কেস্ট্রেল বাজ। নিজস্ব চিত্র।
শীতের অতিথিরা এ বার এসে পড়েছে হেমন্তেই।
ওদের কারও দেশ দক্ষিণ চিন, কারও ঠিকানা লাদাখ। কেউ এসেছে ইউরোপ থেকে। প্রতিবারই শীতে হাজার হাজার মাইল উড়ে তিস্তাপাড়ে আসে এই পরিযায়ী পাখির দল। তিস্তার দু’পাড় ধরে দেখা মেলে ওদের। বিরল প্রজাতির পাখিও থাকে। এ বছর আগেভাগেই হাজির নানা ধরনের পরিযায়ী বাজপাখির দল। দক্ষিণ চিন থেকে এসেছে কেস্ট্রেল বাজ। পুরুষ কেস্ট্রেলের রং লাল, স্ত্রী কেস্ট্রেল ছাই রঙা। পাকা ধানের খেতে মেঠো ইঁদুর, পোকামাকড় শিকার করছে এই পাখি। এতে খুশি তিস্তাপাড়ের বাসিন্দারা। তিস্তাপাড়ের মানুষ এই বাজের নাম রেখেছেন পোকামারা বাজ। স্থানীয় বাসিন্দা বাবু বিশ্বাসের কথায়, ‘‘ধান পাকলেই ইঁদুর, পোকামাকড়ের ভয় থাকেই প্রতিবার। রাত জেগে পাহারা দিতে হয়। এ বার এক ধরনের বাজপাখি এসেছে বাইরে থেকে। ইঁদুর, পোকা সব খেয়ে নিচ্ছে।’’
শীত জাঁকিয়ে পড়ার আগেই তিস্তাপাড়ে দেখা মিলছে লাল মুনিয়া (রেড অ্যাভাডাভ্যাট), তিল মুনিয়ার (স্কেলি ব্রেস্টেড মুনিয়া) মতো পরিযায়ী পাখিদেরও। কালচে ছাইরঙা একটি বাজও হেমন্তের পাকা ধানের খেতে ঘুরছে। ছোট্ট চড়ুইয়ের মতো একটি বাজও এসেছে শহর লাগোয়া জুবিলি পার্কের সামনে বালির চরে। পাখিটির রং সোনালি। বাংলায় নাম সোনালি বাটান (গোল্ডেন প্লোভার)। এর আদি বাড়ি ইউরোপ। শীতের দেশ থেকে তিস্তাপাড়ে কয়েক বছর ধরেই আসছে পাখিটি। এ বছর এখনই দেখা মিলছে তার। কেন এ বার এত তাড়াতাড়ি ওরা চলে এল? পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের অনুমান, যে দেশগুলি থেকে ওরা আসছে সেখানে শীত আরও আগেই চলে এসেছে। সেই কারণেই ওরা এখানে পাড়ি দিয়েছে বলে তাঁদের ধারণা।
দোমোহনী থেকে জলপাইগুড়ি শহর পর্যন্ত তিস্তার দু’পাড়ে পরিযায়ীদের দেখা মিলছে। গজলডোবা থেকে শুরু করে জলপাইগুড়ি শহর ছাড়িয়ে সীমান্তবর্তী হলিদিবাড়ি যাওয়ার পথে পাঙা নদীর আশেপাশেও ঝাঁক বেঁধে এসেছে পরিযায়ীরা।
একটি পরিবেশপ্রেমী সংগঠনের মুখপাত্র রাজা রাউত বলেন, ‘‘এখন যে পাখিগুলি এসেছে সেগুলি মূলত বাজ। এরপরে নানা ধরনের হাঁসের দল আসবে। বছর কয়েক ধরেই তিস্তা পাড়ে আসছে এই পাখির দল। এখানকার তাপমাত্রা ওদের কাছে আরামদায়ক। তিস্তা পাড়ে খাদ্যেরও অভাব নেই। কারণ প্রচুর চাষ হয়। সেই সঙ্গে পাখিদের থাকার জন্য জলাজমি, কম ঘন ঝোপের আড়ালও আছে।’’