মঞ্চ গড়ার আগেও বুদ্ধ-বিমানকে তোপ লক্ষ্মণের

অনুগামীদের নিয়ে নতুন রাজনৈতিক মঞ্চ গড়ার আগে জেলায় এসে ফের সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন দল থেকে বহিষ্কৃত প্রাক্তন সাংসদ লক্ষ্মণ শেঠ। ফের তিনি বললেন, “আমার স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্তের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর তা সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়ে আমাকে হেয় করা হয়েছে। এটা দলের শৃঙ্খলাবিরোধী। তাই শৃঙ্খলাভঙ্গের জন্য যদি বহিষ্কৃত হতে হয়, তাহলে বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্র, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যদের বহিষ্কৃত হওয়া উচিত।”

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

তমলুক শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৪ ০০:৪৭
Share:

অনুগামীদের নিয়ে তমলুক জেলা আদালতে লক্ষ্মণ শেঠ। —নিজস্ব চিত্র।

অনুগামীদের নিয়ে নতুন রাজনৈতিক মঞ্চ গড়ার আগে জেলায় এসে ফের সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন দল থেকে বহিষ্কৃত প্রাক্তন সাংসদ লক্ষ্মণ শেঠ। ফের তিনি বললেন, “আমার স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্তের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর তা সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়ে আমাকে হেয় করা হয়েছে। এটা দলের শৃঙ্খলাবিরোধী। তাই শৃঙ্খলাভঙ্গের জন্য যদি বহিষ্কৃত হতে হয়, তাহলে বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্র, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যদের বহিষ্কৃত হওয়া উচিত।”

Advertisement

নন্দীগ্রাম নিখোঁজ মামলায় পূর্ব মেদিনীপুর জেলা আদালতে হাজিরা দিতে বৃহস্পতিবার তমলুকে আসেন লক্ষ্মণ। সেখানে তিনি আরও জানান, স্ত্রী তমালিকা পণ্ডা শেঠ-সহ এক ঝাঁক জেলা নেতা তাঁর পরামর্শে নয়, দল ছেড়েছেন সিপিএমের প্রতি বীতশ্রদ্ধায়। লক্ষ্মণের কথায়, “আমাকে বহিষ্কারের পর তমালিকা দলে ছিলেন। কিন্তু যখন দেখলেন অন্যায়ভাবে লোকজনকে বহিষ্কার করা হচ্ছে, তখন তাঁর বিবেকে লেগেছে, তাই দল ছেড়েছেন। এ বিষয়ে আমি তাঁকে কোনও পরামর্শ দিইনি।” লক্ষ্মণের মতে, তাঁকে ভালবেসে নয়, সিপিএমের আমলাতান্ত্রিকতা, স্বেচ্ছাচারিতা, দ্বিচারিতায় বীতশ্রদ্ধ হয়েই ওঁরা দলছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব জেলায় গোষ্ঠী কোন্দলের পরিবেশ তৈরি করেছেন বলেও অভিযোগ করেন তমলুকের প্রাক্তন সাংসদ। লক্ষ্মণের কথায়, “পূর্ব মেদিনীপুর সিপিএমে দুই জেলা সম্পাদক, যা নজিরবিহীন। কানু সাহু নাকি লক্ষ্মণ শেঠপন্থী, আর প্রশান্ত প্রধান বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যপন্থী। এ ভাবেই আলিমুদ্দিন জেলা পার্টিতে দুটি শিবির তৈরি করে দিয়েছে।”

Advertisement

লক্ষ্মণ জায়া তমালিকা-সহ সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর ৬ সদস্য এবং জেলা কমিটি ও জোনাল স্তরের একগুচ্ছ নেতা গত ২৬ জুলাই দল ছাড়ার কথা আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করেছিলেন। তারপর এ দিন প্রথম নিজের জেলায় পা রাখলেন লক্ষ্মণ। তমালিকা অবশ্য আদালতে আসেননি। ফেরার পথে মেচেদায় স্বামীর সঙ্গে দেখা করেন তিনি। ২৬ তারিখই লক্ষ্মণ জানিয়েছিলেন আজ, শুক্রবার কলকাতায় কনভেনশন করে আনুষ্ঠানিক ভাবে ‘ভারত নির্মাণ মঞ্চ’ গড়া হবে। নতুন করে শুরু হবে রাজনৈতিক কার্যকলাপ। তার আগে এ দিন লক্ষ্মণ বলেন, “এই মঞ্চ কোনও রাজনৈতিক দল নয়। তবে রাজনৈতিক বিষয়ে আমরা নীরব থাকবো না। কোনও দলের সঙ্গে আমাদের শত্রুতা নেই। সিপিএমের সঙ্গেও নয়।”

