অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, নরেন্দ্র মোদী এবং অধীর চৌধুরী। ফাইল চিত্র।
পরিযায়ী শ্রমিকদের কাজ দেওয়ার জন্য ৫০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প। কিন্তু সে প্রকল্প থেকে পুরোপুরি বাদ পশ্চিমবঙ্গ। অতএব বিষয়টি নিয়ে বড়সড় রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়ে গিয়েছে রাজ্যে। টুইটারে সরাসরি নরেন্দ্র মোদীর দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বাংলাকে ‘তীব্র অবজ্ঞা’ করার অভিযোগ তুললেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করানোর পাশাপাশি রাজ্যের আর এক সাংসদ তথা লোকসভায় প্রধান বিরোধী পক্ষের নেতা অধীররঞ্জন চৌধুরী তোপ দাগলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেও। আর কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় বললেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকার তো ফেরাতেই চাইল না পরিযায়ীদের, তাই প্রথম তালিকায় ঠাঁই পেল না।
পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য আগামী চার মাসের কর্মসংস্থান করতে ‘গরিব কল্যাণ রোজগার অভিযান’ ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ইতিমধ্যেই বিহারে সে প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক সূচনাও ঘটিয়েছেন। ৫০ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পের আওতায় আগামী ১২৫ দিন অর্থাৎ প্রায় ৪ মাসের জন্য কাজের ব্যবস্থা করা হবে কর্মস্থল ছেড়ে ঘরে ফিরে যাওয়া পরিযায়ী শ্রমিকদের। ২৫ রকমের কাজের তালিকাও তৈরি হয়েছে। অর্থাৎ এই প্রকল্পের আওতায় ওই ২৫ রকম কাজ করানো যাবে। কেন্দ্র জানিয়েছে, যে সব জেলায় ২৫ হাজার বা তারও বেশি পরিযায়ী শ্রমিক ফিরেছেন, সেই সব জেলাকে এই প্রকল্পের আওতায় আনা হচ্ছে। ৬টি রাজ্যের ১১৬টি জেলার তালিকাও তৈরি হয়ে গিয়েছে। কিন্তু তালিকায় পশ্চিমবঙ্গ বা পশ্চিমবঙ্গের কোনও জেলার নাম নেই।
সোমবার এ নিয়ে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়েছেন বাংলার শাসক দলের সেকেন্ড-ইন-কম্যান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ তথা তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সভাপতি এ দিন টুইটারে লিখেছেন, ‘‘শ্রীনরেন্দ্র মোদীজি, বাংলার যে ১১ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক সম্প্রতি ঘরে ফিরলেন, তাঁদের সমস্যাকে এমন তীব্র ভাবে অবজ্ঞা করলেন কেন? গরিব কল্যাণ রোজগার অভিযান থেকে পশ্চিমবঙ্গকে বাদ দেওয়া হল কেন? বাংলার মানুষের প্রতি এই ঔদাসীন্য কেন?’’
আরও পড়ুন: করোনা পরিস্থিতি পর্যালোচনায় নবান্নে সর্বদল বৈঠকের ডাক
