দইসাইতে বেঙ্গলি ক্লাবের সর্বজনীন পুজো। সোহম গুহর তোলা ছবি।
জমে উঠেছে ভোট মরসুমন। তারই মাঝে ঐতিহ্য মেনে শুরু হল বাঙালির বারো মাসের তেরো পার্বণের অন্যতম পুজো বাসন্তীপুজো। চৈত্রের ভরা গরম উপেক্ষা করেও এই উৎসবে মেতে উঠেছে কাঁথি মহকুমা এলাকা।
সবর্জনীন ও পারিবারিক ভাবে বাসন্তী পুজোয় পূজিত হন দেবী দুর্গা। খেজুরির দেউলপোতায় গ্রাম্য গোষ্ঠীর পরিচালনায় ও কাঁথি-৩ ব্লকের দইসাই বেঙ্গলি ক্লাবের উদ্যোগে শুরু হয়েছে বাসন্তী পুজো ও গ্রামীণ মেলা। কাঁথি-৩ ব্লকের দইসাইতে প্রায় চল্লিশ বছর ধরে চলে আসছে এই পুজো। বেঙ্গলি ক্লাবের বাসন্তী পুজো ও পুজোকে কেন্দ্র করে চলে গ্রামীণ মেলা। স্থানীয় প্রায় ২৫-৩০টি গ্রামের মানুষ এই সবর্জনীন পুজো ও মেলায় সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকেন বলে ক্লাব সদস্যরা জানান। ক্লাবের সম্পাদক দীপক জানা বলেন, “শারদীয়া দুর্গাপুজোর সময় স্থানীয় কয়েকজন কর্মসূত্রে গ্রামের বাইরে থাকেন। তাঁরা শারদীয় উৎসবের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন না। বছর চল্লিশেক আগে সিদ্ধান্ত হয়, গ্রামে বাসন্তী পুজো করা হবে। এরপরই স্থানীয়দের উদ্যোগে শুরু হয় বাসন্তীপুজো।”
মাঝে কেটে গিয়েছে অনেকগুলো বছর। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কলেবর বেড়েছে পুজোরও। পুজোর বাঁশ, ত্রিপল আর রঙিন কাপড়ের তৈরি মণ্ডপ এখন ডেকরেটার্সদের হাল ফ্যাশনের হাত ধরে বদলেছে তার সাজ। হ্যাজাক আর গ্যাসবাতির জায়গায় স্থান পেয়েছে অতি আধুনিক নয়নাভিরাম আলোকসজ্জা। পুজোকে কেন্দ্র করে বসে গ্রামীণ মেলা। সন্ধ্যা নামতে না নামতেই মেলা জমে উঠে নানা সম্ভারের বিকিকিনিতে। খুদেদের পুতুল থেকে চিরুনি, গৃহস্থালীর নানা সামগ্রী বিক্রি হয়। স্থানীয় গ্রামগুলিতে উৎপন্ন কৃষি সামগ্রী থেকে হস্ত শিল্পের নানা জিনিসপত্রও মেলে। নবমীর দিন গ্রামবাসী ও দর্শনার্থীদের বিতরণ করা হয় খিচুড়ি ভোগ।
আট দিন ব্যাপী পুজো ও মেলা উপলক্ষে উদ্যোক্তারা নানা কর্মসূচি নিয়ে থাকেন। দাতব্য চিকিৎসা ও রক্তদান শিবির ছাড়াও দুঃস্থ মেধাবী পড়ুয়াদের বই বিতরণ করা হয়। রাত পর্যন্ত চলে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, যাত্রাপালা, ৫ কিলোমিটার ম্যারাথন দৌড়-সহ বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। আয়োজন করা হয় সাহিত্য উৎসবের। সেই উৎসবে যোগ দেন স্থানীয় তরুণ থেকে বর্ষীয়ান কবি সাহিত্যিকরাও। কবিতা গল্প পাঠ করেন সাহিত্য অনুরাগীরা। প্রকাশিত হয় বেঙ্গলি ক্লাবের বাসন্তী পুজো উপলক্ষে স্মরণিকা। আর এই পুজো ঘিরে সপ্তাহব্যাপী উৎসবে মেতে ওঠেন কাঁথির বাসিন্দারা।