পূর্ব মেদিনীপুর

লক্ষ্মণহীন প্রথম সম্মেলনে নেই তাঁর ছায়াও

২০০৫ এরপর ২০১৫, দশ বছরের ব্যবধানে সিপিএমের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সম্মেলন ফিরল শিল্পশহরে। রবিবার থেকে তিন দিনের ২২ তম জেলা সম্মেলন শুরু হল সুতাহাটা সুবর্ণ জয়ন্তী আজাদ হিন্দ ময়দানে। ২০০৫-এর সেই সম্মেলনে এসেছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

হলদিয়া ও তমলুক শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:২৬
Share:

সভায় বক্তব্য রাখছেন সূর্যকান্ত মিশ্র। —নিজস্ব চিত্র।

২০০৫ এরপর ২০১৫, দশ বছরের ব্যবধানে সিপিএমের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সম্মেলন ফিরল শিল্পশহরে। রবিবার থেকে তিন দিনের ২২ তম জেলা সম্মেলন শুরু হল সুতাহাটা সুবর্ণ জয়ন্তী আজাদ হিন্দ ময়দানে। ২০০৫-এর সেই সম্মেলনে এসেছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু। দল তখন শাসক দল। কালের নিয়মে এই ক’বছরে হলদি নদী দিয়ে বয়ে গিয়েছে অনেক জল। এখন সিপিএম শুধু বিরোধী দল নয়, সাম্প্রতিক প্রায় সব ভোটে রায়ে দেখা যাচ্ছে জনসমর্থন নিম্নমুখী। এই আবহে আলিমুদ্দিনের নেক নজরে থাকা পূর্বের সম্মেলন শুরু হল।

Advertisement

পূর্ব মেদিনীপুরে এই প্রথম কোনও সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যেখানে লক্ষ্মণ শেঠের ছায়াটুকুও নেই। ২০০৫-এর সম্মেলনের সর্বেসর্বা ছিলেন লক্ষ্মণবাবু। ২০১১ সম্মেলনের সময়ে নন্দীগ্রাম মামলায় অভিযুক্ত হয়ে আত্মগোপন করেছিলেন। তখনও জেলায় তাঁর কর্তৃত্ব ছিল অটুট। সিপিএমের এক সময়ের প্রভাবশালী এই নেতার খাসতালুকেই সম্মেলনের জন্য বাছা হয়। কেন? নেতৃত্বের ব্যাখ্যা, একদা ‘সাম্রাজ্য’ থেকেই এলাকার সংগঠন পুনরুদ্ধারের কৌশল নিয়ে আলোচনা করে গোটা জেলাতেই ঘুরে দাঁড়াতে চান তারা। জেলা নেতারা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, এই শিল্পশহর হলদিয়ায় গত লোকসভা ভোটের নিরিখে রাজ্যের তুলনায় অনেকটাই বেশি ভোট পেয়েছে সিপিএম। লক্ষ্মণ বহিষ্কার পর্বের পর যা মুখের কথা নয়!

এ দিনের সম্মেলন শুরু হয় বেলা তিনটের পর। সভায় উপস্থিত নেতারা লক্ষ্মণবাবুর নাম একটি বারের জন্য না আনলেও তাঁকে বিঁধতে ছাড়েননি। ভিড়ে ঠাসা সভায় রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রবীন দেব লক্ষ্মণবাবুর নাম না করে বলেন, ‘‘ওরা দলের হলদিয়ার অফিস ছাড়ছে না। সুকুমার সেনগুপ্ত ভবন এখন কর্তা-গিন্নি ভবন হয়ে গিয়েছে।” এ দিনের সভামঞ্চে ছিলেন রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু, দলের পলিটব্যুরোর সদস্য সূর্যকান্ত মিশ্র, জেলা সম্পাদক প্রশান্ত প্রধান-সহ সিপিএম নেতৃত্ব।

Advertisement

সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু বিজেপি-র সমালোচনা করে বলেন, “বিজেপি, আরএসএস মানুষকে ধর্মের ভিত্তিতে বিভক্ত করে। তাই আপনাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।” তাঁর অভিযোগ, রাজ্যের শাসক দলও বিভেদ তৈরির কাজ করছে। তাঁর কটাক্ষ, “তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রী, সাংসদ-বিধায়কেরা দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। তাঁদের সমূলে উৎপাটিত করে হলদি নদীতে ফেলার জন্য প্রস্তুতি নিন।” তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপি-র তলে তলে সম্পর্ক আছে বলেও বিমানবাবুর দাবি।

মমতা-মুকুল সর্ম্পকের টানাপড়েন প্রসঙ্গে সূর্যমিশ্রের কটাক্ষ, “এখন আবহাওয়ার পরিবর্তন হচ্ছে। ফুল, পাতা, মুকুল ঝরছে।” একই সঙ্গে তিনি বলেন, “পূর্বের নেতাদের সঙ্গে বিজেপি-র হটলাইন রয়েছে। পরিবহণ মন্ত্রী কখনও জেলে থাকছেন, কখনও হাসপাতালে!” দলীয় কর্মীদের প্রতি তাঁর আর্জি, “মানুষ যে দলের হোক না কেন, তাঁর কাছে যেতে হবে। এলাকা দখল নয়, মানুষের মন জয় করতে হবে।” রবীনবাবুর অভিযোগ, “পুলিশ তৃণমূলের দলদাস হয়েছে। দলীয় কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে।”

রবিবার শুরু হওয়া সম্মেলন চলবে মঙ্গলবার অবধি। এই দিনগুলিতে সাংগঠনিক প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে জেলায় দলের রণকৌশল ঠিক করা হবে। বিজেপি, তৃণমূলকে রাজনৈতিক ভাবে মোকাবিলা করে লক্ষ্মণহীন জেলাকে শক্ত ভিতের উপরে দাঁড় করানোই চ্যালেঞ্জ নেতৃত্বের। সম্মেলনে রাজ্য নেতাদের উপস্থিতিতে সে বিষয়ে কি কৌশল নেওয়া হয়, সে দিকেই চেয়ে জেলার রাজনৈতিক মহল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement