সংশোধনাগারের বন্দিরা যাতে সমাজের মূল স্রোতে ফিরতে পারে, তার জন্য নানা কর্মসূচি নিয়েছে কারা দফতর। ইতিমধ্যে রাজ্যের বিভিন্ন জেলা সংশোধনাগারে বন্দিদের জন্য বিনোদন-সহ নানা কর্মসূচি চলছে। পিছিয়ে নেই পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল সংশোধনাগারও। অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি এই সংশোধনাগারে বন্দিদের জন্য চালু হয়েছে গ্রন্থাগার। ঘাটাল সংশোধনাগারের নিয়ামক পুলককুমার মণ্ডল বলেন, “জেলা পরিষদ এবং কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার আর্থিক সহায়তায় এই গ্রন্থাগার চালু হয়েছে। সংশোধনাগারের বন্দিরা যাতে পড়াশোনায় আরও বেশি আগ্রহী হন ও নিজেদের ইচ্ছা মতো বই পড়তে তাই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”
ঘাটাল জেল সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি ঘাটাল সংশোধনাগারের দু’টি কক্ষে এই গ্রন্থাগার চালু হয়েছে। কয়েকদিন পর তৈরি করা হবে গ্রন্থাগারের ভবনও। প্রায় সাতশো বই রয়েছে গ্রন্থাগারটিতে। তবে এই সংখ্যা আরও বাড়বে বলেই জানা গিয়েছে। আপাতত রবীন্দ্রনাথ, শরত্চন্দ্র, বঙ্কিমচন্দ্র থেকে আধুনিক লেখক, যেমন-জয় গোস্বামীর কবিতা, সঙ্গীতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস, সুচিত্র ভট্টাচার্যের ছোট গল্পের বইও রয়েছে। এছাড়াও কিশোর সাহিত্য, রম্য রচনা, গোয়েন্দা গল্পও মজুত রয়েছে এই গ্রন্থাগারে। রয়েছে সাধারণ জ্ঞানের বই, এমনকী সংবাদপত্রও। এই সংশোধনারে প্রায় ৬০জন বন্দি রয়েছেন। তবে সংখ্যাটা বাড়ে-কমে। জানা গিয়েছে, অনেক বন্দিই নিজেদের পছন্দের বই টেনে নিয়ে পড়তে বসে যাচ্ছেন, আবার যাঁরা পড়তে পারেন না, তাঁদের অনেককে পড়ে শোনাচ্ছেন অপর কোনও বন্দি। অনেকে আবার পড়ার নেশায় শুধু গ্রন্থাগারে নয়, বই নিয়ে যাচ্ছেন ঘরেও। কেন হঠাত্ এমন উদ্যোগ? পুলকবাবু জানান, বই পড়ার অভ্যাসের মাধ্যমে যাতে বন্দিদের অপরাধপ্রবণতা দূর হয় এবং তাঁরা যাতে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন, তার জন্যই এমন উদ্যোগ।”
ঘাটাল সংশোধনাগারে বছর দেড়েক আগে চালু হয়েছিল বন্দিদের জন্য অঙ্কন প্রশিক্ষণের। সংশোধনাগারের উদ্যোগে ঘাটাল শহরেরই যুবক তথা কলকাতা আর্ট কলেজের ছাত্র মিলন ক্যুইলা নিখরচায় এখনও এই প্রশিক্ষন দিচ্ছেন। সেখানে ‘ছাত্র-ছাত্রীর’ অভাবও নেই। সূত্রের খবর, অনেকেই প্রশিক্ষিত হওয়ার পর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে নিজের আঁকার স্কুলও খুলেছেন। পুলকবাবুর কথায়, “বন্দিরের স্বনির্ভর করার উদ্দেশে এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করেছিলাম। সেই প্রচেষ্টা সার্থক হয়েছে।”
ঘাটাল সংশোধনাগার সূত্রের খবর, দ্রুত এখানে চালু হতে চলেছে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। আপাতত অপেক্ষা তারই।