গোষ্ঠীকোন্দলে দীর্ঘ তিন মাস পঞ্চায়েত অফিসে অনুপস্থিত প্রধান ও উপ-প্রধান। ফলে খেজুরি-১ ব্লকের তৃণমূল পরিচালিত কলাগেছিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতে দৈনন্দিন পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এলাকাবাসীরা। ছেলের জন্মের শংসাপত্র নিতে বারবার পঞ্চায়েত অফিসে এসেও ফিরে যেতে হচ্ছে কটারি গ্রামের বাসিন্দা শেখ হাফিজুলকে। তাঁর বক্তব্য, “পঞ্চায়েতে প্রধান, উপ-প্রধান না থাকায় কবে জন্মের শংসাপত্র পাব জানিনা।”
সোমবার জেলা পরিষদের স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম দাস পঞ্চায়েত অফিসে গেলে তাঁকে ঘিরে কয়েকজন বিক্ষোভ দেখান। পঞ্চায়েতের সামনে মোতায়েন পুলিশ বাহিনী তাঁকে বের করে নিয়ে যায়। পার্থপ্রতিমবাবুর অভিযোগ, “ইচ্ছে করেই তাঁকে হেনস্থা করা হয়েছে।” তিনি বলেন, “বিষয়টি তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীকে জানিয়েছি। সুব্রতবাবু বিষয়টি পুলিশ ও জেলা তৃণমূল সভাপতি শিশির অধিকারীকে জানাতে বলেছেন।” যদিও শিশিরবাবু বলেন, “ঘটনার কথা জানা নেই। পার্থপ্রতিমও আমাকে এ বিষয়ে কিছু বলেনি।”
যদিও কলাগেছিয়া পঞ্চায়েতে তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দলের ঘটনা নতুন নয়। পঞ্চায়েত প্রধান ও উপ-প্রধান জেলা পরিষদের স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম দাসের অনুগামী হিসেবে পরিচিত। অন্য দিকে, পঞ্চায়েত সদস্য পরমেশ্বর মণ্ডল খেজুরির বিধায়ক রণজিত্ মণ্ডলের গোষ্ঠীর অনুগামী হিসেবেই পরিচিত। পঞ্চায়েতের ক্ষমতা দখলকে কেন্দ্র করে কয়েকদিন আগে পার্থপ্রতিম দাসের গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে। তারপরে তলবি সভায় কোরাম না হওয়ায় প্রধানের বিরুদ্ধে পরমেশ্বর গোষ্ঠীর আনা অনাস্থা প্রস্তাব বাতিল হয়ে যায়।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, পঞ্চায়েতে দীর্ঘ তিন মাস ধরে প্রধান ও উপ-প্রধান অনুপস্থিত থাকায় জন্ম-মৃত্যুর শংসাপত্র, গৃহনির্মাণের অনুমোদন, কন্যাশ্রী, শিক্ষাশ্রীর মতো প্রকল্পের পরিষেবা নিতে এসেও ফিরে যেতে হচ্ছে। পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান শেখ ইয়াসিনের অভিযোগ, “পঞ্চায়েত সদস্য পরমেশ্বর মণ্ডল ও তাঁর নেতৃত্বে কিছু দুষ্কৃতী পঞ্চায়েত অফিসে যেতে বাধা দিচ্ছেন।” তাঁর দাবি, প্রধানের বিরুদ্ধে পরমেশ্বর মণ্ডলের গোষ্ঠীর আনা অনাস্থা প্রস্তাব বাতিল হওয়ার পর থেকে ওরা আরও ভয়ানক হয়ে উঠেছে। নিরাপত্তার অভাবে ও গণ্ডগোলের আশঙ্কায় পঞ্চায়েত অফিসে যেতে পারছি না।
প্রধান বিপ্লববহ্নি দাসেরও অভিযোগ, “প্রথম দিকে পঞ্চায়েত অফিস থেকে বাড়িতে ফাইল এনে কাজ করার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু বিরোধী গোষ্ঠীর লোকেরা পঞ্চায়েত কর্মীদের ভয় দেখানোয় তাঁরাও ফাইল আনতে ভয় পাচ্ছেন। ফলে এই মুহূর্তে পঞ্চায়েতের কাজ বন্ধ হয়ে রয়েছে।” প্রধানের অভিযোগ, নিরাপত্তার অভাবের কথা লিখিতভাবে ব্লকের বিডিও ও পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি-সহ প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে জানিয়েছি। কোনও কাজ হয়নি। যদিও এ বিষয়ে বিডিও সৌম্যজিত্ দত্ত কোনও মন্তব্য করতে চাননি। পঞ্চায়েতে অচলাবস্থা নিয়ে তাঁর বক্তব্য, “এ ব্যাপারে যা বলার জেলা প্রশাসনকে লিখিতভাবে জানিয়েছি।” যদিও প্রধান ও উপ-প্রধানের অভিযোগ অস্বীকার করেন পরমেশ্বর মণ্ডল। তাঁর পাল্টা অভিযোগ, “কেউ তাঁদের বাধা দেয়নি। ওরা নিজেরাই পঞ্চায়েত অফিসে আসেননি। এক বছর ধরে ক্ষমতাসীন থেকেও তাঁরা পঞ্চায়েতের কোনও উন্নয়নমূলক কাজই করতে পারেনি।”
অফিস ভাঙচুর। এসএফআই-এর মহিষাদল জোনাল কমিটির অফিস ভাঙচুর করে দখল নেওয়ার অভিযোগ উঠল। মহিষাদল জোনাল কমিটির সম্পাদক সুরজিত্ সাঁতরা মহিষাদল থানায় সোমবার অভিযোগ দায়ের করেছেন। নন্দকুমারের শেক তারিকুল আলম নামে এক ব্যক্তির দাবি, ওই জমি তাঁর। তারিকুলের কথায়, “স্থানীয় এক ব্যক্তির কাছ থেকে ওই রায়তি জমি কিনেছি। ওদের (এসএফআই এবং সিপিএম) নেতাদের জমির বৈধ কাগজপত্র দেখিয়ে অফিস সরিয়ে নিতে বলেছিলাম। ওরা কথা না শোনায় এ দিন জমির দখল নিয়েছি আমি।” মহিষাদলের বিএলআরও আধিকারিক সুমন ঘোষ বলেন, “জমিটি কার খোঁজ নিতে হবে।”