লক্ষ্মণ আরও জানান, এই মঞ্চ রাজ্য বা কেন্দ্র সরকারের ভাল কাজকে সমর্থন করবে, আর জনবিরোধী কাজের বিরোধিতা করবে। কেউ ব্যক্তি আক্রমণ বা কুৎসা করলে তার জবাব দেওয়া হবে। প্রাক্তন সিপিএম সাংসদের কথায়, “বর্তমান রাজ্য সরকারের আমলে জঙ্গলমহল, পাহাড়ে যেমন শান্তি ফিরেছে, তেমনই নন্দীগ্রামে এখনও কিছু সমস্যা আছে।” নন্দীগ্রামের ঘড়ছাড়াদের বাড়ি ফেরানো, রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহারের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে মঞ্চ দাবি জানাবে বলেও মন্তব্য করেন লক্ষ্মণ। তিনি আরও জানান, তাঁদের মঞ্চ নির্বাচনে যোগ দেবে না। তবে পরিস্থিতি বিচার করে কোন দলকে নির্বাচনে সমর্থন করা হবে, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

নন্দীগ্রাম নিখোঁজ মামলায় অভিযুক্ত দলত্যাগী সিপিএম নেতাদের অনেকেই এ দিন তমলুক আদালতে হাজির ছিলেন। এসেছিলেন অমিয় সাহু, অশোক গুড়িয়া, অশোক বেরা, বিজন রায়রা। এ ছাড়াও আদালত চত্বরে ভিড় জমান সদ্য সিপিএম ছেড়ে আসা জেলার বহু নেতা-কর্মী। সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ লক্ষ্মণ আসার আগেই তাঁর অনুগামীদের ভিড় জমে যায়। লক্ষ্মণ পৌঁছনোর পরে সেই ভিড় আরও বাড়ে। লক্ষ্মণ-অনুগামীরা প্রায় কেউই আর সিপিএমে নেই। ফলে, এ দিন নন্দীগ্রাম নিখোঁজ মামলায় অভিযুক্তদের মধ্যেও স্পষ্ট বিভাজন চোখে পড়ে। আদালতের এজলাসে যাওয়ার আগে তমলুক এসডিও কোর্টের একটি ঘরে লক্ষ্মণের সঙ্গে দেখা যায় অমিয় সাহু, অশোক গুড়িয়া, বিজন রায়, অশোক বেরাদের। একেবারে অন্য দিকে ছিলেন সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হিমাংশু দাস, পশ্চিম মেদিনীপুরের নেতা তপন ঘোষ, সুকুর আলি, অনিল পাত্ররা।

বেলা ১১টা নাগাদ আদালতে এসেছিলেন জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর নির্মল জানা। লক্ষ্মণ ও তাঁর অনুগামীদের সঙ্গে তফাত বজায় রেখেই তিনি তপন ঘোষ, সুকুর আলি, অনিল পাত্রদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অবশ্য নির্মলবাবু বলেন, “নন্দীগ্রাম নিখোঁজ মামলায় অভিযুক্ত সকলের ক্ষেত্রেই আইনি লড়াইয়ে পাশে থাকবে দল। এ ক্ষেত্রে দলের নেতা-কর্মী বা দলত্যাগীদের মধ্যে কোনও বিভাজন করা হবে না।”

উল্লেখ্য, নন্দীগ্রাম নিখোঁজ মামলায় অভিযুক্ত ৮৮ জনের মধ্যে লক্ষ্মণ শেঠ, অমিয় সাহু, অশোক গুড়িয়া, তপন ঘোষ, সুকুর আলি-সহ ৭১ জনের বিরুদ্ধে চার্জগঠন নিয়ে শুনানি চলছে জেলা ও দায়রা বিচারকের এজলাসে। সুপ্রিম কোর্ট চার্জগঠন আপাতত স্থগিত রাখার নির্দেশ দেওয়ার প্রেক্ষিতে এ দিন জেলা আদালত অভিযুক্তদের পরবর্তী হাজিরার দিন ধার্য করে ১৯ অগস্ট।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement