জেলার বিভিন্ন এলাকায় নলবাহী পানীয় জল প্রকল্প চালুর করার দাবি উঠেছে। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে পশ্চিম মেদিনীপুরে ৩৭টি নতুন জল প্রকল্প তৈরির প্রস্তাব পাঠানো হল রাজ্যে।
প্রশাসন সূত্রে খবর, জুন মাসে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের এক বৈঠকে এ নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়। তারপর চলতি মাসের গোড়ায় জেলা থেকে নতুন ৩৭টি জল প্রকল্পের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন মিললেই প্রোজেক্ট রিপোর্ট তৈরির কাজ শুরু হবে। প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলোর দ্রুত অনুমোদনের আর্জি জানিয়ে আবার জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের বিভাগীয় প্রধান সচিব সৌরভ দাসকে চিঠি দিয়েছেন জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ অমূল্য মাইতি। বৃহস্পতিবারই তিনি এই চিঠি পাঠিয়েছেন ওই বিভাগীয় প্রধান সচিবের কাছে। কেন প্রধান সচিবকে চিঠি পাঠাতে হল? জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ অমূল্যবাবু বলেন, “প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলোয় যাতে দ্রুত অনুমোদন মেলে, সেই জন্যই চিঠি দিয়েছি। আশা করি, শীঘ্রই অনুমোদন দেওয়া হবে।” জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের মেদিনীপুর ডিভিশনের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার সুদীপ সেনের কথায়, “এই মাসেই বেশ কয়েকটি জল প্রকল্পের প্রস্তাব রাজ্যে পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলো রূপায়িত হলে লক্ষাধিক মানুষ উপকৃত হবেন।”
কোথায় কোথায় প্রকল্প হবে?
প্রশাসন সূত্রে খবর, চন্দ্রকোনা-১, ঘাটাল, দাসপুর-১, খড়্গপুর-২, নয়াগ্রাম, শালবনি, গোপীবল্লভপুর-১ ও ২, দাঁতন-১ ও ২, পিংলা, ডেবরা, সবং, কেশপুর, গড়বেতা- ৩ এবং মোহনপুরে প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলো হওয়ার কথা। সব থেকে বেশি জল প্রকল্পের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে ঘাটালের জন্য, ১১টি। শালবনিতে ৩টি, পিংলায় ৫টি, ডেবরায় ৩টি, কেশপুরে ২টি, খড়্গপুর-২ ব্লকে ২টি প্রকল্পের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। বাকি ব্লকগুলোতে একটি করে প্রকল্পের প্রস্তাব রয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের বিভিন্ন এলাকায় পানীয় জলের সমস্যা রয়েছে। গরমে সমস্যা বাড়ে। জেলার জঙ্গলমহলের পরিস্থিতি সব থেকে খারাপ। কারণ, এই এলাকায় জলস্তর ক্রমেই নীচে নামছে। বিশেষ করে অপেক্ষাকৃত উঁচু এলাকায়। নলবাহী জল প্রকল্প না থাকায় অনেক এলাকার মানুষকেই দূর থেকে জল আনতে হয়। এ জেলায় বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ দেড় হাজার মিলিমিটার। কংসাবতী, সুবর্ণরেখার মতো নদীও আছেয় জেলায়। তবু রয়েছে জল সঙ্কট। বিশেষ করে পরিস্রুত পানীয় জলের সঙ্কট।
মাঝে মধ্যে পশ্চিম মেদিনীপুরের বিভিন্ন এলাকায় জলবাহিত রোগও দেখা যায়। ডায়েরিয়ার প্রকোপ ছড়ায়। দেখা যায়, যে এলাকায় ডায়েরিয়া হচ্ছে, সেখানকার জল পরিস্রুত নয়। বহু গ্রামের মানুষ কুয়োর জল পান করেন, কোথাও বা পুকুরের জল। পরিস্থিতি দেখে জল শোধনও করতে হয়। জেলায় অন্তত ৩১ হাজার নলকূপ রয়েছে। এর মধ্যে সচল রয়েছে ২২ হাজার। অচল হয়ে পড়ে ৯ হাজার। অচলগুলোর মধ্যে আবার জলস্তর নেমে যাওয়ায় জল ওঠে না অন্তত দেড় হাজার নলকূপে।
পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেই বিভিন্ন এলাকায় নতুন নলকূপ তৈরির উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহের জন্য নলবাহী জল প্রকল্পের উপরও জোর দেওয়া হচ্ছে। আগে সজলধারা প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামে গ্রামে পানীয় জল সরবরাহ করা হত। এখন এই প্রকল্প নেই। বদলে এলাকায় জলাধার তৈরি করে নলবাহী পানীয় জল সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়। গেল জুন মাসেই মেদিনীপুরে এসেছিলেন পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। সঙ্গে ছিলেন দফতরের বিভাগীয় প্রধান সচিব সৌরভ দাসও। মন্ত্রীর উপস্থিতিতে বৈঠকেও জল প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হয়। জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ অমূল্য মাইতি বলেন, “প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলো দ্রুত রূপায়ণ করা জরুরি। চিঠিতে সব দিকই উল্লেখ করেছি।”