বিমল রাজ। —নিজস্ব চিত্র।
তৃণমূলের তারকা প্রার্থী সন্ধ্যা রায় নন, তাঁদের প্রতিপক্ষ বাম সমর্থিত সিপিআই প্রার্থী প্রবোধ পান্ডা। চতুর্মুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতার আবহে মেদিনীপুর লোকসভা আসন নিয়ে এমনটাই বিশ্লেষণ কংগ্রেসের।
এই লোকসভা আসনে কংগ্রেস-প্রার্থী খড়্গপুরের ‘ভূমিপুত্র’ চিকিৎসক বিমল রাজ। শুক্রবার তাঁর নাম-ঘোষণার পরপরই রেলশহর খড়্গপুরকে কেন্দ্র করে জোরকদমে শুরু হয়ে গিয়েছে প্রচার, অসম্পূর্ণ দেওয়াল লিখন শেষ করার কাজ।
কেন রেলশহর? কংগ্রেসের সূত্রে খবর, এমন সিদ্ধান্তের নেপথ্যে বেশ ক’য়েকটি কারণ রয়েছে। যেমন, মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রের খড়্গপুর বিধানসভা কেন্দ্রটিই একমাত্র কংগ্রেসের দখলে। বর্ষীয়ান বিধায়ক জ্ঞান সিংহ সোহন পাল ওরফে চাচা এই বিধানসভা কেন্দ্র থেকে ৯ বারের জয়ী প্রার্থী। বহু দিন ধরে পুরবোর্ডও দখলে রয়েছে কংগ্রেসের। পাশাপাশি গত লোকসভায় খড়্গপুরে প্রায় ১৬ হাজার ভোটে এগিয়ে ছিল কংগ্রেস-তৃণমূল জোট। তা ছাড়া দলীয় প্রার্থী চিকিৎসক বিমল রাজ খড়্গপুরের ভূমিপুত্র। সব মিলিয়ে, রেলশহরে কংগ্রেস যতটা ভাল অবস্থায় রয়েছে, ততটা এই লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্র্গত বিধানসভা কেন্দ্রগুলিতে নয়। শহর কংগ্রেস সভাপতি অমল দাসের কথায়, “খড়্গপুরে আমরা প্রচার শুরু করে দিয়েছি। অন্যত্রও তোড়জোড় চলছে।”
টিকিট পাওয়ার পরপরই বিমল রাজ সাংবাদিক বৈঠক করেছেন। সেখানেই আরও স্পষ্ট হয়েছে কংগ্রেসের রেলশহর কেন্দ্রিক ভাবনার কথা। কী বলছেন তিনি? মেদিনীপুরের প্রার্থীর কথায়, “আমি সেই ’৬৯ থেকে কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত। খড়্গপুরে দলের সাফল্যকে সামনে রেখে ভাল ফল করব।” প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির অন্যতম সচিব রবিশঙ্কর পাণ্ডের দাবি, রেলশহরের মানুষ সর্বদা তাঁদের পক্ষে থেকেছেন। তিনি বলেন, “প্রতিটি এলাকায় ডাক্তারবাবুকে নিয়ে প্রচারে যাব। তুলে ধরব ইউপিএ সরকারের জনমুখী খাদ্য সুরক্ষা আইন থেকে লোকপাল বিল প্রসঙ্গসবই।”
প্রচারের বিষয় যা-ই থাক চতুর্মুখী লড়াইয়ে এই আসনে জয় যে খুব সহজ হবে না তা আঁচ করছে কংগ্রেসও। এই কেন্দ্র থেকেই ৩ বারের জয়ী প্রার্থী প্রবোধ পান্ডা চতুর্থবার লড়াইয়ে নেমেছেন। বামেদের অনেকেই বলছেন, প্রবোধবাবুর পরিচয় এই কেন্দ্রে নতুন করে দেওয়ার নেই। আবার তৃণমূলের তারকা প্রার্থী অভিনেত্রী সন্ধ্যা রায়ের জনপ্রিয়তা বাঙালি মানুষের কাছে নতুন কিছু নয়। পরিস্থিতি দেখে রবিশঙ্করবাবু বলছেন, “ভোটে কী হবে তা বলা শক্ত। তবে আমরা ভাল লড়াই দেব।” তার সঙ্গেই তিনি বলছেন, “প্রবোধ পান্ডার সঙ্গেই আমাদের মূলত লড়াই হবে। সন্ধ্যা রায়কে তো নতুন প্রজন্ম চেনেই না। তাই তিনি কোনও ফ্যাক্টর নন।” বামপ্রার্থী প্রবোধবাবুও মানছেন খড়্গপুর কংগ্রেসের প্রভাবের কথা। তাঁর কথায়, “খড়্গপুরে কংগ্রেসের প্রভাব রয়েছে। এটা অস্বীকার করার জায়গা নেই। তবে আমাদের লড়াই নীতির লড়াই।”
দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে ৩০ মার্চ লোকসভা কেন্দ্রিক কর্মিসভা করার কথা জানিয়েছেন কংগ্রেসের জেলা সভাপতি বিকাশ ভুঁইয়া। তিনি রবিবার বলেন, “প্রার্থী ঘোষণার পর সর্বত্র প্রচার শুরু হয়ে গিয়েছে। শনিবার রেলশহরে প্রচার কর্মসূচি হয়েছে।” আর রবিশঙ্করবাবু জানিয়েছে, ৬ এপ্রিল রেলশহরের রাম মন্দিরে কর্মী সম্মেলন করা হচ্ছে।
খড়্গপুরের কংগ্রেসের সাফল্যকে সামনে রেখে চিকিৎসক হিসেবে সফল বিমল রাজ প্রার্থী হিসাবে কতটা ভোট টানতে পারেন, দেখার সেটাই।