ফাইল চিত্র।
ভয় কাটিয়ে ফের কাশ্মীরমুখী মুর্শিদাবাদের বাহালনগর। আপেল বাগানে মোটা মজুরির হাতছানি এড়াতে না পেরে এই গ্রামের অনেকেই এখন ফের কাশ্মীরে। গ্রামে ২০০ টাকা মজুরিও জোটে না। আর কাশ্মীরে ৬০০ টাকা।
২০১৯ সালের অক্টোবরের রাতে কাশ্মীরের কুলগ্রামের কাতরাসুতে আপেল বাগানে কাজ করতে যাওয়া এই গ্রামেরই ৫ জন শ্রমিককে হাত বেঁধে তুলে নিয়ে গিয়ে নৃশংস ভাবে খুনের ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছিল গোটা দেশকে। আজও সেই ঘটনার শোক ভুলতে পারেনি বাহালনগর। সেই জঙ্গি হামলায় মৃত্যু হয়েছিল কামিরুদ্দিন, রফিকুল, রফিক, মুরসালিম ও নৈমুদ্দিন শেখের। তার পর প্রশাসন চেষ্টা করেছিল কাশ্মীর যাওয়া আটকাতে সাগরদিঘিতেই আপেল বাগান তৈরি করা। কিন্তু সে চেষ্টা কার্যত জলে গিয়েছে। বাড়তি মজুরির আশায় ফের কাশ্মীরমুখী বাহালনগর।
পরিস্থিতি এখন কিছুটা শান্তও। কাশ্মীর থেকেই ফোনে সে কথা বলছেন নুর সালাম। তেইশ বছর ধরে প্রতি বছরই টানা ১০ মাসের জন্য কাশ্মীরে যান। এক বছর বাদে এ বারও মার্চেই চলে গিয়েছেন তিনি। কুলগ্রামের সেগুনপোড়া গ্রামে এরসাদ শেখের বাগানে কাজ করছেন। নুর সালাম ফোনে বলছেন, “২০১৯ সালের অক্টোবরে দুর্ঘটনার পরে গত বছর সাহস হয়নি কারওরই কাশ্মীরে আসার। এ বারে ভয় কাটিয়ে এসেছেন অনেকেই। গ্রামে কাজ নেই। গত বছর দিনমজুরি করে কোনওরকমে চালিয়েছি। কাশ্মীরের বাগানে প্রতি দিনের মজুরি ৬০০ টাকা। থাকা, খাওয়া বিনামূল্যে। প্রতি বছর ১০ মাস থাকি কাশ্মীরে। প্রতি মাসে বাড়িতে খরচের টাকা পাঠিয়েও এক থোকে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা নিয়ে বাড়ি ফিরি। পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে তাই কাশ্মীর ছাড়া গতি কি?”
কাশ্মীরে ছয় মাস থেকে রয়েছেন ইসমাইল শেখও। স্ত্রী নাইরা বিবি ও দুই ছেলে রয়েছেন বাহালনগরের বাড়িতেই। নাইরা বিবি বলছেন, “কাশ্মীরের আয় থেকেই মেয়েটার বিয়ে দিয়েছি। দুর্ঘটনার সময়েও সেখানেই ছিল স্বামী। এ বারে কাশ্মীরে কোনও সমস্যা হয়নি। তবে ভয়ে ভয়ে থাকি। রোজই দু’বেলা ফোনে কথা বলে নিশ্চিন্ত হই।” ক’দিন আগেই কাশ্মীর থেকে ফিরেছেন আতাউর রহমান ও তাঁর ছেলে কাশেম আলি। জুন মাসে যান কাশ্মীরে। ফিরেছেন গত মাসেই। কাজ করছিলেন সোপিয়ানে গোলাম হাসান ইমরান রসুলের বাগানে। তিন বিঘের বাগান। কাজ করে ৪০ হাজার টাকা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। বলছেন, “আবার কিন্তু গোলাগুলি চলছে বলে খবর পেয়েছি। বরফও পড়ছে খুব। কিন্তু গ্রামে কাজ নেই। একটু সময় ভাল হলেই আবার যাব।’’ সাগরদিঘির বিডিও সুরজিত চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এঁদের কাজের জন্য আপেল গাছ লাগানো হয়েছিল। তবে সেটা সফল হয়নি। এখন যাঁরা কাশ্মীরে যাচ্ছেন তাঁদের খবর রাখার চেষ্টা করছি।’’