অনুরূপ পণ্ডা
লক্ষ্মণ-বিদায়ের শেলে বিদ্ধ পূর্ব মেদিনীপুরের সিপিএম স্বাগত জানাচ্ছে অনুরূপ পণ্ডাকে!
হলদিয়ার দাপুটে নেতা লক্ষ্মণ শেঠের মতোই তিন দশক আগে সিপিএম থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন সেই সময়ে কাঁথির প্রভাবশালী নেতা অনুরূপবাবু। ৭০ ছুঁইছুঁই সেই নেতাকে এখন কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী তাপস সিংহের সমর্থনে নিয়মিত প্রচারে দেখা যাচ্ছে। দল সূত্রের ইঙ্গিত, সিপিএমের সঙ্গে অনুরূপবাবুর নতুন ইনিংসের গোড়াপত্তন হতে পারে নির্বাচনী যোগাযোগ থেকেই।
অনুরূপবাবু ও তাঁর অনুগামীরা তাপসবাবুর সমর্থনে পোস্টার, হ্যান্ডবিল প্রকাশ থেকে শুরু করে বৈঠক, যাবতীয় প্রচারে যোগ দিচ্ছেন। সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য তথা প্রার্থী তাপসবাবু বলেছেন, ‘‘উনি বর্ষীয়ান বামপন্থী। এমন টালমাটাল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ওঁর এবং ওঁর অনুগামীদের বাম-প্রার্থীর সমর্থনে এগিয়ে আসাকে স্বাগত জানাচ্ছি।”
ভোটের কাজ মিটে গেলে বহিষ্কৃত অনুরূপবাবুকে দলে ফিরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরুর ইঙ্গিত মিলছে সিপিএম সূত্রেও। দলের রাজ্য কমিটির এক সদস্যের কথায়, “আটের দশকের গোড়ায় বহিষ্কারের সময় অনুরূপবাবু কাঁথি এবং অবিভক্ত জেলার বড় অংশে দলের অবিসংবাদী নেতা ছিলেন। এখন দলের প্রয়োজনের সময়ে এগিয়ে এসেছেন। নির্বাচনের পরে তাঁকে ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে বিবেচনা করা হতে পারে।”
তমলুকের প্রাক্তন সাংসদ লক্ষ্মণবাবুর বহিষ্কারের ফলে জেলায় সংগঠনে ধাক্কা খাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে সিপিএমের একাংশে। অনুরূপবাবুকে পাশে পেলে দলের কর্মী-সমর্থকদের চাঙ্গা করতে সুবিধা হবে বলে সিপিএম সূত্রের ব্যাখ্যা। তবে দলে ফিরতে হলে আবেদন করতে হবে বহিষ্কৃত এই নেতাকে। আবেদন করবেন কি? অনুরূপবাবুর উত্তর, “ফিরতে আপত্তি নেই।”
সাত ও আটের দশকের প্রথম দিকে অবিভক্ত মেদিনীপুরে দাপুটে নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর তৎকালীন সদস্য অনুরূপবাবু। কাঁথি এলাকায় সংগঠনে তাঁর কথাই ‘শেষ কথা’ বলে বিবেচিত হত। তাঁর আমলে কাঁথি মহকুমা জুড়ে সিপিএমের সংগঠনের যথেষ্ট বাড়বাড়ন্ত হয়েছিল। এহেন নেতার বহিষ্কারের পর্বও কম নাটকীয় নয়।
সিপিআই, বামফ্রন্টে যোগ দেওয়ায় ১৯৮২ সালের বিধানসভা ভোটে দক্ষিণ কাঁথি আসনটি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু রাজ্য বামফ্রন্টের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে ওই বিধানসভা কেন্দ্রে সিপিআই প্রার্থীর বিরুদ্ধে গোঁজ-প্রার্থী দাঁড় করান অনুরূপবাবু। ফলে, দক্ষিণ কাঁথিতে সিপিআই প্রার্থী হেরে যান। জেতেন কংগ্রেস প্রার্থী তথা বর্তমান তৃণমূল সাংসদ শিশির অধিকারী।
ওই বিধানসভা ভোটে ওই ফলের পরে সিপিআইয়ের অভিযোগের ভিত্তিতে ১৯৮৩ সালে দল থেকে বহিষ্কৃত হন অনুরূপবাবু। সেই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ অনুরূপ-অনুগামীরা কাঁথিতে সিপিএমের সব কার্যালয়ের দখল নিয়েছিলেন বলেও অভিযোগ। সিপিএমের রাজ্য নেতারাও তখন জেলার ওই অংশে বৈঠকের জন্য কার্যালয় পেতেন না।
২০০৭-এ সেই অনুরূপবাবুই সিপিআইয়ে যোগ দেন এবং দলের রাজ্য কমিটির সদস্য হন। ২০০৯-এর পর থেকে তিনি সিপিআইয়ের সঙ্গত্যাগ করেন। এখন তিনি ‘সারা ভারত কোকোনাট গ্রোয়ার্স ফেডারেশন’-এর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সম্পাদক। ওই পদ থেকেই তিনি কাঁথি লোকসভা আসনের সিপিএম প্রার্থীর সমর্থনে পোস্টার ছাপিয়েছেন। অনুরূপবাবুর এই পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানিয়েছেন পূর্ব মেদিনীপুর সিপিএমের ভারপ্রাপ্ত জেলা সম্পাদক ও কাঁথির প্রাক্তন সাংসদ প্রশান্ত প্রধান। এখন অনুরূপবাবু সিপিএমে ফিরতে চাইলে তাঁকে কি ফিরিয়ে নেওয়া হবে? প্রশান্তবাবুর উত্তর, “পুরনো দিনের বামপন্থী নেতা দলে ফিরতে চাইলে দল অবশ্যই তাঁকে স্বাগত জানাবে। ”
তিনি নিজে কি সিপিএমে ফিরতে আগ্রহী? অনুরূপবাবু বলছেন, “আমি সিপিএম ছাড়িনি। সিপিএম-ই আমাকে বহিষ্কার করেছিল। তবে এখন মনে হচ্ছে, ফেরার সময় এসেছে।”