২০ বছর পরে রেল ফুটবল, নেই উন্মাদনা

দীর্ঘ ২০ বছর পরে রেলের বাছাই করা দলগুলিকে নিয়ে আন্তঃ রেল ফুটবল প্রতিযোগিতার আসর বসল খড়্গপুরে। সোমবার সেরসা স্টেডিয়ামে ৭১তম এই প্রতিযোগিতার সূচনা করেন দক্ষিণ-পূর্ব রেলের স্পোর্টস অ্যাকাডেমির সভাপতি মনোজ পাণ্ডে। নক-আউট ফুটবলে লিগ পর্যায়ের খেলাগুলি হয়েছে পঞ্জাবের কাপুরতালা ও অসমের গুয়াহাটিতে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৪ ০০:৫২
Share:

সেরসা স্টেডিয়ামে চলছে খেলা। নিজস্ব চিত্র।

দীর্ঘ ২০ বছর পরে রেলের বাছাই করা দলগুলিকে নিয়ে আন্তঃ রেল ফুটবল প্রতিযোগিতার আসর বসল খড়্গপুরে। সোমবার সেরসা স্টেডিয়ামে ৭১তম এই প্রতিযোগিতার সূচনা করেন দক্ষিণ-পূর্ব রেলের স্পোর্টস অ্যাকাডেমির সভাপতি মনোজ পাণ্ডে। নক-আউট ফুটবলে লিগ পর্যায়ের খেলাগুলি হয়েছে পঞ্জাবের কাপুরতালা ও অসমের গুয়াহাটিতে। দেশের ২৪টি দল থেকে লিগ পর্যায়ে বাছাই করা ৮টি দল এই নক-আউট ফুটবলে যোগ দিয়েছে। তবে এত বছর পরেও এই টুর্নামেন্ট নিয়ে রেলশহরে উচ্ছ্বাসের ছবি ধরা দিল না। ফাঁকাই থাকল দর্শকাসন।

Advertisement

এই আন্তঃরেল ফুটবলের ইতিহাস ব্রিটিশ আমলের। পাঁচের দশকে রেলের খেলাকে খড়্গপুরমুখী করতে তদানীন্তন ম্যাক ফার্নেল সাহেবের তত্ত্বাবধানে সেরসা স্টেডিয়াম গড়ে ওঠে। এই ময়দান শাসন করেছেন এস অ্যান্টনি, শিবাজি রায়, নার্সিং মূর্তি, সৌমেন মিত্র, তুলসীদাস বলরামের মতো বহু নামী ফুটবলার। সেই সময় আন্তঃ রেলের লিগ খেলা হত না। প্রতি বছর সারা ভারতের একটি নক-আউট ফুটবল টুর্নামেন্ট হত এই স্টেডিয়ামে। তখন তা ছিল অত্যন্ত জনপ্রিয়। ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত চলেছিল সেই ধারা। তখন স্পোর্টস অফিসার আর কে ভাটনাগর, অ্যাসিস্ট্যান্ট স্পোর্টস অফিসার রূপেণ চৌধুরীর উৎসাহ আজও প্রবীণ রেলকর্মীদের মুখে মুখে ফেরে। ১৯৯১ সালে যখন শেষ আন্তঃরেল ফুটবল চ্যাম্পিয়ানশিপ হয়েছিল। এক সময়ে আন্তঃ রেলের চ্যাম্পিয়ন হওয়া প্রবীণ সুশীল চক্রবর্তীর কথায়, “তখন যে কোনও খেলায় মাঠ ভর্তি থাকত। তিন পয়সার টিকিট কাটতেও উপচে পড়ত ভিড়।”

এত বছর পর ফের ফের শুরু হল সেই খেলা। প্রথম দিনের দু’টি অর্ধের খেলায় চারটি দল মাঠে নেমেছিল। প্রথমার্ধে মাঠে নামে নর্থ ফ্রন্টেয়ার রেল ও সার্দান রেল। ৩-১ গোলে জয়ী হয় নর্থ ফ্রন্টেয়ার। দ্বিতীয় অর্ধের খেলায় পূর্ব রেল ও দক্ষিয় চলছিল। সেখানে ১-০ গোলে জেতে দক্ষিণ-পূর্ব রেল। খেলায় স্কুলের কিছু পড়ুয়া ছাড়া দর্শকাসন ছিল ফাঁকা।

Advertisement

কেন মাঠে লোক হচ্ছে না? প্রবীণ ক্রীড়াপ্রেমী টেবিল টেনিস খোলোয়াড় সুনীল দত্ত বলেন, “এখন খড়্গপুর রেলে খেলাধুলোর দায়িত্বে যাঁরা আছেন তাঁরা উৎসাহ বাড়াতে কী করেন? সারা বছর সেরসা স্টেডিয়ামে তিনটি ক্রিকেট কোচিং চলছে। তাতে অনেক খরচ। অথচ বাইরে থেকে কেউ ফুটবল খেলতে এলে, স্টেডিয়াম কর্তৃপক্ষ বেশি টাকা চাওয়ায় অনেকে খেলার সুযোগই পান না।” অনেকে বলছেন, প্রচারের অভাব এর জন্য দায়ী। কারণ, গত বছরও সেরসায় স্পোর্টস ডেভেলপমেন্ট অ্যাকাডেমি আয়োজিত ইস্টবেঙ্গল সিনিয়র ও খড়্গপুর একাদশের প্রদর্শনী ম্যাচে রীতিমতো উন্মাদনা দেখা দিয়েছিল।

এ বার প্রচার যে একেবারে হয়নি তা নয়। স্টেশনের দক্ষিণ পাড়ে স্টেডিয়াম ঘেঁষা এলাকায় কিছু তোরণ করেছিল রেল। ওই পর্যন্তই। প্রাক্তন ফুটবলার সুশীল চক্রবর্তীর কথায়, “এক রেলকর্মীর থেকে শুনেছিলাম খেলা হবে। কিন্তু কবে হবে তার প্রচার শুনিনি।” যদিও এ সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন রেল আধিকারিকরা। এ দিন মাঠে এসেছিলেন খড়্গপুরের ডিআরএম গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “ব্যস্ত এই যুগে মানুষের আগ্রহ কমে যাওয়াতেই দর্শক কম হয়েছে।” সেরসা স্টেডিয়ামের দায়িত্বপ্রাপ্ত সম্পাদক রাজেশ সিংহ বলেন, “বিভিন্ন এলাকায় মাইকে প্রচার হয়েছে। টিকিট মূল্যও নেই। তবু দর্শক কমে যাওয়ার কারণ আমিও বুঝতে পারছি না। মনে হয় ২২ নভেম্বর ফাইনালে ভিড় হবে।”

ভরসা সেটুকুই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement