নন্দীগ্রামে নির্বাচনী জনসভায় কাঁথি ও তমলুকের দুই প্রার্থী শিশির অধিকারী ও শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস
নির্বাচনী প্রচারে নন্দীগ্রামে এসে ফের সিবিআইকে নিশানা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নন্দীগ্রামবাসীকে সিবিআই বিচার দিতে পারেনি অভিযোগ করে শনিবার মমতা বলেন, “নন্দীগ্রামের মানুষ আজও বিচার পাননি। সিবিআই তদন্ত করে যদি বিচার দিতে না পারে তবে বিষয়টি আমরাই দেখব। যেহেতু একজন তদন্ত করছে, তাই আমরা সমান্তরাল তদন্ত করতে পারি না।”
প্রসঙ্গক্রমে সিবিআইয়ের দায়িত্বে থাকা নেতাই-কাণ্ডে সিআইডির সাফল্যও তুলে ধরেন মমতা।
পূর্ব মেদিনীপুরের দুই কেন্দ্র তমলুক এবং কাঁথির তৃণমূল প্রার্থী শুভেন্দু এবং শিশির অধিকারীর সমর্থনে এ দিন দুপুরে নন্দীগ্রাম বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন মাঠে ছিল সভার আয়োজন। দুই প্রার্থী, জেলা নেতৃত্ব ছাড়াও ছিলেন কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। বক্তব্য রাখতে উঠে ২০০৭ সালের ১৪ মার্চ নন্দীগ্রামে পুলিশের গুলিতে ১৪ জন নিহত হওয়ার প্রসঙ্গ টেনে আনেন মমতা। ওই ঘটনায় সিবিআই তদন্তকে কটাক্ষ করার পাশাপাশি তিনি জানান, নন্দীগ্রাম-পর্বে যাঁদের মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছিল, সেই সব মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে। নন্দীগ্রামে তাঁর সরকারের আমলে উন্নয়নের খতিয়ানও দেন মুখ্যমন্ত্রী। স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিমায় কংগ্রেস-তৃণমূল-বিজেপিকে আক্রমণ করেন। তবে মমতার বক্তব্যের বেশিরভাগটা জুড়েই ছিল সিবিআইয়ের প্রতি কটাক্ষ। আর এ প্রসঙ্গে নন্দীগ্রামের পাশাপাশি সিঙ্গুরে তাপসী মালিক খুন এবং রবীন্দ্রনাথের নোবেল চুরির ঘটনায় সিবিআই তদন্তের প্রসঙ্গও টেনে আনেন মমতা।
তৃণমূল নেত্রীর কথায়, “সিঙ্গুর মামলায় সিবিআই চুপ করে বসেছিল সিপিএমের সঙ্গে সমঝোতা করে। তাপসী মালিক ধর্ষণ হল, খুন হল। যাঁকে ধরা হয়েছিল তিনি ছাড় পেলেন। সিপিএম বলল আমাদের সম্পদ। রবীন্দ্রনাথের নোবেল প্রাইজও ওরা ফিরিয়ে দিতে পারেনি।” উল্লেখ্য, তাপসী মালিক খুনে গ্রেফতার হয়েছিলেন সিঙ্গুরের সিপিএম নেতা সুহৃদ দত্ত এবং দলীয় কর্মী দেবু মালিক। দু’জনেই পরে জামিন পান।
সাত বছর আগের ১৪ মার্চ নন্দীগ্রামে গুলিচালনার ঘটনা রাজ্য রাজনীতির গতিপ্রকৃতি পাল্টে দিয়েছিল। ওই ঘটনার পরেই নন্দীগ্রামের জেলা পূর্ব মেদিনীপুর তো বটেই, গোটা রাজ্যে জমি আলগা হতে শুরু করেছিল বামেদের। এ বার লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে অবশ্য সিপিএম অভিযোগ করছে, মাওবাদী, তৃণমূল, বিজেপি, নকশাল, জামাত-সহ বামবিরোধী সব শক্তি জোটবদ্ধ হয়ে নন্দীগ্রাম-কাণ্ড ঘটিয়েছিল। আর এ ক্ষেত্রে সিপিএমের হাতিয়ার, নন্দীগ্রাম-কাণ্ডে সিবিআইয়ের পেশ করা চার্জশিট। কারণ, ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির ১৬৬ জনের বিরুদ্ধেই হলদিয়া মহকুমা আদালতে চার্জশিট পেশ করেছে সিবিআই। তাছাড়া, সারদা-কাণ্ডে সিবিআই চেয়েও সরব হয়েছে বিরোধীরা। এ সবের জবাব দিতেই তৃণমূল নেত্রী নন্দীগ্রামের সভায় সিবিআইকে বিঁধেছেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তবে এ দিনের সভায় মমতা সারদা প্রসঙ্গ তোলেননি।
দীর্ঘ দু’বছর পরে নন্দীগ্রামে সভা করলেন মমতা। আর দলীয় সভা ধরলে ব্যবধানটা তিন বছরের। কারণ, ২০১২ সালের ১৪ মার্চ নন্দীগ্রাম কলেজ মাঠে সর্বশেষ সভাটি ছিল মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক জনসভা। তার আগে নন্দীগ্রামে তৃণমূল নেত্রী শেষ দলীয় সভা করেছিলেন ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে। তাই এ দিনের সভায় উপচে পড়া ভিড় হওয়ার প্রত্যাশা ছিল। নন্দীগ্রাম বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া বিশাল মাঠটার যে অংশটা ঘেরা হয়েছিল, তাতে প্রায় হাজার চল্লিশ লোক ধরে। কিন্তু পুলিশ সূত্রের খবর, জমায়েত হয়েছিল হাজার তিরিশেকের।
তৃণমূল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সভা শুরু হয়েছিল বেলা ১১টায়। মমতা হেলিকপ্টারে পৌঁছন দুপুর দু’টোয়। ফলে, সকাল থেকে অপেক্ষায় থাকা অনেকেরই ধৈর্যের বাঁধ ভেঙেছিল। তাই তৃণমূল নেত্রীর বক্তব্যের কিছুটা শুনেই অনেকে বেরিয়ে যান। তাছাড়া, তৃণমূলের দাবি, এ দিনের সভায় গোটা জেলা থেকে লোক আনা হয়নি। নন্দীগ্রাম বিধানসভা, খেজুরির একাংশ এবং চণ্ডীপুরের একাংশ থেকে দলীয় কর্মী-সমর্থকেরা এসেছিলেন। সেই অনুপাতে যথেষ্ট লোক হয়েছিল। শুভেন্দুবাবু বলেন, “সব মিলিয়ে প্রায় পঞ্চাশ হাজার লোকের জমায়েত হয়েছিল। আমরা যা লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছিলাম, তার থেকেও বেশি ভিড় হয়েছে। সভা সফল। আমি খুশি।”