পটাশপুরের পর ভগবানপুর ২ ব্লকের জুখিয়া। শনিবারের পর রবিবারও সিপিএমের কৃষক জাঠার মিছিলে হামলায় নাম জড়াল তৃণমূলের। তৃণমূলের অবশ্য দাবি, মিছিল থেকে সিপিএমই হামলা চালায়।
সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য তাপস সিংহের অভিযোগ, শনিবার পটাশপুরের হামলায় অভিযুক্তদের কাউকে এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। তারই মধ্যে ফের হামলা চালাল তৃণমূল। তিনি বলেন, “তৃণমূলের আক্রমণে দলের বাজকুল লোকাল কমিটির সম্পাদক শুকদেব জানা, কৃষকসভার জুখিয়া অঞ্চল কমিটির সহ-সভাপতি অমলেন্দু দাস-সহ এগারো জন কর্মী আহত হন।” ভগবানপুর ২ ব্লক সভাপতি তথা জেলা পরিষদের বিদ্যুৎ কর্মাধ্যক্ষ প্রদীপ কয়াল অভিযোগ উড়িয়ে বলেন, “সিপিএমের মিছিল থেকেই হামলা চালানো হয়। তাতে জুখিয়া অঞ্চল সভাপতি অম্বিকেশ মান্না-সহ অন্তত চার জন আহত হন।”
সিপিএম ও স্থানীয় সূত্রে খবর, এ দিন সকালে জাঠা ইক্ষুপত্রিকা এলাকায় পৌঁছলে মোটর বাইকে তৃণমূলের জনা দশেক নেতা-কর্মী মিছিলের উপরে চড়াও হয়। সিপিএম কর্মীরাও পাল্টা প্রতিরোধ করে। এতে তৃণমূলের ৪ জন ও সিপিএমের ১১ জন অল্পবিস্তর জখম হন। শুধু তৃণমূলের জুখিয়া অঞ্চল সভাপতি অম্বিকেশ মান্নাকে তমলুক জেলা হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়। তাঁর মাথায় আঘাত রয়েছে। তবে রবিবার মেদিনীপুর মেডিক্যাল থেকে ছাড়া পান পটাশপুরের ঘটনায় আহত কৃষকসভার রাজ্য সহ-সভাপতি তরুণ রায়।
সিপিএমের তরফ অভিযোগ, জুখিয়া অঞ্চল সভাপতির নেতৃত্বেই পরিকল্পিত ভাবে মিছিলে হামলা চালানো হয়। পরে ইক্ষুপত্রিকা গ্রাম থেকে কিছু দূরে গোবিন্দচকে সভা করে সিপিএম নেতৃত্ব। বারবার হামলা চালানো হলেও পুলিশ নিষ্ক্রিয়এর প্রতিবাদে সভায় উপস্থিত পুলিশকর্মীদের ঘিরে রাখে সিপিএম কর্মী-সমর্থকেরা। তাঁদের অধিকাংশই ছিলেন মহিলা। তাঁদের দাবি, অবিলম্বে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে হবে।
এ ব্যাপারে জেলার পুলিশ সুপার সুকেশকুমার জৈন জানান, “জুখিয়ায় দু’টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। উভয় পক্ষ একে অপরের বিরুদ্ধে মৌখিক অভিযোগ করলেও লিখিত অভিযোগ দায়ের হলে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।” শনিবার পটাশপুরের সিপিএমের জাঠা মিছিলে আক্রমণের ঘটনায় রবিবার পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার না হলেও পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে বলে পুলিশ সুপার দাবি করেছেন। উল্লেখ্য, ওই ঘটনায় সিপিএমের তরফে তৃণমূলের গোপালপুর অঞ্চল প্রধান প্রভুরাম দাস-সহ ১৯ জন দলীয় কর্মী-সমর্থকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়। পুলিশের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগও আনে সিপিএম।
এ দিকে, শনিবার দীর্ঘ আড়াই বছর পর খেজুরিতে মিছিল ও প্রকাশ্য সভা করল সিপিএম। এক সময়ের লালদুর্গ হিসেবে পরিচিত খেজুরির শনিবারের এই মিছিলের নেতৃত্ব দেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সূর্যকান্ত মিশ্র। রাজ্যে পরিবর্তনের পর খেজুরির দু’টি ব্লকে দলের দু’টি জোনাল, ৬টি লোকাল ও ৩৫টি শাখা অফিসের সবক’টিই বন্ধ হয়ে যায়। সিপিএমের দাবি, তৃণমূলের অত্যাচারে এখনও অন্তত ৬০০ কর্মী-সমর্থক ঘরছাড়া। এই অবস্থায় দলীয় কর্মীদের মনোবল ফেরাতেই খেজুরির কর্মসূচি বলে জানা গিয়েছে।
হেঁড়িয়ার সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে সূর্যকান্তু মিশ্র অভিযোগ করেন, “নন্দীগ্রাম-খেজুরিতে তৃণমূল বাইরে থেকে মাওবাদীদের এনে সন্ত্রাস সৃষ্টি করে সিপিএম বা বামপন্থীদের উৎখাত করতে তৎপর হয়েছিল। তাতে সফলও হয়েছিল। কিন্তু, এখন মানুষের ভুল ভেঙেছে। তারা বুঝেছেন, ক্ষমতা দখল করতেই মাওবাদীদের নিয়ে সন্ত্রাস কায়েম করেছিল তৃণমূল।”
বিধানসভার বিরোধী দলনেতার কথায়, “দীর্ঘ আড়াই বছর খেজুরিতে শুধু সিপিএম নয়, কোনও বিরোধী দলই মিছিল-সভা করতে পারেনি। এখন খেজুরির মানুষ বুঝছেন, কোনটা ভাল আর কোনটা খারাপ।” গত লোকসভা ভোটে কাঁথির প্রার্থী তথা সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য তাপস সিংহের মন্তব্য, “খেজুরির মানুষ তৃণমূলের চরিত্র বুঝে ফেলেছেন। খেজুরির মানুষ ফের বামপন্থার দিকে আসছেন।” সিপিএম নেতৃত্বের মত, এমন মিছিলের পর নেতাকর্মীরা তো বটেই, সাধারণ মানুষও উজ্জীবিত। প্রসঙ্গত, পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতা এবং কেশপুরে ‘অশান্তি’-র কথা ভেবে জাঠা কর্মসূচি থেকে ওই দুই এলাকাকে বাদ দিয়েছেন সিপিএম নেতৃত্ব। তবে দলেরই একাংশ মানেন, ওই দুই এলাকায় কর্মী-সমর্থকের অভাবে এখনও কোনও কর্মসূচি করার অবস্থা নেই। সে দিক থেকে খেজুরিতে সিপিএমের কৃষক জাঠা উল্লেখযোগ্য।
তৃণমূলের জেলা সম্পাদক মামুদ হোসেনের অবশ্য দাবি, “তৃণমূল নয়, খেজুরির মানুষই সিপিএমের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে তাদের উৎখাত করেছিল।” তাঁর মন্তব্য, তৃণমূল ঐক্যবদ্ধ ভাবে সিপিএমকে রাজনৈতিক ভাবে মোকাবিলা করবে।