শুধু অভিষেক নন, প্রধানমন্ত্রীর দিকে প্রশ্ন ছুড়েছেন লোকসভার প্রধান বিরোধী পক্ষের নেতা তথা বহরমপুরের কংগ্রেস সাংসদ অধীররঞ্জন চৌধুরীও। তাঁর কথায়, ‘‘পরিযায়ী শ্রমিকদের রোজগারে সহায়তা করার জন্য অনেক দেরিতে হলেও ভারতের প্রধানমন্ত্রী একটা রোজগার যোজনা অভিযান চালানোর চেষ্টা করছেন এবং বিহার থেকে তার উদ্বোধনও করে দিয়েছেন। বিহারে নির্বাচন রয়েছে, তাই বিহারে বেশি আগ্রহও দেখাতে হবে। কিন্তু ভারতের ৬ রাজ্যের যে ১১৬টি জেলা এই প্রকল্পের সুবিধা পাবে, তাতে পশ্চিমবঙ্গের কোনও জেলা কেন নেই?’’ অধীর বলেন, ‘‘বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে জানিয়েছেন যে, লকডাউনের পরে ১০ লক্ষের বেশি পরিযায়ী শ্রমিক বাংলায় ফিরেছেন। আমি তাই অবাক হয়ে যাচ্ছি এটা ভেবে যে, মুখ্যমন্ত্রী যেখানে নিজে বলছেন যে ১০ লক্ষের বেশি পরিযায়ী শ্রমিক বাংলায় ফিরে এসেছেন এবং ২৫ হাজার বা তার বেশি শ্রমিক যে সব জেলায় ফিরেছেন, সেখানেই এই প্রকল্প চালু করা হবে বলে যখন স্থির করা হয়েছে, তখন পশ্চিমবঙ্গের কোনও জেলায় এই প্রকল্প চালু হচ্ছে না কেন!’’ অধীরের দাবি, ‘‘শুধু আমার মুর্শিদাবাদ জেলাতেই ২-৩ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক ফিরেছেন। পশ্চিমবঙ্গে ৮০-৯০ শতাংশ জেলাতেই ২৫ হাজারের বেশি পরিযায়ী শ্রমিক ফিরেছেন।’’
প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেও পশ্চিমবঙ্গে এই প্রকল্প চালু করার অনুরোদ অধীর জানিয়েছেন। তবে অধীরের আক্রমণ বা অনুরোধের লক্ষ্য শুধু প্রধানমন্ত্রী নন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর দিকেও আঙুল তুলেছেন দাপুটে কংগ্রেস সাংসদ। তাঁর কথায়, ‘‘বাংলার মুখ্যমন্ত্রী আপনি কী করছেন! রেশন দিতে পারছেন না! ঘর তৈরির টাকা নিয়ে দুর্নীতি হচ্ছে, লুঠ হচ্ছে! তার পরে এই যে প্রকল্প কেন্দ্রীয় সরকার আমাদের চাপে পড়ে করছে, সেই প্রকল্পের সুবিধা আপনি পশ্চিমবঙ্গে এনে দিতে পারলেন না! কী করেন আপনি!’’
পশ্চিমবঙ্গের প্রতি অবজ্ঞার অভিযোগ অবশ্য নস্যাৎ করার চেষ্টা করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। তাঁর কথায়, ‘‘সারা দেশে ৭৩৯টা জেলা রয়েছে। তার মধ্যে ১১৬টা জেলাকে এখন বাছা হয়েছে এই প্রকল্পের জন্য। যে জেলাগুলোয় সবচেয়ে বেশি সংখ্যক পরিযায়ী শ্রমিক ফিরেছেন, যে রাজ্যগুলো সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শ্রমিককে ঘরে ফিরিয়ে নিয়েছে, সেইগুলোই আগে তালিকায় জায়গা পেয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তো পরিযায়ী শ্রমিকদের ফেরাতেই চাননি। পরিযয়ীদের ফেরাতে তাঁর এত অনীহা যে, পরিযায়ীদের ট্রেনের নাম দিয়ে দিয়েছেন করোনা এক্সপ্রেস!’’ বাবুল সুপ্রিয়র দাবি, যে ৬টি রাজ্যের ১১৬টি জেলা আপাতত গরিব কল্যাণ রোজগার যোজনায় স্থান পেয়েছে,সেই রাজ্যগুলি তথা সেই জেলাগুলিতেই সবচেয়ে বেশি পরিযায়ী শ্রমিক ফিরেছেন। বাবুল বলেন, ‘‘কোন কোন রাজ্য আপাতত এই প্রকল্পের আওতায় আসছে, তা নিয়ে রাজনীতি করার অভিযোগ আমাদের বিরুদ্ধে কেউ তুলতে পারবেন না। যে ৬টি রাজ্যকে বেছে নেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে রাজস্থান, ঝাড়খণ্ড এবং ওড়িশা রয়েছে, যেগুলি বিজেপি বা এনডিএ শাসিত রাজ্য নয়। অর্থাৎ ৬টির মধ্যে ৩টি রাজ্যই বিজেপি শাসিত নয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এটা নিয়ে বিন্দুমাত্র রাজনীতি করতে পারবেন না।’’
আরও পড়ুন: জামাটা পাঁজরের ঘামে সেঁটে, মাথায় খাবারের বস্তা, যূথিকাকে ভুলতে পারছি না