ঘাটাল এসডিও অফিসের সামনে তৃণমূলের পতাকা। —নিজস্ব চিত্র।
ভোটের দিন ঘোষণার পর থেকেই বিভিন্ন ব্লকে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন নির্বাচনী বিধির নজরদারির দায়িত্বে থাকা (এমসিসি) সদস্যরা। সরকারি সম্পত্তিতে ভোটের প্রচার দেখলেই তা ক্যামেরাবন্দী করে রাখছেন তাঁরা। নির্বাচনী বিধি ভঙ্গের ক্ষেত্রে কম বেশি ডান-বাম সব পক্ষের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠছে। তবে হাবড়া কাণ্ডের পরে এমসিসি দলের সদস্যরা বাড়তি সতর্কতা নিচ্ছেন। সরকারি জায়গায় লাগানো ফেস্টুন, পোস্টার খুলতে গেলে পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছেন এমসিসি দলের লোকেরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রশাসনিক কর্তার কথায়, “নেতারা লাল চোখ তো আগেও দেখাতেন। তবে এখন এলাকায় রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বরা ঘোরাঘুরি করছেন। টেলিফোনে হুমকিও শুরু হয়েছে। কিন্তু কী করব-কর্তব্য পালন তো করতে হবে।”
নির্বাচন কমিশনের নিয়মানুযায়ী, সরকারি দেওয়াল-সহ সরকারি কোনও সম্পত্তিতে দলীয় প্রচার করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এছাড়াও স্কুল, কলেজ, বাজার, কোনও সড়ক, সড়কের ধারে পূর্ত ও পূর্ত (সড়ক) বিভাগের কোনও জমি খালি থাকলেও সেখানে কোনও ফেস্টুন, পতাকা, ফ্লেক্স-কিছুই টাঙানো যাবে না। একশো দিনের কাজের রাস্তা থেকে জেলা পরিষদের টাকায় নির্মিত রাস্তার ধারও প্রচারের ক্ষেত্র হিসাবে ব্যবহার করা যাবে না। প্রচারের কাজে কোনও প্রেক্ষাগৃহের দেওয়াল ব্যবহারও নিষিদ্ধ। তাই কোনও প্রেক্ষাগৃহের মালিকের অনুমতি নিয়ে কোনও রাজনৈতিক দল দেওয়াল লিখন বা ফেস্টুন টাঙালেও খবর পেয়ে প্রশাসন গিয়ে তা খুলে নিচ্ছে। তবে কোনও সড়কের ধারে ব্যাক্তিগত বাড়ির ছাদ বা দেওয়াল কেউ ব্যবহার করতেই পারেন, কিন্তু যদি ওই বাড়ি থেকে পতাকা রাস্তার মাঝামাঝি হেলে থাকে-তা হলেও তা বেআইনি বলে গণ্য হবে।
ঘাটাল মহকুমায় চন্দ্রকোনার দু’টি ব্লক আরামবাগ লোকসভা কেন্দ্রের অর্ন্তগত। মহকুমা প্রশাসন সূত্রে খবর, ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের অধীনে থাকা সাতটি বিধানসভা এলাকায় প্রায় প্রতিদিনই নির্বাচনী বিধিভঙ্গের কোনও না কোনও অভিযোগ হচ্ছে। অভিযোগ কম-বেশি সব রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধেই উঠছে। ঘাটাল লোকসভার রিটার্নিং অফিসার তথা অতিরিক্ত জেলাশাসক (পঞ্চায়েত) সুশান্ত চক্রবর্তী বলেন, “অভিযোগের ঠিক সংখ্যা বলা যাবে না। তবে প্রতিদিনই এ নিয়ে অভিযোগ আসছে। ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে।” নির্বাচন কমিশনের নিয়মানুযায়ী, সরকারি যে কোনও সম্পত্তিকে প্রচারের ক্ষেত্র হিসাবে ব্যবহার করলে সংশ্লিষ্ট দলকে প্রথমে তা জানানো হয়। সংশ্লিষ্ট জায়গা থেকে ওই প্রচার সামগ্রী খুলে নেওয়ার জন্য তিন দিন সময়ও দেওয়া হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে কাজ না হলে তবেই সরকারি ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
রাজনৈতিক দলগুলি নির্বাচন কমিশনের জারি করা নিয়মকানুন মেনে চলছে কি না-তা দেখার জন্য প্রতি ব্লকে আদর্শ নিবার্চন বিধি (এমসিসি) সেল তৈরি করা হয়েছে। ওই সেলের সদস্যরাই গ্রাম থেকে শহর ঘুরে কড়া নজর রাখছেন। প্রশ্ন হল, নির্বাচন কমিশনের জারি করা নিয়ম কেন সব দল মেনে চলছে না?
ঘাটালের বিধায়ক শঙ্কর দোলই বলেন, “আমরা প্রতিটি বিধানসভা এলাকার দলীয় নেতৃত্বকে কমিশনের নিয়ম মেনে প্রচার চালানোর জন্য কড়া নির্দেশ দিয়েছি। তবে গ্রাম-গঞ্জে কেউ কেউ হয়তো না জেনে সরকারি সম্পত্তির উপর ফেস্টুন বা পতাকা টাঙিয়ে দিচ্ছেন। খবর পাওয়া মাত্রই আমরা তা খুলে নিতে বলছি।” এদিকে সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অশোক সাঁতরা এবং কংগ্রেসের জেলার সহ সভাপতি জগন্নাথ গোস্বামীও একই সুরে বলেন, “দলীয় কর্মীরা কেউ না বুঝে রাস্তায় বা অনুমতি না নিয়ে কারোর বাড়িতে দেওয়ালে লিখেছে। অভিযোগ পাওয়ার পরই এনিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। দলীয় কর্মীদেরও বিধি মেনে প্রচার করার জন্য সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।”