মনের জোরে অভাবকে হারিয়েই এসেছে সাফল্য

পরীক্ষা দিতে যাওয়ার পথে সহপাঠীর মৃত্যু চাক্ষুষ করেছে সে। তারপরই মাধ্যমিকের অঙ্ক পরীক্ষা দিতে ছুটেছিল। বাড়ির সদস্যরা ভেবেছিলেন এই আকস্মিকতা কাটিয়ে উঠতে পারবে তো অভাবের ঘরের বছর ষোলোর ছেলেটা? কিন্তু সব সংশয় দূর করে ৬৬১ পেয়ে এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হল দিব্যেন্দু মাইতি।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৪ ০১:৩৭
Share:

দিব্যেন্দু (বাঁ দিকে) ও রাহুল (ডান দিকে)।—নিজস্ব চিত্র।

পরীক্ষা দিতে যাওয়ার পথে সহপাঠীর মৃত্যু চাক্ষুষ করেছে সে। তারপরই মাধ্যমিকের অঙ্ক পরীক্ষা দিতে ছুটেছিল। বাড়ির সদস্যরা ভেবেছিলেন এই আকস্মিকতা কাটিয়ে উঠতে পারবে তো অভাবের ঘরের বছর ষোলোর ছেলেটা?

Advertisement

কিন্তু সব সংশয় দূর করে ৬৬১ পেয়ে এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হল দিব্যেন্দু মাইতি। দাঁতন-১ ব্লকের আঁইকোলা গ্রাম পঞ্চায়েতের আনন্দনগর শ্রীনাথ বিদ্যাপীঠের (উচ্চ মাধ্যমিক) এই ছাত্রের বিষয়ভিত্তিক নম্বর, বাংলায় ৯০, ইংরেজিতে ৯০, অঙ্কে ৯৮, ভৌতবিজ্ঞানে ৯৪, জীবনবিজ্ঞানে ৯৮, ইতিহাসে ৯৬ এবং ভূগোলে ৯৫। দিনে পড়ার তেমন সময়ই পায়নি সে। যেটুকু পড়া তা রাতের বেলাতেই। পুরনো কথা বলতে বলতে দিব্যেন্দু বলে, “অঙ্ক পরীক্ষার দিন পথ দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিল আমারই এক বন্ধু। ওই দৃশ্য দেখে প্রথমে কেমন যেন হয়ে গিয়েছিলাম। তারপরই একটু ধাতস্থ হয়ে পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলাম।”

দিব্যেন্দুর বাবা রবীন্দ্র মাইতি পেশায় সাধারণ কৃষিজীবী। সংসারে আর্থিক অভাব রয়েছেই। রবীন্দ্রবাবু বলেন, “তিন ছেলেমেয়েকে নিয়ে সংসার চালাতেই পারি না। কী ভাবে ছেলের পড়াশোনা চালাবো জানি না। কিন্তু ছেলেটা এত ভাল নম্বর পেয়েছে। কারও সাহায্য পেলে ওকে একটা সুযোগ দিতে পারলে ভাল হয়।” তবে অভাবের সঙ্গে লড়াই করেই কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়র হতে চায় দিব্যেন্দু। দিব্যেন্দুর স্কুলের শিক্ষক অনুভব বেরা বলেন, “স্কুলের সীমিত পরিষেবা, বাড়ি থেকে স্কুলের দূরত্ব ও দারিদ্রকে হারিয়ে ছেলেটা যে এত ভাল ফল করেছে এতে আমরা সকলেই খুশি। তবে কেউ যদি ওকে আর্থিক সাহায্য করে তাহলে দিব্যেন্দু আরও ভাল ফল করবে।”

Advertisement

অন্য দিকে, আর এক বছর ষোলোর এক কিশোরের মনের অসম্ভব জেদের কাছেও হার মেনেছে দারিদ্র। বাবা দুর্ঘটনায় আহত হয়ে কাজ করতে অক্ষম। মাকে একশো দিনের কাজ করতে মাঠে মাটি কোপাতে যেতে হয়। এমন পরিস্থিতিতে একজনও গৃহশিক্ষকের কাছে না পড়ে এবারের মাধ্যমিকে ৬৫০ নম্বর পেয়েছে ভগবানপুর-২ ব্লকের চম্পাইনগর এস সি হাইস্কুলের ছাত্র রাহুল পাল। মাধ্যমিকে প্রাপ্ত ৬৫০ নম্বরের মধ্যে রাহুল বাংলায় ৯০, ইংরেজিতে ৮০,অঙ্কে ৯৯,পদার্থ বিজ্ঞানে ৯৬, জীবন বিজ্ঞানে ৯৯, ইতিহাসে ৯৪ ও ভূগোলে ৯২ নম্বর পেয়েছে। বাসুদেববেড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা রাহুলের বাবা অভিরাম পাল একসময় ট্রলারে কাজ করতেন। তবে এখন দুর্ঘটনায় জখম হয়ে গৃহবন্দি। মা সুলেখা পালকে একশো দিনের প্রকল্পে মাটি কাটার কাজ করতে হয়। অভাবের সংসারে জোটেনি গৃহশিক্ষক, এমনকী টাকার অভাবে পাঠ্যপুস্তকও কেনার সামর্থ হয় নি। বিজ্ঞান নিয়ে পড়ে পরবর্তীকালে অধ্যাপনা করতে চায় রাহুল।

কিন্তু সেই স্বপ্নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে অর্থাভাব। এত ভাল ফল করা সত্ত্বেও আগামী দিনে রাহুল উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হতে পারবে কি না তা নিয়েই রয়েছে সন্দেহ। রাহুলের বাবা-মার কথায়, “সারা মাসে কোনও রকমে যা রোজগার হয়, তাতে সংসারই চলে না। উচ্চ মাধ্যমিকে তো বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে অনেক খরচ। খরচে কী ভাবে যোগাড় করব, জানি না।” চম্পাইনগর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ভৃগুরাম মাঝি বলেন, “অর্থের অভাবে ওর মতো এমন মেধাবী ছাত্র উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হতে না পারলে তার চেয়ে খারাপ কিছু হতে পারে না।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement