ফলন কম হওয়ার আশঙ্কা আগে থেকেই ছিল। আবহাওয়া অনুকূল না থাকায় এ বছর পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় আলুর ধসা রোগের প্রকোপও দেখা দেয়। ফলে অন্য বারের তুলনায় চলতি বছরে আলুর ফলন কমার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলন কম হওয়ায় আলুর দাম বেড়েছে। ফলে আলুর বেশি দাম পাওয়ায় খুশি জেলার চাষিরা।
জেলা কৃষি দফতর সূত্রে খবর, ২০১২ সালে জেলায় ৭৫ হাজার ৩৩৬ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ হয়। আলুর ফলন হয়েছিল ১৮ লক্ষ ৪৬ হাজার ১৪২ টন। ২০১৩-১৪ বছরে ৭৩ হাজার ৯৬৫ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ হয়েছে। যদিও মাঠ থেকে আলু তোলার কাজ এখনও চলছে। তাই ফলনের পরিমাণ এখনও জানা যায়নি। তবে ২০০৯ সালে ধসা রোগের কারণে আলুর ফলন কমে যায়। চলতি বছরেও আলুর ফলন কম হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ইতিমধ্যেই জেলায় প্রায় ৭০ শতাংশ আলু উঠে গিয়েছে। আবহাওয়া প্রতিকূল থাকায় এবার জেলায় বিঘা প্রতি আলুর ফলন কম হচ্ছে। দফতরের সহ কৃষি অধিকর্তা (তথ্য) দুলাল দাস অধিকারী বলেন, “জেলার অনেক ব্লকে এখনও আলু তোলার কাজ চলছে। ফলে চলতি বছরে জেলার মোট আলু উত্পাদনের পরিমাণ এখনই বলা যাবে না। তবে ধসা রোগ-সহ নানা কারণে অন্য বছরের তুলনায় ফলন কম হওয়ায় আশঙ্কা রয়েছেই।”
গড়বেতার আলু চাষি সুকান্ত ঘোষ, অরূপ মণ্ডলেরা বলেন, “এবার আমরা ৮-১০ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছিলাম। ধসা রোগের জন্য অন্য বছরের তুলনায় আলুর ফলনও কম হয়েছে।” তাঁদের দাবি, “মাঠ থেকেই ৭৫০-৮০০ টাকা কুইন্টাল দরে আমরা আলু বেচে দিচ্ছি। ফলে বিঘা প্রতি এখনই দশ-পনেরো হাজার টাকা লাভ পাচ্ছি।” একইভাবে, চন্দ্রকোনার আলু চাষি দেবাশিস জানা, প্রকাশ হাজরারা বলেন, “এ বারে আলুর ফলন আট-দশ শতাংশ কম হচ্ছে। তবে দাম ভাল থাকায় পুষিয়ে যাচ্ছে।” আর জেলা আলু ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষে বরেণ মণ্ডল বলেন, “আমরা এবারে ভালই লাভ পাচ্ছি। মাঠ থেকে চাষিদের কাছ থেকে গড়ে ৮০০ টাকা কুইন্টাল দরে আলু বিক্রি হচ্ছে। সেই আলু ভিন্ রাজ্যে পাঠিয়ে ভাল লাভ হচ্ছে। বেশি দাম পাওয়ার আশায় আলু হিমঘরেও সঞ্চয়ে রাখছি।”
কৃষি দফতর সূত্রে খবর, চাষের জন্য আবহাওয়া-সহ সব কিছু অনুকূল থাকলে গড়ে ৪৫-৫০ কুইন্টাল আলুর ফলন হয়। তবে এবার গড়ে বিঘা প্রতি দশ শতাংশ আলুর ফলন কম হচ্ছে। কোথাও কোথাও ফলনের পরিমাণ আরও কম। এখনও পর্যন্ত জেলায় বিঘা প্রতি আলুর গড় ফলনের পরিমাণ ৩৫-৩৮ কুইন্টাল । কিছু জমিতে ধসা রোগের কারণে আলুর ফলন খুবই কম হয়েছে। জেলায় বর্তমানে বছরে গড়ে আলুর চাহিদা আড়াই লক্ষ টন। জেলার উত্পাদিত আলুর একটা অংশ ভিন্ রাজ্যেও চলে যায়। জেলায় আলুর উত্পাদনের তুলনায় চাহিদা কম হওয়ায় নিয়মিত নজরদারির মাধ্যমে বাজারে আলুর দাম বেধে রাখা সম্ভব। অন্য সময় এই সময় বাজারে আলুর দাম কম থাকে। তবে এখনই জেলার বিভিন্ন বাজারে ১০-১২ টাকা কিলোগ্রাম দরে আলু বিক্রি হচ্ছে। কৃষি বিপণন দফতরের জেলা আধিকারিক ব্রজেন সরকার বলেন, “সরকারিভাবে আলুর নির্দিষ্ট কোনও বাজার দর এখনও ঠিক হয়নি। তবে জেলায় গড়ে কুইন্ট্যাল প্রতি আলুর মূল্য ৭০০-৮০০ টাকা। তবে খোলা বাজারে আলুর দাম যাতে না বাড়ে সে জন্য আমরা নিয়মিত নজরদারি চালাচ্ছি।”