লোকসভা ভোটের মুখে গোষ্ঠী কোন্দলে দাঁড়ি টেনে তৃণমূলের ঐক্যের ছবি দেখা গেল রেলনগরীতে। শনিবার সন্ধ্যায় খড়্গপুর শহরের গোলবাজারের রবীন্দ্র ইনস্টিটিউট সংলগ্ন তৃণমূল কার্যালয়ে নির্বাচনী প্রস্তুতি বৈঠকে একই সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মাথা জেলা কোর কমিটির সদস্য জহরলাল পাল ও শহর তৃণমূল সভাপতি দেবাশিস চৌধুরী। ছিলেন খড়্গপুর সদর বিধানসভার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নারায়ণ পড়িয়া, জেলা কার্যকরী সভাপতি নির্মল ঘোষ, সাধারণ সম্পাদক শশাঙ্ক পাত্র, সদ্য দলে আসা জেলা কোর কমিটির সদস্য হেমা চৌবে, ছাত্র সংগঠনের শহর সভাপতি রাজা সরকার প্রমুখ। খড়্গপুর পুরসভার ১৪ জন তৃণমূল কাউন্সিলর ও প্রয়াত এক কাউন্সিলের স্ত্রী-ও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক থেকে ১৭ জনের নির্বাচনী কমিটি গঠন করা হয়েছে। আজ, সোমবার ওই কমিটিই ইন্দায় বৈঠকে করে পরবর্তী প্রচার কর্মসূচির রূপরেখা তৈরি করবে।
খড়্গপুরে তৃণমূলের বিভাজন শুরু বছর চারেক আগে। ২০১০ সালের পুরসভা নির্বাচনে জিতে বোর্ড গড়ে তৃণমূল। পুরপ্রধান হিসেবে জহরবাবুকে মনোনীত করে দল। সেই থেকেই দেবাশিসের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের অবনতি শুরু। গত বছরের অগস্টে অনাস্থা ভোটে জিতে পুরসভার ক্ষমতা দখল করে কংগ্রেস। এই পরিস্থিতির জন্যও জহর গোষ্ঠী এবং দেবাশির গোষ্ঠী পরস্পরকে দোষারোপ করে। তারপর ক্রমে এই কোন্দল চরমে পৌঁছেছে। নিমপুরা রেল ইয়ার্ডে শ্রমিক সংগঠনের দখল নিয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষও বেধেছে। সম্প্রতি ভোটের প্রচার নিয়েও বিবাদ প্রকাশ্যে আসে। মেদিনীপুর লোকসভায় দলীয় প্রার্থী অভিনেত্রী সন্ধ্যা রায়ের সমর্থনে পৃথক প্রচার চালায় দুই গোষ্ঠী।
খড়্গপুরে বরাবর কংগ্রেসের প্রভাব রয়েছে। তার উপর এ বার লোকসভা ভোটে কংগ্রেস-তৃণমূল জোট হয়নি। মেদিনীপুর কেন্দ্রে সিপিআই প্রার্থী প্রবোধ পান্ডা আবার তিন বারের সাংসদ। ফলে, তৃণমূলকে এখানে লড়াইয়ের মুখে পড়তে হবে বলেই মনে করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে দলের স্বার্থেই বিবদমান দুই নেতাকে কাছাকাছি আনার চেষ্টা চলছে বলে তৃণমূল সূত্রের খবর। দেবাশিসবাবু বলেন, “আমি সকলকে ডেকেছিলাম। সকলেই এসেছিলেন। নিন্দুকেরা গোষ্ঠী কোন্দল নিয়ে অনেক কথাই বলেন। এই বৈঠকেই তাঁদের মুখে ছাই পড়ল।” আর জহরবাবুর বক্তব্য, “আমাকে নারায়ণবাবু ডেকেছিলেন। সকলে এ বার একসঙ্গে প্রচার করব।” খড়্গপুর শহর বিধানসভা এলাকার নির্বাচনী কমিটির চেয়ারম্যান নারায়ণ পড়িয়া জানান, ১৭ জনের নির্বাচনী কমিটিতে জহরলাল পাল, দেবাশিস চৌধুরী-সহ সকলেই রয়েছেন। দলে মতপার্থক্য থাকতে পারে। তবে এই কমিটি নির্বাচনে মিলিত ভাবে প্রচার চালাবে।