প্রচারে ঘাটাল লোকসভার তৃণমূল প্রার্থী দেব। —নিজস্ব চিত্র।
আগামী সোমবার রাজ্যে শেষ দফার নির্বাচনের দিন। এই দিনেই নির্বাচন হবে পূর্ব মেদিনীপুরের দুই কেন্দ্র কাঁথি ও তমলুকে। এর আগে সব দলই জোর কদমে প্রচার চালিয়েছে। তবে দিন যত এগোচ্ছে, ততই প্রতিপক্ষকে নিজেদের শেষ চমক দিতে চাইছে প্রতিটি দলই। কোনও দল প্রচারে আনছে বিনোদন দুনিয়ার মানুষকে, কেউ বা ভিন রাজ্যের রাজনীতিককে আবার কেউ বা ভরসা খুঁজছেন বুদ্ধিজীবীদের প্রচারে। বৃহস্পতিবার এমনই এক রাজনীতির মিশেলের সাক্ষী রইল কাঁথি। তৃণমূল, সিপিএম ও বিজেপির ভোট প্রচার ঘিরে সারাদিন জমজমাট রইল এই লোকসভা কেন্দ্র।
এ দিন সকালে সিপিএম প্রার্থী তাপস সিংহের সমর্থনে বামপন্থী বুদ্ধিজীবীদের একটি পদযাত্রা কাঁথি শহর পরিক্রমা করে। পদযাত্রায় ছিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রবীন দেব, লেখিকা মন্দাক্রান্তা সেন, চিত্রাভিনেত্রী পাপিয়া অধিকারী, ভারতী মুসুদ্দি প্রমুখ। এছাড়াও মিছিলে হাজির ছিলেন দলের জেলার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক প্রশান্ত প্রধান-সহ দলীয় নেতৃত্বও।
এ দিন দুপুরে অরবিন্দ স্টেডিয়ামে কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী কমলেন্দু পাহাড়ির সমর্থনে একটি জনসভার আয়োজন করা হয়েছিল। এই জনসভার অন্যতম বক্তা ছিলেন মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান। নির্ধারিত সময়ের প্রায় আড়াই ঘন্টা পরে হেলিকপ্টারে চেপে সভাস্থলে এসে পৌঁছান তিনি। ২৩ মিনিটের বক্তব্যে রাজ্য সরকারের তীব্র সমালোচনা করেন তিনি। গত ৩৪ বছর ধরে বাংলাকে সিপিএম ছারখার করার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় এসে সিপিএমের পথই অনুসরণ করছেন বলে অভিযোগ জানান তিনি। নিজের রাজ্য মধ্যপ্রদেশের সঙ্গে বাংলার তুলনা টেনে তাঁর অভিযোগ, এ রাজ্যে সুফলা কৃষিজমি থাকা সত্ত্বেও কৃষকরা কৃষি পণ্যের দাম পান না। এমনকী অনেক কৃষক আত্মহত্যাও করেছেন। অথচ মধ্যপ্রদেশে কৃষকদের বিনা সুদে কৃষিঋণ দেওয়া থেকে যাবতীয় সবিধা দেওয়া হয়।
বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ প্রসঙ্গে বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদীর বক্তব্যে উত্তাল হয়েছে বাংলার রাজনীতি। এ দিন সেই প্রসঙ্গ টেনে শিবরাজের দাবি, বিরোধীরা মোদী বক্তব্যের অন্য মানে করেছেন। তাঁর দাবি, “ বলেন, “অনুপ্রবেশকারী আর শরণার্থী এক জিনিস নয়। শরনার্থী হিসেবে যাঁরা এদেশে এসেছেন তাঁরাও এ দেশে স্বাগত। কিন্তু দেশের নিরাপত্তার প্রশ্নে অনুপ্রবেশকারীদের সঙ্গে কোন সমঝোতা নয়।”
