বুথে যাওয়ার আগে রবিবার ঘাটাল কলেজে ইভিএম পরীক্ষা করে দেখছেন ভোটকর্মীরা। —নিজস্ব চিত্র।
রাজ্যের অন্যতম নজরকাড়া কেন্দ্র ঘাটালে আজ, সোমবার ভোট। তৃণমূলের তারকা প্রার্থী দীপক অধিকারী মানের দেবের সূত্রেই গোড়া থেকে আলোচনার শিরোনামে রয়েছে এই কেন্দ্র। ভোটের ঠিক আগে সেই আলোচনার পারদ আরও চড়েছে। টলিউডের সুপারস্টার দীর্ঘ দিন এলাকায় পড়ে থেকে প্রচার সেরেছেন, তাঁকে দেখতে উপচে পড়েছে ভিড়ও। সেই সঙ্গে প্রশ্ন উঠেছে, প্রচারের এই ভিড় বুথেও দেবের দিকেই ঝুঁকবে তো!
ঘাটালে জয় নিয়ে তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য নিশ্চিত। তবে ব্যবধান নিয়ে ভাবনায় রয়েছেন তাঁরা। কারণ, বাম প্রার্থী সন্তোষ রাণা নিজে সিপিআইয়ের জেলা সম্পাদক। রাজনীতিক হিসেবে এলাকায় পরিচিত মুখ। তাছাড়া, বামেদের নিজস্ব একটা ভোট আছেই। কংগ্রেস প্রার্থী মানস ভুঁইয়াও পোড়খাওয়া রাজনীতিক। ফলে, সবংয়ের দীর্ঘদিনের বিধায়ক ভালই টক্কর দেবেন বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। মোদী-হাওয়ায় বিজেপি প্রার্থী মহম্মদ আলমও শূন্য হাতে ফিরবেন না। ফলে, ভোট কাটাকাটির খেলায় উতরে দেব শেষমেশ জিতলে কত ব্যবধানে জিতবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই। তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার তৃণমূলের সভাপতি দীনেন রায়ের কথায়, “আমরা জিতবই। তবে মার্জিন কত হবে, তা এখনই বলতে পারব না।”
এই কেন্দ্র নজর কেড়েছে আরও একটি বিষয়ে। তৃণমূল-কংগ্রেস-বাম-বিজেপি প্রধান চার প্রতিপক্ষের মধ্যে তিন জনই ভূমিপুত্র। দেবের দেশের বাড়ি ঘাটাল কেন্দ্রের অন্তর্গত কেশপুরে। কংগ্রেস প্রার্থী মানসবাবু সবংয়ের লোক। সেই সবংও ঘাটাল কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে। সিপিআই প্রার্থী সন্তোষ রাণা মেদিনীপুর শহরের বাসিন্দা হলেও তাঁর আদি বাড়ি কিন্তু সবংয়ের দশগ্রামে। সব মিলিয়ে লড়াই এখানে জমজমাট।
প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পরই টলিউডের হার্ট-থ্রব দেব জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পড়েছিল গোটা ঘাটাল। রোড শোয়ের প্রথম দিন তো দেবের হুড খোলা গাড়ি ঘাটাল শহরে দু’কিলোমিটার রাস্তা পেরোতেই তিন ঘন্টা সময় নিয়েছিল। প্রথম প্রথম তারকার টানে উপচে পড়া ভিড় হলেও ক্রমে তা ফিকে হয়েছে। ঘাটাল শহরের এক জনসভায় মাত্র শ’খানেক সমর্থক নিয়ে দেবকে প্রচার সারতে দেখা গিয়েছে। ব্যবধান নিয়ে তৃণমূল নেতৃত্বের কপালে ভাঁজ পড়েছে।
২০০৯ সালের শেষ লোকসভা ভোটে এই কেন্দ্রের সিপিআই প্রার্থী গুরুদাস দাশগুপ্ত দেড় লক্ষ ভোটে হারিয়েছিলেন জোট প্রার্থী নুরে আলম চৌধুরীকে। সে বার ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের অধীন সাতটি বিধানসভার মধ্যে পাঁচটিতে এগিয়েছিল বামেরা। দু’টিতে সিড পেয়েছিল কংগ্রেস-তৃণমূল জোট। ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে অবশ্য পাশা পাল্টায়। পাঁচটি বিধানসভাতেই জেতে কংগ্রেস-তৃণমূল জোট প্রার্থী। দু’টিতে জয় পায় বামেরা। ২০১১ সালে দু’টি আসন পেলেও প্রায় ৪৪ শতাংশ ভোট পেয়েছিল বামেরা। আর জোট-প্রার্থীর ঝুলিতে ছিল ৪৯.১০ শতাংশ ভোট। বিজেপি ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে পেয়েছিল আড়াই শতাংশ ভোট, যা ২০১১-এর বিধানসভা ভোটে হয় চার শতাংশ।
এ বার অবশ্য চারমুখী লড়াই। ফলে, ভোট কাটাকাটি হচ্ছেই। আর তাতেই জয়ের স্বপ্ন দেখছেন বাম প্রার্থী সন্তোষ রাণা। তাঁর কথায়, “আমি আগেও বলেছি, এখনও বলছি আমি জিতবই।” কংগ্রেস প্রার্থী মানস ভুঁইয়াও আশাবাদী। তাঁর কথায়, “আমি তো জিতবই। আমার চিন্তা ব্যবধান কত হবে।” একই সঙ্গে মানসবাবুর অভিযোগ, “ভোট যাতে অবাধ না হয়, সে জন্য তৃণমূল নানা অঙ্ক কষতে শুরু করেছে। বুথ দখল থেকে রিগিং সব পরিকল্পনাই করেছে।” বিজেপি প্রার্থী মহম্দম আলমও প্রত্যয়ী। তাঁর দাবি, “এ বার মোদী হাওয়ায় সব প্রার্থী উড়ে যাবে। আমিই জিতব।”
তৃণমূল অবশ্য এ সবে আমল দিতে নারাজ। জেলা সভাপতি দীনেনবাবুর কথায়, “সব অভিযোগই মিথ্যা। আমরা চাই সব বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকুক। সব দলের এজেন্টরাও যেন থাকেন।”
তৃণমূল শিবিরে কান পাতলে অবশ্য অন্য সুর শোনা যাচ্ছে। দলের সূত্রের খবর, দুই মেদিনীপুর জেলাতেই বিদায়ী সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর একটা ভাল প্রভাব রয়েছে। কিন্তু এ বারের নির্বাচনে শুভেন্দুকে সে ভাবে ব্যবহার না করায়, বিশেষ করে পশ্চিম মেদিনীপুরে তাঁর অনুগামীরা প্রচারে মাথাই ঘামাননি। তার উপর তৃণমূলের দলীয় কোন্দল তো রয়েইছে। ফলে, দেবের মতো তারকার ছটা থাকা সত্ত্বেও ঘাটাল নিয়ে নিশ্চিন্ত নয় তৃণমূল শিবির।