দলীয় প্রার্থীদের সঙ্গে রাজনাথ সিংহ। ছবি: কিংশুক আইচ।
বিজেপির নেতৃত্বে এনডিএ ক্ষমতায় এলে মনীষীদের কথা আরও বেশি করে পড়ার বইতে স্থান পাবে বলে আশ্বাস দিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি রাজনাথ সিংহ। তাঁর কথায়, “বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ক্ষুদিরাম বসু এই বাংলায় জন্মেছেন। কী করে আমরা বাংলার সংস্কৃতি ভুলে যাবো? আমাদের সরকার এলে এই সব ইতিহাস পড়ার বইতে স্থান পাবে।”
শুক্রবার পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশিয়াড়িতে এক জনসভার আয়োজন করে বিজেপি। প্রধান বক্তা ছিলেন রাজনাথই। দলের মেদিনীপুরের প্রার্থী প্রভাকর তিওয়ারি, ঘাটালের প্রার্থী মহম্মদ আলম, ঝাড়গ্রামের প্রার্থী বিকাশ মুদি সভায় উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন বিজেপির জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায়ও। দলীয় সূত্রে খবর, বিকেল চারটে নাগাদ সভায় পৌঁছনোর কথা ছিল সর্বভারতীয় সভাপতির। তবে পৌঁছন সাড়ে পাঁচটা নাগাদ। আবহাওয়া দুর্যোগপূর্ণ থাকায় বেশিক্ষণ বক্তব্যও রাখেননি। মিনিট দশেক বক্তব্য রেখেই তড়িঘড়ি সভাস্থল ছাড়েন তিনি। সভায় আসতে দেরি হওয়ায় উপস্থিত সকলের কাছে ক্ষমাও চেয়ে নেন। তাঁর কথায়, “আসতে কিছুটা দেরি হয়েছে। আমি আপনাদের কাছে ক্ষমা চাইছি।” পরে বলেন, “বিভিন্ন এজেন্সির কাছ থেকে যে রিপোর্ট আসছে, তা থেকে দেখা যাচ্ছে, আমরা ৩০০- রও বেশি আসন পেতে চলেছি।” সভাস্থলে তখন স্লোগান ওঠে, ‘না দাদা, না দিদি, অনলি মোদী।’ এরপরই কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সুর চড়ান রাজনাথ সিংহ। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি এবং দুর্নীতি নিয়ে ইউপিএ সরকারকে বিঁধতে শুরু করেন তিনি। তাঁর কথায়, “অটলবিহারী বাজপেয়ী মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন। এই সরকার আসার পর মূল্যবৃদ্ধি হয়েই চলেছে। বেকারত্বও বাড়ছে। ভারতকে এরা দশ বছর ধরে লুটেছে। দশ বছরে সাড়ে পাঁচ লক্ষ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে।”
ইউপিএকে সমর্থন করা নিয়ে তৃণমূলেরও কড়া সমালোচনা করেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি। তাঁর কথায়, “পাঁচ বছর ধরে তৃণমূল এই সরকারকে সমর্থন করেছে। সাড়ে পাঁচ লক্ষ কোটি টাকা কম নয়। টুজি স্পেকটামে এক লক্ষ সত্তর হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। এটা আমার অভিযোগ নয়, সিএজি বলছে। কমনওয়েলথ গেমসে সত্তর হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। কয়লায় দু’লক্ষ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। তাও এরা (কংগ্রেস) ভোট চাইছে।” এরপরই রাজ্যের প্রসঙ্গে চলে আসেন তিনি। রাজনাথ সিংহ বলেন, “৩৫ বছর এ রাজ্যে সিপিএম ক্ষমতায় ছিল। এই সময়টা কম নয়। কী হয়েছে এই সময়ের মধ্যে? কলকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। বেকারত্ব বেড়েছে। নতুন সরকারের উপর মানুষের অনেক আশা ছিল। তৃণমূল ক্ষমতায় এসে মানুষকে নিরাশ করেছে।” উন্নয়ন প্রসঙ্গে গুজরাতের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “গুজরাতে মোদী যে উন্নয়ন করেছেন, তা শুধু এ দেশে নয়, অন্য দেশেও প্রশংসিত হচ্ছে।” বিজেপি প্রার্থীরা জিতলে ফের তিনি জেলায় আসবেন বলেও কথা দেন। তাঁর কথায়, “এঁদের (প্রার্থীদের) জেতার পর ফের এখানে আসব।” শুক্রবার হেলিকপ্টারে করে কেশিয়াড়িতে আসেন রাজনাথ সিংহ। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি যখন কেশিয়াড়িতে পৌঁছন, দুর্যোগের পূর্বাভাস মিলতে শুরু করেছে। দেরি না-করে মঞ্চে উঠে মাইক্রোফোনের কাছে যান। শেষে ফুলের তোড়া দিয়ে তাঁকে বরণ করে নেন নেতৃত্ব। দেরি না- করে মঞ্চ থেকে নেমে গাড়িতে করে দ্রুত হেলিপ্যাডের দিকে রওনা দেন। রাজনাথ সিংহ কেশিয়াড়ি ছাড়ার কিছু পরই ঝড়- বৃষ্টি শুরু হয়।
দলের জেলা সভাপতি তুষারবাবুর দাবি, “মানুষ তৃণমূলের বিকল্প হিসেবে বিজেপিকেই দেখতে শুরু করেছেন। কেশিয়াড়ির মতো এলাকায় যে জমায়েত হয়েছে, তা থেকেই এর প্রমাণ মেলে।”