পূর্বে এ বার ভাঙনের ইঙ্গিত সিপিআইয়েও

সিপিএমের পর এবার সিপিআই। লক্ষ্মণ শেঠের স্ত্রী তমালিকা পণ্ডাশেঠ-সহ তাঁর অনুগামী পূর্ব মেদিনীপুরের সিপিএম জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর ছয় সদস্য গত ২৬ জুলাই প্রকাশ্যে দল ছাড়তে চেয়ে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছিলেন দলের জেলা সম্পাদককে। দলত্যাগীরা ইতিমধ্যে লক্ষ্মণ শেঠের নেতৃত্বে ‘ভারত নির্মাণ মঞ্চ’ নামে নতুন সংগঠনও গড়েছেন। সিপিএম জেলা নেতৃত্বের ভাঙনের এই রেশ কাটার আগেই আবার ভাঙনের ইঙ্গিত পূর্ব মেদিনীপুরে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

তমলুক শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৪ ০০:৫১
Share:

সিপিএমের পর এবার সিপিআই।

Advertisement

লক্ষ্মণ শেঠের স্ত্রী তমালিকা পণ্ডাশেঠ-সহ তাঁর অনুগামী পূর্ব মেদিনীপুরের সিপিএম জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর ছয় সদস্য গত ২৬ জুলাই প্রকাশ্যে দল ছাড়তে চেয়ে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছিলেন দলের জেলা সম্পাদককে। দলত্যাগীরা ইতিমধ্যে লক্ষ্মণ শেঠের নেতৃত্বে ‘ভারত নির্মাণ মঞ্চ’ নামে নতুন সংগঠনও গড়েছেন। সিপিএম জেলা নেতৃত্বের ভাঙনের এই রেশ কাটার আগেই আবার ভাঙনের ইঙ্গিত পূর্ব মেদিনীপুরে। তবে এ বার সিপিআই। জানা গিয়েছে, পাঁশকুড়ায় সিপিআইয়ের জোনাল কমিটির সম্পাদক তথা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অমল দে জেলা সম্পাদককে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় সিপিআই বরাবরই শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। তাই এ বার সিপিআইয়ের ভাঙনের এমন ইঙ্গিতে আলোড়ন পড়েছে জেলা রাজনৈতিক মহলে।

কলেজ-ছাত্র থাকাকালীন সিপিআই-এর ছাত্র সংগঠন এসএফআইয়ের হাত ধরে সিপিআই দলে যোগ দিয়েছিলেন অমলবাবু। পরে দলের যুব সংগঠনের নেতৃত্বে ছিলেন। পরবর্তী সময়ে পাঁশকুড়ার সিপিআই লোকাল কমিটি ও জোনাল কমিটির সম্পাদক হন তিনি। ধীরে ধীরে দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীতেও স্থান পান। অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার সময় থেকেই রাজনৈতিকভাবে বামফ্রন্টের শরিক দল হিসেবে পাঁশকুড়া বিধানসভা আসন ও লোকসভা (বর্তমানে ঘাটাল লোকসভা) আসনটি সিপিআইয়ের জন্য বরাদ্দ। দীর্ঘদিন ধরে ওই দুই আসনে জিতে এসেছেন সিপিআই প্রার্থীরা। কিন্তু ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে পাঁশকুড়া বিধানসভায় তৃণমূলের কাছে হেরে যান সিপিআই প্রার্থী। আর সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনেও হার হয়েছে সিপিআইয়ের। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় দলের ১৬ টি জোনাল কমিটির মধ্যে পাঁশকুড়া অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জোনাল এলাকা হিসেবে পরিচিত। তাই এই পরিস্থিতিতে দীর্ঘ প্রায় পঁয়ত্রিশ বছর ধরে দলের সঙ্গে যুক্ত অমলবাবুর দলত্যাগ নিঃসন্দেহে বড়সড় ধাক্কা।

Advertisement

কিন্তু কেন এমন সিদ্ধান্ত?

জানা গিয়েছে, রাজ্য ও জেলার শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে নির্বাচনে পরাজয়ের দায় এড়ানো-সহ একগুচ্ছ অভিযোগ তুলে অমলবাবু গত শনিবার দল ছাড়তে চেয়ে সিপিআই জেলা সম্পাদককে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন। তবে প্রাক্তন সিপিএম নেতাদের পথে হেঁটে তিনিও জেলা ও রাজ্য নেতৃত্বের বিরুদ্ধে কোনও ব্যক্তিগত আক্রমণ করেননি। সোমবার অমলবাবু বলেন, “সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে দলের পরাজয় সত্ত্বেও রাজ্য ও জেলা নেতৃত্ব দায় স্বীকার না করে নিজেদের মত সাফাই দিচ্ছেন। দলের নেতৃত্ব নতুন প্রজন্মের কাউকে স্থান না দিয়ে ছাত্র ও যুব নেতৃত্বকে চরম বঞ্চনা করে চলেছেন। এমন দিশাহীন নেতৃত্বে থাকা দল ছাড়তে বাধ্য হচ্ছি।” সঙ্গে সঙ্গে লক্ষ্মণ শেঠের ‘ভারত নির্মাণ মঞ্চে’-যোগ দেওয়ার জল্পনা উড়িয়ে দিয়ে তাঁর বক্তব্য, “আপাতত অন্য রাজনৈতিক দলে বা মঞ্চে যোগ দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিইনি।”

অমলবাবুর পদত্যাগপত্র পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন সিপিআই-এর পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন ঘড়াও। তিনি বলেন, “দল ছাড়তে চেয়ে অমলবাবুর দেওয়া চিঠি আমি পেয়েছি। কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি জানান নি। আগামী বুধবার তমলুকে দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেখানে এবিষয়ে আলোচনা হবে।”

আগামী ৭ অগস্ট সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকের কথা। ওই দিনইসুতাহাটায় সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রবীন দেবের সভার কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। সিপিএমের দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, লক্ষ্মণ শেঠ-সহ তাঁর অনুগামীদের ‘ভারত নির্মাণ মঞ্চ’ এর রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে একাধিক সভার কর্মসূচি রয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement