সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির আহ্বান জানিয়ে মেদিনীপুরে বাম মিছিল। পুরোভাগে রয়েছেন দীপক সরকার। —নিজস্ব চিত্র।
লোকসভা ভোটের পরে লাল ঝান্ডা নিয়ে এত বড় মিছিল কি দেখেছে মেদিনীপুর? বামেরা মানছে, দেখেনি। তৃণমূল, বিজেপির মতো বাম- বিরোধীরাও মানছে, দেখেনি। যদিও তাদের ব্যাখ্যা অন্য। শহরে সাম্প্রদায়িকতা-বিরোধী মিছিলের ভিড় দেখে স্বভাবতই উজ্জীবিত বাম- শিবির। নেতৃত্বও তৃপ্ত। মিছিলের চেহারাটা ঠিক কেমন ছিল? মাথাটা যখন পোস্ট অফিস রোডের কাছাকাছি। লেজটা তখন গাঁধীমূর্তির পাদদেশে। নেতৃত্বে ছিলেন দীপক সরকার, তরুণ রায়, সন্তোষ রাণা, প্রবোধ পণ্ডার মতো বাম নেতারা।
তাহলে কি জনসমর্থন বাড়ছে?
সিপিএমের জেলা সম্পাদক দীপক সরকার মনে করেন, “মানুষ ভুল বুঝতে শুরু করেছেন। তাই যত আক্রমণই হোক না কেন মানুষ মাথা উঁচু করে দাঁড়াচ্ছেন। আক্রমণকারীরা বিচ্ছিন্ন হচ্ছে। আগামী দিনে আরও বিচ্ছিন্ন হবে।” সিপিআইয়ের জেলা সম্পাদক সন্তোষ রাণার কথায়, “আসলে সময় বদলাচ্ছে। মানুষের মধ্যে সাহসও আসছে। সাম্প্রদায়িকতা- বিরোধী মিছিলের ভিড় এরই ইঙ্গিত দিয়েছে।” কী বলছে বাম- বিরোধীরা? এই ভিড়ের প্রভাব কি আগামী দিনে ভোটবাক্সেও পড়বে? তৃণমূলের শহর সভাপতি আশিস চক্রবর্তীর মতে, “ওদের (বামেদের) তো কিছু কর্মী রয়েছেই। ১৭টা দলের মিছিল। তাই হয়তো লোক হয়েছে। তবে মানুষ ওদের পাশে নেই। ওরা আর ঘুরে দাঁড়াতেও পারবে না!” বিজেপির শহর সভাপতি অরূপ দাসের কথায়, “ভিড় আর ভোটকে এক করে দেখলে ভুল হবে। ১৭টা দল মিছিল করলে একটু লোক তো হবেই। রাজ্যের মানুষ এখন বিজেপিকেই বিকল্প হিসেবে দেখছেন। এখন বিজেপিই এগোবে!”
শনিবার বিকেলে মেদিনীপুর শহরের বিদ্যাসাগর হলের সামনে থেকে বামেদের এই মিছিল বেরোয়। শহরের মিছিলে অবশ্য এসইউসি সামিল হয়নি। তারা পৃথক ভাবে দিনটি পালন করেছে। একদা ‘লালদুর্গ’ বলে পরিচিত পশ্চিম মেদিনীপুরে লোকসভার ভোটে এ বার বামেদের ব্যাপক ভরাডুবি হয়েছে। এই পতনের পর শহরে তেমন বড় মিছিল সংগঠিত করতে পারছিল না বামেরা। কর্মী-সমর্থকদের একাংশ নিস্ক্রিয় হয়ে পড়েন। সাম্প্রদায়িকতা- বিরোধী মিছিলের ছবিটা ছিল একটু অন্য। মিছিলে যুবদের অংশগ্রহনও ছিল চোখে পড়ার মতো। এক বাম নেতার কথায়, “মানুষ এখন বুঝতে পারছেন দু’দিকেই বিপদ। একদিকে রাজ্য সরকার জনবিরোধী নীতি নিয়ে চলছে। অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় সরকারও জনবিরোধী নীতি নিয়ে চলছে।” তাঁর কথায়, “চক্রান্ত- আক্রমণ চলছে। তবে এ ভাবে বামপন্থীদের দমিয়ে রাখা যাবে না। সন্ত্রাস-নৈরাজ্যের প্রতিবাদে এখনই প্রচুর মানুষের পথে নামা প্রয়োজন। কারণ, গণপ্রতিরোধই পারবে জনস্বার্থবিরোধী কাজকে প্রতিহত করতে।”