কাঁথির কুখ্যাত আসামি কর্ণ বেরা। ফাইল চিত্র
বোমা-গুলি ছুড়তে ছুড়তে পালাচ্ছে একদল দুষ্কৃতী। আদালত চত্বরেই ঘায়েল পুলিশ। পথচারীরাও সব ত্রস্ত!
গত ৪ অক্টোবর কুখ্যাত দুষ্কৃতী কর্ণ বেরা ও তার সঙ্গীদের তাণ্ডব দেখেছে কাঁথি শহর। মেদিনীপুর জেল থেকে নিয়ে গিয়ে কর্ণদের কাঁথি আদালতে হাজিরা দেওয়ানোর দিনই ফিল্মি কায়দায় বোমা-গুলি ছুড়তে ছুড়তে অন্যের মোটরবাইক ছিনতাই করে পালিয়েছিল ওই দুষ্কৃতীরা। পরে কর্ণ এবং আর এক দুষ্কৃতী ধরা পড়ে যায়। তবে কর্ণের অন্য দুই সঙ্গী এখনও অধরা।
ধরা পড়ার পরে এই নিয়ে চার চার বার পালিয়েছে কর্ণ। কখনও জেল থেকে, কখনও আদালত চত্বর থেকে। এ বার কর্ণেরা কী ভাবে পালানোর ছক কষে, কোথায় ছক কষা হয়, এ বার সেই সব খতিয়ে দেখতে শুরু করেছেন তদন্তকারীরা। ঘটনার দিন কর্ণদের মেদিনীপুর জেল থেকে কাঁথি আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়। তাই তদন্তকারীদের নজরে রয়েছে মেদিনীপুর জেল। জেলে বসেই কি এই ছক কষা হয়? জেলের মধ্যে কি মোবাইল ছিল? এক তদন্তকারীর জবাব, “তদন্তে সব দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যে মেদিনীপুর জেল ঘুরে গিয়েছে পুলিশের ‘স্পেশ্যাল অপারেশন গ্রুপ’-এর (এসওজি) একটি দল। দলটি আচমকাই মেদিনীপুর জেলে এসে দেখতে চায়, এই সময়ের মধ্যে জেল থেকে কোনও মোবাইল উদ্ধার হয়েছে কি না, সেই মোবাইল কর্ণের সেলের পাশাপাশি ছিল কি না, এই সময়ের মধ্যে কে বা কারা এসে কর্ণের সঙ্গে দেখা করেছে প্রভৃতি। জেলে এসে জেল সুপার সৌমিক সরকারের সঙ্গে এ সব নিয়ে কথা বলেছেন এসওজি- র তদন্তকারীরা। নথিপত্র দেখে জেলের তরফে জানানো হয়, গত দু’মাসে কেউ কর্ণের সঙ্গে দেখা করেনি। এই সময়ের মধ্যে জেলের মধ্যে থেকে কোনও মোবাইলও উদ্ধার হয়নি। জেলে মোবাইল যে উদ্ধার হয়নি তা নয়।
তদন্তকারীদের জানানো হয়, শেষ মোবাইল উদ্ধার হয়েছে গত ২৮ সেপ্টেম্বর। অভিজিৎ দে নামে এক আসামীর কাছ থেকে। জেলের মধ্যে নয়, ওই আসামী যখন মেদিনীপুর আদালত থেকে জেলে ঢুকছিল তখনই তার কাছ থেকে মোবাইলটি উদ্ধার হয়। পরদিন পুলিশে অভিযোগ জানানো হয়। এ নিয়ে কিছু বলতে চাননি জেল সুপার সৌমিক সরকার। তবে জেলের অন্য এক কর্তা মানছেন, “এসওজি- র একটি দল এসেছিল। যা যা জানতে চেয়েছে সবই জানানো হয়েছে।”
তদন্তকারীদের একাংশ মনে করছেন, আদালত চত্বরেও এই পরিকল্পনা হতে পারে। মামলার দিন আসামীদের আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়। সুযোগ বুঝে আসামীদের সঙ্গে দেখা করে পরিচিত-পরিজনেরা। আগে কোনও ভাবে হয়তো পরিচিত কয়েকজন কর্ণদের সঙ্গে দেখা করে। তখনই এই পরিকল্পনা হয়।
গত বছর ১ মে রাতে কাঁথি জেল থেকে সঙ্গী শেখ নাজিরকে সঙ্গে নিয়ে পালিয়েছিল কর্ণ। মহিষাদল থানার কনস্টেবল খুন এবং ১০টি ডাকাতির মামলায় অভিযুক্ত কর্ণের সেটা ছিল পালানোর ‘হ্যাট্রিক’। পরে কাঁথির মাজিলাপুরে বাড়ি থেকে মাত্র ৫০ মিটার দূরে এক ঝোপ থেকে তাকে পাকড়াও করা হয়। পরে তাকে আনা হয় মেদিনীপুর জেলে।