কলমিজোড়ে সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।
চলতি বছরেই ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের কাজ শুরু হবে বলে আশ্বাস দিলেন রাজ্যের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার দাসপুরের কলমিজোড়ে কংসাবতী নদীর উপর পাকা সেতুর শিল্যানাস অনুষ্ঠানে এসে তিনি বলেন, “আগামী আর্থিক বছরের বাজেটে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের জন্য টাকা বরাদ্দ করা হবে। তারপর একটা দিন ঠিক করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এনে শিল্যানাস করা হবে।”
এ দিন প্রথমে পুরুলিয়ার হুড়ার একটি অনুষ্ঠান থেকে রিমোটের সাহায্যে দাসপুরের কংসাবতী নদীর উপর পাকা সেতুর শিল্যানাস করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মোবাইলে ওই বার্তা পাওয়ার পরই ঘাটাল মহকুমার দাসপুরের কলমিজোড় সেতুর শিলান্যাস করেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই অনুষ্ঠান মঞ্চেই সকলের সামনে রাজীবের প্রতিশ্রুতি, “আমি আগেও বলেছি,এখনও বলছি কেন্দ্র মাস্টার প্ল্যানের জন্য টাকা না দিলেও ১১০০ কোটি টাকার এই প্রকল্প আমরাই করব।”
বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য ১৯৮২ সালে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের ভিত্তিপ্রস্তর করা হয়েছিল। ঘাটালের শিলাবতী নদীর পাড়ে রুপোর কোদাল দিয়ে ভিত্তিপ্রস্তর করেছিলেন তৎকালীন সেচ দফতরের প্রতিমন্ত্রী প্রভাস রায়। কিন্তু শুরুর দিন কয়েক পরই বন্ধ হয়ে কাজ। প্রায় তিন দশকের বেশি সময় ধরে বিধানসভা, লোকসভা-সব ক্ষেত্রেই এই প্ল্যানকে সামনে রেখে প্রার্থীরা ভোট বৈতরণী পার হয়েছেন। পুরনো নিয়ম অনুযায়ী প্রথমে ঠিক ছিল, প্রকল্প বরাদ্দের ৭৫ শতাংশ দেবে কেন্দ্র। আর বাকি ২৫ শতাংশ খরচ দেবে রাজ্য। কিন্তু ২০১৪ সালের গোড়ায় তৎকালীন কেন্দ্র সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, প্রকল্পের বরাদ্দে কেন্দ্র ও রাজ্য দু’জনেরই খরচ পড়বে ৫০ শতাংশ করে। সেই নির্দেশের পর কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের সঙ্গে আলোচনার আশ্বাসও দিয়েছিলেন রাজ্যের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়।
সোমবার সাদা পায়রা উড়িয়ে প্রকল্পের সূচনা করেন রাজীববাবু। তিনি জানান, দু’বছরের মধ্যে ১৩৫ মিটার লম্বা এবং দুই লেনের এই পাকার সেতু তৈরি করা হবে। খরচ পড়বে ১২ কোটি টাকা। এই প্রসঙ্গে সেচমন্ত্রীর অভিযোগ, “গত ৩৪ বছরেও এই সেতুর প্রয়োজনীতা সংশ্লিষ্ট সরকার অনুভব করেনি। আমরা এই ক’বছরেই সেটা করতে পেরে আনন্দিত।” তিনি আরও জানান, রাজ্য জুড়ে ১০৫টি সেতুর কাজ চলছে। এর মধ্যে ৯২টি সেতুর কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে বলেও তিনি জানান। সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে সোমবার সকাল থেকে উৎসবের চেহারা নিয়েছিল গোটা এলাকা। কলমিজোড়, সালামপুর, তাতারপুর, কুঞ্জপুর, কাদলিপুর-সহ বহু গ্রাম থেকে হাজার হাজার মানুষের ভিড় দেখে অভিভূত রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “আমি বহু অনুষ্ঠানে গিয়েছি। কিন্তু একটা সেতু শিলান্যাসে এত মানুষের ভিড় দেখিনি।” হাজির ছিলেন পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রী সুকুমার হাঁসদা, দফতরের দুই পরিষদীয় সচিব শঙ্কর দোলই, দলের জেলা সভাপতি তথা খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যানপালন দফতরের চেয়ারম্যান দীনেন রায়, জেলা সভাধিপতি উত্তরা সিংহ, ঘাটালের মহকুমাশাসক রাজনবীর সিংহ কাপুর প্রমুখ।