ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হল সিপিএমের জোনাল কমিটির এক সদস্যের। মৃত অজিত ভুঁইয়ার (৬৮) বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনা ১ ব্লকের চাঁদুর এলাকায়। তিনি চন্দ্রকোনা ১ জোনাল কমিটির সদস্য ছিলেন। পরিবারের অভিযোগ, তৃণমূলের গালিগালাজ, হুমকির জেরে ‘ভয়ে’ অজিতবাবু আত্মঘাতী হয়েছেন। তাঁর-স্ত্রী ছায়া দোলুই তৃণমূলের স্থানীয় পাঁচ কর্মীর বিরুদ্ধে সোমবার চন্দ্রকোনা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছে। তৃণমূল অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
রবিবার আরামবাগ লোকসভার অর্ন্তগত চন্দ্রকোনা ১ ব্লকে ওই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী আফরিন আলি ওরফে অপরূপা পোদ্দারের সমর্থনে মিছিল করছিল দলীয় কর্মী-সমর্থকরা। মৃতের পরিবারের অভিযোগ, মিছিল থেকে সিপিএম কর্মী-সমর্থকদের নামে গালিগালাজ করা হচ্ছিল। অজিতবাবুর স্ত্রী ছায়াদেবী বলেন, “স্বামীর নাম করে মিছিল থেকে বলা হয়, গ্রামে থাকতে হলে সিপিএম ছেড়ে তৃণমূল করতে হবে।” তাঁর আরও অভিযোগ, তৃণমূল কর্মীরা ফের গভীর রাতে এসে অজিতবাবুকে শাসায়। হুমকি দেয়, “আগামী কাল থেকেই দল ছাড়তে হবে। না হলে চুপচাপ বসে থাকতে হবে।” স্ত্রীর অভিযোগ, তাতে ভয় পেয়েই স্বামী রবিবার রাতেই আত্মঘাতী হন।
গোটা ঘটনায় চন্দ্রকোনা এলাকায় ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। স্থানীয়রা অজিতবাবুকে উপকারী, ভাল মানুষ হিসাবেই চিনতেন। তাঁর এমন মৃত্যু মানতে পারছেন না অনেকেই। অজিতবাবুর মৃত্যুর জন্য সরাসরি তৃণমূলের দিকে আঙুল তুলেছেন সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অশোক সাঁতরা। তাঁর হুঁশিয়ারি, “অজিতবাবু চন্দ্রকোনা এলাকার প্রচারের দায়িত্বে ছিলেন। তাঁর এমন মৃত্যু দুঃখজনক। এর প্রতিবাদে এলাকায় প্রতিবাদ মিছিল, আন্দোলন করা হবে।” অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল। চন্দ্রকোনা ১ ব্লক সভাপতি সুুকমার চক্রবর্তীর দাবি, “হুমকি নয়, পারিবারিক কারণেই আত্মঘাতী হয়েছেন ওই সিপিএম নেতা।”
অজিতবাবুর ছেলে বছর ত্রিশের যুবক সুদীপও তৃণমূলের বিরুদ্ধে হুমকির অভিযোগ এনেছেন। তাঁর অভিযোগ, রবিবার বিকেলে তৃণমূলের মিছিলের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় দলের কর্মী-সমর্থকরা মোটরবাইক আটকে তাঁকে শাসায়। সুদীপের দাবি অজিতবাবুর নাম করে ওরা বলে, “বাবাকে বলবি, সিপিএম ছাড়তে হবে। এবং সেটা কালই।” সবটাই জেনেছিলেন অজিতবাবু। তাঁর স্ত্রী-ছেলের অনুমান, এটা মেনে নিতে না পেরে আত্মঘাতী হন তিনি।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার রাতে খাওয়া শেষে মনমরা ছিলেন অজিতবাবু। কিছুটা আতঙ্কের মধ্যেও ছিলেন। কিন্তু, তার পরিণতি যে এমন হবে, তা ভাবতে পারছেন না পরিজনরা। সাধারণত একটি ঘরে একাই শুতেন তিনি। ভোরবেলা পুলিশ ওই ঘর থেকেই গলায় দড়ির ফাঁস লাগানো দেহ উদ্ধার করে। জোনাল কমিটির ওই সদস্যের দেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুলিশ।