে না ভাগীরথী ভাল ভাবে চলুক। কেননা, এখানকার কর্মী থেকে গোয়ালা— সকলেই কংগ্রেস করেন। শুধুমাত্র সেই কারণেই অনিয়মিত যোগানের অজুহাত দিয়ে রাজ্যের শাসকদলের নিয়ন্ত্রণে থাকা মিল্ক ফেডারেশন দুধ কেনা কমিয়েছে।’’

Advertisement

ভাগীরথী দুগ্ধ সমবায় সমিতি সূত্রে খবর, ফি-বছর রাজ্য মিল্ক ফেডারেশনকে কতটা দুধ দেওয়া হবে সেই চুক্তি আগেভাগেই সেরে রাখা হয়। বছরে দু’বার তাদের সঙ্গে মিল্ক ফেডারেশনের চুক্তি হয়। চুক্তি মতো, ফ্লাস সিজনে ২১ হাজার লিটার দুধ এবং অন্য সময়ে তার চেয়ে কিছু কম দুধ কেনার কথা। সমিতি সূত্রে খবর, এখন ফ্লাস সিজন চললেও ২১ হাজার লিটার দুধ না কিনে মিল্ক ফেডারেশন মাত্র ১৪ হাজার লিটার দুধ কিনছে। দুগ্ধ উৎপাদক সঙ্ঘের যুগ্ম সম্পাদকের দাবি, তার ফলেই গোয়ালাদের সব দুধ কিনতে পারছে না ভাগীরথী।

জেলা প্রশাসনের হিসেব বলছে, ৬০ হাজার পরিবার ও ৪০২টি সমবায় সমিতি প্রত্যক্ষ ভাবে দুগ্ধ উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত। প্রত্যক্ষ, পরোক্ষ ভাবে ৭০ হাজার পরিবারের ভবিষ্যৎ ভাগীরথীর উপরে নির্ভরশীল। ঈদ ও পুজোর আগে জেলার এই সমিতিগুলি ভেঙে পড়লে ক্ষতির মুখে পড়বে পরিবারগুলি। ডোমকল এলাকার একটি দুগ্ধ সমবায় সমিতর কর্তা মনিরুল ইসলামের কথায়, ‘‘গোয়ালারা বালতি ভর্তি দুধ এনে হাজির হচ্ছেন সমিতিতে। উপায় না পেয়ে তাঁদের ফিরিয়ে দিচ্ছি। কিছু গোয়ালা রয়েছেন যাঁদের দুধ বেচেই সংসার চলে। তাঁদের অবস্থা খারাপ।’’ এই পেশার সঙ্গে যুক্ত অনেকেরই মত, পরিস্থিতি দ্রুত না পাল্টালে এলাকায় বড় সামাজিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ দিনের বিক্ষোভে থাকা বহরমপুরের চরহালালপুরের বাসিন্দা মোটর ঘোষ বলেন, ‘‘প্রতিদিনই তো দুধ ফেলে দিতে হচ্ছে। এ দিন রাস্তায় দুধ ফেললাম— এ টুকুই যা পার্থক্য।’’ প্রশাসনের নজর আকর্ষণের জন্যই এই কৌশল তা-ও জানাচ্ছেন বিক্ষোভে সামিল গোয়ালারা।

Advertisement

ভাগীরথী দুগ্ধ সমবায় সামনে কংগ্রেসের বিক্ষোভ কর্মসূচি। —নিজস্ব চিত্র।

রাজ্য সরকারের প্রতিহিংসা মূলক আচারণের জন্যেই ভাগীরথীর এই সঙ্কট তৈরি হয়েছে বলে তোপ দেগেছেন সাংসদ তথা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরি। তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূল নেতারা গরু পাচারে মদত দিচ্ছেন। আর সেই দলের নেত্র্রী সমবায়ের দুধ সংগ্রহ না করে সমবায়ীদের হাতে না মেরে ভাতে মারার চেষ্টা চালাচ্ছেন।’’ কংগ্রেসের নেতৃত্বে বড় আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। রাজ্য মিল্ক ফেডারেশন তৃণমূল প্রভাবিত। সংগঠনের চেয়ারম্যান পরশ দত্ত দুধ কেনায় রাজনীতির অভিযোগ মানতে চাননি। তাঁর সাফাই, ‘‘এখন আম থাকায় দুধের চাহিদা কম।
কেবল ভাগীরথী নয়— নদিয়া, মেদিনীপুরের সমিতিগুলি থেকেও কম দুধ নেওয়া হচ্ছে।’’

এই অবস্থায় আশার কথা শুনিয়েছেন ভাগীরথী দুগ্ধ সমবায় সমিতির এমডি নির্মল কর্মকার। তিনি বলেন, ‘‘কিছু দিনের মধ্যে সমাধান হবে আশা করছি। তখন আবারও দু’বেলা দুধ কেনা শুরু করব।’’ কিন্তু, কী ভাবে? সে উত্তর মেলেনি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement