জল ডিঙিয়েই যেতে হচ্ছে স্কুলে। ছবি: সোহম গুহ
কাঁধে বইয়ের ব্যাগ আর হাতে চটি। এক হাঁটু জল ডিঙিয়ে বছর আটেকের ওই ছাত্রের গন্তব্য স্কুল। অতিবর্ষণে এত দিন গোটা এলাকাই জলবন্দি। তা বলে তো রোজ স্কুল কামাই করা যায় না। তাই এভাবেই প্রতিদিন জল ডিঙিয়ে স্কুলে আসতে হচ্ছে রামনগর-২ ব্লকের কালিন্দী গ্রাম পঞ্চায়েতের দাদনপাত্রবাড় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের। তবে শুধু ওই স্কুলই নয়, একই অবস্থা দাদনপাত্রবাড় মধ্যশিক্ষা কেন্দ্রর শিক্ষক-শিক্ষিকা, পড়ুয়াদেরও।
সৈকত পযর্টনকেন্দ্র মন্দারমণির কোল ঘেঁষে দাদনপাত্রবাড় গ্রাম। সৈকতের ধারে আর ঝাউবাগানের পাশে কয়েক একর জায়গার মধ্যেই পাশাপাশি রয়েছে দাদনপাত্রবাড় প্রাথমিক বিদ্যালয়, মধ্যশিক্ষা কেন্দ্র ও একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র। স্থানীয় কালিন্দী গ্রাম পঞ্চায়েতের দাদনপাত্রবাড়, শৌলা, সোনামুই, অরখবনিয়া, মন্দারমণি, সিলামপুর-সহ বেশ কয়েকটি গ্রামের পড়ুয়াদের পড়াশোনা করতে দাদনপাত্রবাড় প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মধ্যশিক্ষা কেন্দ্রে আসতে হয় প্রতিদিনই। পাশে রয়েছে এলাকার একমাত্র স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিও। চিকিৎসা পরিষেবার জন্য যার উপর নির্ভরশীল এইসব এলাকার কয়েক হাজার বাসিন্দা। মানুষ। গোটা এলাকাটি নিচু হওয়ায় গত জুন-জুলাই মাসে অতিবর্ষণের জেরে জলমগ্ন হয়ে পড়ে এলাকাটি। জলবন্দি হয়ে পড়ে দুটি শিক্ষাকেন্দ্র-সহ স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি।
মাঝে বৃষ্টি কিছুটা কমলেও আবার নতুন করে শুরু হয়েছে প্রবল বৃষ্টিপাত। তাই এখনও জলবন্দি অবস্থায় রয়েছে ওই দুটি শিক্ষা কেন্দ্র ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি। ফলে সমস্যায় পড়েছে পড়ুয়া, শিক্ষক-শিক্ষিকারা। এমনকী চিকিৎসা পরিষেবা পেতে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসা সাধারণ মানুষদের জল ডিঙিয়েই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসতে হচ্ছে। দাদনপাত্রবাড় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উত্তম গিরি বলেন, “গত জুনের বৃষ্টিতে গোটা এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। জুলাই মাসের অতিবর্ষণে জল একেবারে স্কুলের ভেতরেও ক্লাস ঘরে ঢুকেছিল। এখন ঘর থেকে জল সরলেও গোটা এলাকা জলমগ্ন।”
এমতাবস্থায় স্কুলে দুই স্কুলের ছাত্রছাত্রী আর শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নিত্যদিন জল ডিঙিয়েই স্কুলে আসতে হচ্ছে। দাদনপাত্রবাড় গ্রামের বাসিন্দা চন্দন গিরি, বিষ্ণুপদ বারিক, ভগীরথ দাস প্রমুখের অভিযোগ, “জমে থাকা জল ক্রমশ পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। ফলে পরিবেশ দূষিত হয়ে পড়ছে।” স্থানীয় দাদনপাত্রবাড় গ্রামের পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য প্রদীপ কুমার গিরি স্কুল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র জলবন্দি হয়ে থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, “এটার অন্যতম কারণ এলাকাটি অত্যাধিক নিচু হওয়ায় সাম্প্রতি অতিবর্ষণে গোটা এলাকা জলে ডুবে গিয়েছিল। এলাকার সমুদ্রধারের খাসজায়গা থেকে বালি এনে নিচু জায়গাটি ভরাটের চেষ্টাও করা হয়। কিন্তু স্থানীয় মৎস্যজীবীদের সঙ্গে জমি নিয়ে সমস্যার জেরে কাজ বন্ধ রয়েছে।” তবে গোটা বিষয়টি রামনগর-২ ব্লক আধিকারিক প্রীতম সাহা ও পঞ্চায়েত সমিতিকেও জানানো হয়েছে বলেও জানান তিনি। এখন দেখার, সমস্যা মেটে কত দিনে!