শুক্রবার ঘাটাল শহরের রাস্তায় পুলিশের রুট মার্চ। —নিজস্ব চিত্র।
একই দিনে তিন হেভিওয়েট প্রার্থীর প্রচার ঘাটালে!
প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর ঘাটালে আজ, শনিবার রোড-শো দিয়ে প্রচার শুরু করছেন তৃণমূল প্রার্থী দেব। এ দিনই ঘাটালে প্রথম প্রচারে নামছেন কংগ্রেস প্রার্থী মানস ভুঁইয়াও। আর সিপিআই প্রার্থী সন্তোষ রাণাও এ দিন দাসপুরে কর্মিসভা করবেন। কর্মিসভা শেষে তাঁর বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার করার কর্মসূচিও রয়েছে।
একা দেবের রোড-শোতে রক্ষে নেই। সঙ্গে এ দিন ঘাটাল কেন্দ্রের অন্য দুই প্রার্থীরও প্রচার কর্মসূচি রয়েছে। ফলে তিন প্রার্থীর প্রচারে নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করতে হিমসিম খাচ্ছে পুলিশ। এজন্য শুক্রবার দিনভর দফায় দফায় ঘাটালে উচ্চপদস্থ পুলিশ আধিকারিকদের বৈঠক চলে। নিরাপত্তায় ন্যূনতম ফাঁক না রাখতে শুক্রবার দিনভর ঘাটালে পুলিশ রুট মার্চ চালায়। শহরের বিভিন্ন রাস্তায় তল্লাশিও চালানো হয়। শনিবার ঘাটাল মহকুমাশাসকের দফতরে ভোটের প্রস্তুতি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশাসনিক বৈঠক ডাকা হয়েছে। বৈঠকে জেলাশাসক, চার জন অতিরিক্ত জেলাশাসক, ঘাটালের মহকুমাশাসক-সহ ঘাটাল মহকুমার পাঁচটি ব্লকের বিডিও, ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটরাও উপস্থিত থাকবেন।
প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর শনিবার মানস ভুঁইয়া ঘাটালে প্রথম কর্মিসভা করবেন। মানসবাবুও এ দিন কর্মিসভা শেষে ঘাটালে রোড-শো করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। সেইমতো কংগ্রেসের পক্ষ থেকে পুলিশের কাছে অনুমতি চাওয়া হয়। তবে কর্মিসভার অনুমতি মিললেও রোড-শোর অনুমতি মেলেনি। তবে সেজন্য আক্ষেপ নয়, দলের ‘হাই প্রোফাইল’ প্রার্থীর কর্মিসভা সফল করতেই কোমর বেধে নেমেছে কংগ্রেস নেতৃত্ব। শনিবার দাসপুরে কর্মিসভা করবেন সন্তোষ রাণাও। তারপর তাঁর বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার করারও কথা রয়েছে। সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য সুনীল অধিকারী বলেন, “বাম প্রার্থীর সমর্থনে শনিবার কর্মিসভা ডাকা হয়েছে। তাছাড়া বাড়ি বাড়ি প্রচারে গত আড়াই বছরে তৃণমূল সরকারের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথাই আমরা তুলে ধরছি।”
তৃণমূল সূত্রে খবর, দেব ঘাটালে প্রচারে আসবেন এ কথা জানাজানি হতেই দলীয় কর্মী সমর্থকরা তাঁদের প্রার্থীকে একবার কাছ থেকে দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন। ফলে শুধু পুলিশ নয়, দেবের রোড-শো চলাকালীন দলীয় কর্মীদের সামলানোও তৃণমূলের কাছে চ্যালেঞ্জ। ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের আহ্বায়ক তথা ঘাটালের বিধায়ক শঙ্কর দোলই বলেন, “রোড-শোতে লোক তো হবেই। তাই রোড-শো আরও বেশি এলাকা জুড়ে করার জন্য আমরা দেবের কাছে একটু বেশি সময় চেয়েছিলাম। দেব আমাদের কথা রেখেছেন। ফলে শনিবার ঘাটাল শহরের পর মনসুকা, খড়ার হয়ে বীরসিংহ পর্যন্ত রোড-শো করার পরিকল্পনা নিয়েছি। পুলিশকেও এবিষয়ে জানানো হয়েছে।”
দলীয় সূত্রে খবর, শনিবার দেবের রোড-শো প্রায় ৩০ কিলোমিটার পথ পরিক্রমা করবে। ফলে ঘাটাল বিধানসভা কেন্দ্রের একটা বড় অংশেই এ দিন দেবের ঘোরা হয়ে যাবে। ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের পর্যবেক্ষক তথা জলসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র বলেন, “শনিবার প্রার্থীর প্রচার সুষ্ঠুভাবে করাই আমাদের লক্ষ্য। তার জন্য আমরা প্রস্তুত।” শঙ্কর দোলই বলেন, “রোড-শো করার সময় যাতে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সেজন্য আমাদের কর্মীরাও সতর্ক থাকবেন। দলের কর্মীরা অলি-গলি থেকে রাজপথ সর্বত্রই সাধারণ মানুষেক ভিড়ে মিশে থেকে সবদিকে নজর রাখবেন।” আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে ঘাটাল শহরে দেব থাকবেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। তাই ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের অর্ন্তগত সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রের সর্বত্র দলীয় কর্মী সমর্থকদের এলাকা ছেড়ে ঘাটালে আসতে নিষেধ করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, শনিবার ঘাটালে দেবের রোড-শোতে ৫০ জন মহিলা পুলিশ-সহ ৪০০জনের মতো পুলিশ কর্মী মোতায়েন থাকবে। এছাড়াও উপস্থিত থাকবেন একাধিক উচ্চপদস্থ পুলিশ-কর্তাও। শনিবার সকাল ৯টা থেকে ঘাটাল শহর-সহ দেবের রোড-শো যে অঞ্চলের উপর দিয়ে যাবে সর্বত্র অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হবে। খড়ার, বীরসিংহ-সহ বেশ কিছু জায়গায় বাড়ির ছাদ থেকেও পুলিশি নজরদারির ব্যবস্থা থাকবে। তার সঙ্গে যে কোনও ধরনের বিশৃঙ্খলা রুখতে রোড-শোতে সাধারণ মানুষের ভিড়েও পুলিশ থাকবে বলে জানা গিয়েছে। শঙ্করবাবু জানান, সাধারণ মানুষ যাতে তাঁদের প্রিয় অভিনেতাকে দেখতে কোনও সমস্যায় না পড়েন, সেজন্যও আমরা ভাবনাচিন্তা করেছি। তবে সন্ধ্যা হওয়ার আগেই প্রচার শেষ করার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। দেবের রোড-শো সুশৃঙ্খলভাবে করতে আমরা তৎপর। তাই রোড-শোতে ব্লকের সব জায়গা থেকে যাতে দলীয় কর্মীরা না চলে আসেন সেই নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।