অন্য দিকে এ দিন কাঁথির তৃণমূল প্রার্থী শিশির অধিকারীর সমর্থনে শহরের আউটডোর হাসপাতাল মাঠে জনসভা হয়। এছাড়া একটি বিশাল পদযাত্রা কাঁথি শহর পরিক্রমা করে। বৃষ্টি উপেক্ষা করে এ দিনের পদযাত্রায় হাজির ছিলেন কয়েক হাজার মানুষ। ছিলেন কাঁথির পুরপ্রধান সৌমেন্দু অধিকারী, বিধায়ক বনশ্রী মাইতি, অখিল গিরি, রণজিৎ মণ্ডল ও জেলা সভাধিপতি মধুরিমা মণ্ডল। এগরাতেও এ দিন শিশিরবাবুর সমর্থনে সভা করেন মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী সন্ধ্যা রায়।
অন্য দিকে, আগামী ১২ মে ঘাটাল কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ। তাই চড়া রোদ উপেক্ষা করে বুধবার ও বৃহস্পতিবার ঘাটাল ব্লকের বিভিন্ন প্রান্তে চষে বেড়ালেন ঘাটাল কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী দীপক অধিকারী ওরফে দেব। রোড-শো থেকে জনসভা প্রত্যন্ত গাঁ-গঞ্জে ভোটারদের কাছে পৌঁছে ভোটের আবেদন জানালেন ‘খোকাবাবু’। একাধিক জনসভা ও রোড-শো করেন কংগ্রেস প্রার্থী মানস ভুঁইয়াও। সিপিআই প্রার্থী সন্তোষ রাণার সমর্থনেও এ দিন বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার করা হয়।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ঘাটাল শহর-সহ ব্লকের বিভিন্ন জায়গায় রোড-শো ও ১২টি জনসভা করেন দেব। বুধবার ঘাটাল ব্লকের শ্যামসুন্দরপুর, বরদা চৌকান, ইড়পালা-সহ বিভিন্ন জায়গায় দশটি জনসভা ও খড়ার থেকে রাধানগর পর্যন্ত রোড-শো করেন তারকা প্রার্থী। জনসভায় দেব বলেন, “আপনারা আমায় একবার কাজ করার সুযোগ করে দিন। ঘাটালের নানা সমস্যার সমাধানের জন্য আমি দিল্লিতে গিয়ে লড়াই করব।” দলীয় সূত্রে খবর, বুধবার থেকে ঘাটালে তাঁর জন্য ভাড়া নেওয়া বাড়িতেই রয়েছেন দেব। আগামী সোমবার ভোটের দিন পর্যন্ত দেব ঘাটালেই থাকবেন। তবে এদিনই ছিল ঘাটাল বিধানসভা কেন্দ্রে দেবের শেষ প্রচার।
বুধবার ঘাটাল কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী মানস ভুঁইয়া দাসপুরে মৌসম নূরকে নিয়ে একাধিক জনসভা ও রোড-শো করেন। জনসভায় মৌসম বলেন, “তৃণমূল-সহ সব রাজনৈতিক দলগুলিই আপনাদের ভাঁওতা দিচ্ছে। গোটা রাজ্যে স্বাস্থ্য থেকে সড়ক-সবই কেন্দ্রের টাকায় হয়েছে। অথচ ওই কাজের জন্য নাম কিনছে তৃণমূল।” মানস ভুঁইয়ার কথায়, “আপনদের প্রতি আমার বিশ্বাস রয়েছে। তবু আর্জি, ভোট দেওয়ার সময় চিন্তা করে ভোট দে বেন।”
অন্য দিকে, সিপিআই প্রার্থী সন্তোষ রাণার সমর্থনেও এ দিন বুথে বুথে সভা থেকে বাড়ি বাড়ি প্রচার করা হয়। এছাড়াও এ দিন বামেদের পক্ষ থেকে পথসভা করা হয়। এ দিন বিজেপি-সহ এসইউসি প্রার্থীদের সমর্থনেও প্রচার চলেছে জোরকদমে।