পশ্চিম মেদিনীপুর

পদ ছাড়ছেন ওয়েবকুপার জেলা সভাপতি

শাসকদলের শিক্ষক সংগঠনের জেলা সভাপতি হয়েও কোনও কাজ করতে পারছেন না। রাজ্য নেতৃত্বকে বিস্তারিত জানিয়েও ফল হয়নি। এই পরিস্থিতিতে ইস্তফার সিদ্ধান্ত নিলেন ওয়েবকুপার পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা সভাপতি তুহিনকান্তি দাস। ইতিমধ্যেই তিনি ইস্তফার কথা এসএমএস মারফত সংগঠনের রাজ্য সাধারণ সম্পাদককে জানিয়ে দিয়েছেন। বেলদা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক তুহিনকান্তিবাবু এক বছরেরও বেশি সময় এই পদে রয়েছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:৫৩
Share:

তুহিনকান্তি দাস। —নিজস্ব চিত্র।

শাসকদলের শিক্ষক সংগঠনের জেলা সভাপতি হয়েও কোনও কাজ করতে পারছেন না। রাজ্য নেতৃত্বকে বিস্তারিত জানিয়েও ফল হয়নি। এই পরিস্থিতিতে ইস্তফার সিদ্ধান্ত নিলেন ওয়েবকুপার পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা সভাপতি তুহিনকান্তি দাস। ইতিমধ্যেই তিনি ইস্তফার কথা এসএমএস মারফত সংগঠনের রাজ্য সাধারণ সম্পাদককে জানিয়ে দিয়েছেন। বেলদা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক তুহিনকান্তিবাবু এক বছরেরও বেশি সময় এই পদে রয়েছেন।

Advertisement

হঠাত্‌ ইস্তফার ভাবনা কেন? তা-ও এসএমএসে? তুহিনবাবুর কথায়, “সংগঠনের পদে রয়েছি, অথচ কোনও কাজই করতে পারছি না। তা হলে থেকে কী লাভ! তাই আপাতত এসএমএস পাঠিয়েছি। প্রয়োজনে লিখিত ভাবে জানাব।” সংগঠনের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক গোবিন্দ সাধুখাঁ বলেন, “এ ব্যাপারে ফোনে কথা হয়েছে। লিখিত ভাবে জানানোর পরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”

শাসকদলের শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুপা থেকে আগেই পদত্যাগ করেছিলেন বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটের আহ্বায়ক ইন্দ্রাণী দত্ত চৌধুরী। তুহিনবাবুর ইস্তফার সিদ্ধান্ত চাউর হতে জেলায় শোরগোল পড়েছে। কেন একটি জেলা থেকে বারবার সংগঠনের নেতা-নেত্রীরা পদত্যাগ করছেন, উঠছে সে প্রশ্নও। ইতিমধ্যেই ইন্দ্রাণীদেবী বিজেপিতে গিয়েছেন। ফলে তাঁর ঘনিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক যে সে পথেই এগোবেন তা বলাবাহুল্য। তুহিনকান্তিবাবু কোন পথে এগোবেন এখনই সে সিদ্ধান্ত নেননি। ইন্দ্রাণী দত্ত চৌধুরী সংগঠনের পদ থেকে সরে যাওয়ার পরেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগঠন ‘ভুটা’তে সব আসনে প্রার্থী পর্যন্ত দিতে পারেনি তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠন। তার উপরে তুহিনকান্তিবাবুর ইস্তফা জেলার বিভিন্ন কলেজের শিক্ষক সংগঠনকেও ধাক্কা দেবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

Advertisement

পরপর এমন ঘটনা কী সংগঠনকে দুর্বল করবে না? সদুত্তর এড়িয়ে সংগঠনের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক বলেন, “প্রত্যেকেরই গণতান্ত্রিক অধিকার রয়েছে। কেউ সংগঠনের পদে না থাকতে চাইলে কী করতে পারি।”

তুহিনকান্তিবাবুর ইস্তফার পিছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। সংগঠন সূত্রে জানা গিয়েছে, শিক্ষকদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আন্দোলনের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু অনৈতিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন তিনি। যা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিরোধ শুরু হয়। নতুন পাঠ্যক্রম তৈরি থেকে শুরু করে কলেজ পরিচালন সমিতি তৈরির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোনীত সদস্য পাঠানো সব ক্ষেত্রেই দ্রুততার সঙ্গে কাজ করার পক্ষপাতী ছিলেন তিনি। ওই সূত্রটি জানাচ্ছে, পরিচালন সমিতিতে কোন শিক্ষকদের মনোনীত করা উচিত, তা জানিয়ে একটি তালিকাও তৈরি করেন তিনি। তাকে গুরুত্ব দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয়। শাসকদলের শিক্ষক সংগঠনের জেলা সভাপতি হিসেবে তা মানতে পারেননি তুহিনকান্তিবাবু। এ ব্যাপারে সংগঠনকে জানিয়েও কাজ হয়নি। তখনই ইস্তফা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি, দাবি সংগঠনের ওই সূত্রের।

বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ শিক্ষকদের সংগঠনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব থেকে মুক্ত নয়। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগঠনে এখনও বামপন্থীরাই অনেকটাই এগিয়ে। বিদ্যাসাগর ইউনিভার্সিটি টিচার অ্যাসোসিয়েশন বা ভুটার নির্বাচনে তার প্রমাণ মিলেছে। তবে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অবশ্য বিজেপি এখনও তেমন দাঁত বাসাতে পারেনি। ইন্দ্রাণী দত্ত চৌধুরীকে দিয়ে জেলায় সেই কাজই শুরু করতে চলেছে বিজেপি।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ইন্দ্রাণীদেবীর সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকলেই তাঁকে বিরোধী বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে। এ ভাবেই অন্যদেরও বিজেপি-র দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে বলেই সংগঠনের এক অংশের সদস্যদের দাবি। ওয়েবকুপার এক সদস্যের কথায়, “জেলায় ওয়েবকুপাতে এক শ্রেণির শিক্ষকেরা ঢুকে গিয়েছেন যাঁরা বাম জমানাতেও বামপন্থী সেজে সুবিধে ভোগ করেছিলেন। তাঁদের চক্রান্তের জন্য সংগঠন এ ভাবে ভাঙতে শুরু করেছে। রাজ্য সংগঠন এ ব্যাপারে উদ্যোগী না হলে তাসের ঘরের মতো ভাঙবে ওয়েবকুপা। তার জায়গা নেবে বিজেপি।”

এখন দেখার, আগামী দিনে কোন পথে হাঁটে ওয়েবকুপা, বিজেপি-ই বা কতটা সুবিধে করতে পারে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement