সভাঘর ভাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রেও ‘আমরা-ওরা’র নালিশ!
আগামী মাসে সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্মেলন। তার জন্য মাস দুয়েক আগেই জেলা পরিষদের প্রদ্যোৎ স্মৃতি সদন ভাড়া চেয়ে আবেদন করেছিল সিপিএম। কিন্তু তাতে সাড়া মেলেনি। অগত্যা শহরের বিদ্যাসাগর হলেই জেলা সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিপিএম। সেই হল অবশ্য ভাড়া পাওয়া গিয়েছে। এ ক্ষেত্রে তৃণমূল পরিচালিত জেলা পরিষদের বিরুদ্ধে সিপিএম নেতৃত্ব আইনি পথে গেলেন না কেন? দলের জেলা সম্পাদক দীপক সরকারের জবাব, “ওদের (তৃণমূল) সংস্কৃতির সঙ্গে আমাদের সংস্কৃতি মেলে না।” সিপিএমের এক জেলা নেতা অবশ্য বলেন, “চাইলে আমরা আইনি পথে যেতে পারতাম। তবে যাইনি। সব ক্ষেত্রেই সঙ্কীর্ণ রাজনীতি। এ সবের জবাব মানুষই দেবেন।”
তৃণমূল অবশ্য এ ক্ষেত্রে পক্ষপাতের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদে তৃণমূলের দলনেতা অজিত মাইতি বলেন, “সব ক্ষেত্রে সঙ্কীর্ণ রাজনীতি আমরা করি না। নিশ্চয়ই ওই দিন অন্য কোনও অনুষ্ঠান রয়েছে। তাই প্রদ্যোৎ স্মৃতি সদন জেলা সম্মেলনের জন্য দেওয়া যায়নি।”
আগামী ৮-১০ ফেব্রুয়ারি মেদিনীপুর শহরে সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্মেলন হবে। প্রথম দিন প্রকাশ্য সাবেশের মধ্যে দিয়ে সম্মেলন শুরু হবে। সিপিএম সূত্রে খবর, সম্মেলনে উপস্থিত থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র, দলের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু, দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য মদন ঘোষকে। তবে অসুস্থতার কারণে বুদ্ধবাবুর আসার সম্ভাবনা কম। অবশ্য সূর্যবাবু, বিমানবাবুরা আসবেন।
২০১২ সালে সিপিএমের শেষ জেলা সম্মেলন হয়েছিল মেদিনীপুর শহরে। সে বার কিন্তু প্রদ্যোৎ স্মৃতি সদনেই সম্মেলন হয়। তখন জেলা পরিষদ ছিল বামেদের দখলে। ফলে, ভাড়ায় সভাঘর পেতে তেমন কাঠখড় পোড়াতে হয়নি সিপিএমকে। এ বার পরিস্থিতি ভিন্ন। মেদিনীপুর শহরে বড় সভাঘর নেই। জেলা পরিষদের সভাঘরে প্রায় এক হাজার আসন রয়েছে। এখানে উন্নতমানের আলো এবং শব্দের ব্যবস্থা রয়েছে। অন্য সভাঘরগুলোর মধ্যে বিদ্যাসাগর স্মৃতি মন্দির, ফিল্ম সোসাইটি হল। বিদ্যাসাগর হল কিংবা ফিল্ম সোসাইটি হলে আসন সংখ্যা কম।
স্পোর্টস কমপ্লেক্সে আবার গ্যালারি রয়েছে। তবে বসার জন্য চেয়ারের স্থায়ী ব্যবস্থা নেই। পরিস্থিতি দেখেই জেলা পরিষদের প্রদ্যোৎ স্মৃতি সদনে জেলা সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সিপিএম। দলীয়স্তরে আলোচনার প্রেক্ষিতে মাস দুয়েক আগে এই সভাঘর ভাড়ায় চেয়ে আবেদন করা হয়।
সম্মেলনে প্রতিনিধির সংখ্যা খুব কম নয়। প্রায় পাঁচশো। সিপিএমের এক জেলা নেতার কথায়, “শহরে যে সব সভাঘর রয়েছে, তারমধ্যে জেলা পরিষদের ওই সভাঘরে সম্মেলন হলেই সব থেকে ভাল হত। বাইরে থেকে আলো, মাইকের ব্যবস্থা করতে হত না।” ওই নেতার কথায়, “শুরুতেই ওদের (জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ) মনোভাব দেখে মনে হয়েছিল, ওরা আমাদের দলের সম্মেলনের জন্য সভাঘর ভাড়ায় দিতে ইচ্ছুক নয়। তখন জানানো হয়েছিল, এ ব্যাপারে পরে ওরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবে। কিন্তু, পরে আর যোগাযোগ করেনি। ফলে, বাধ্য হয়েই শহরের বিদ্যাসাগর হলে সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। হয়তো এই হলের মধ্যে সব প্রতিনিধিকে বসানো যাবে না। তাই হলের বাইরেও ছাউনি করা হবে।” সিপিএমের এই জেলা নেতা বলেন, “আমরা চেয়েছিলাম, খরচ কমাতে। জেলা পরিষদের হল পেলে কিছুটা কম খরচেই সম্মেলন হত। তা না হওয়ায় খরচ কিছুটা বাড়বে।” দলের এক সূত্রে খবর, প্রতিবারের মতো এ বারও জেলা সম্মেলনের জন্য পৃথক তহবিল গঠন করা হয়েছে।