পরীক্ষা দিতে গিয়ে যেতে-আসতে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) হেনস্থার মুখে পড়তে হচ্ছে। লাগাতার চলছে চোখরাঙানি, হুমকি। আবার কখনও ঘটছে মারধরের মত ঘটনাও!
পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল কলেজে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংসদ টিএমসিপির এই ‘অত্যাচারের’ কথা কলেজ বা প্রশাসনেও জানিয়ে কোনও সুরাহা না হওয়ায় খোদ মুখ্যমন্ত্রী এবং শিক্ষামন্ত্রীকে ফ্যাক্স মারফত বিষয়টি জানিয়েছিলেন জেলারই চাঁইপাট কলেজের পরীক্ষার্থীরা। চাঁইপাটের পড়ুয়াদের অভিযোগ, জেলার একমাত্র এসএফআই পরিচালিত কলেজ হওয়ার জন্যই টিএমসিপির কর্মী-সমর্থকেরা এ ভাবে তাঁদের হেনস্থা করছে। এর জেরে দুর্ভোগে পড়েছেন অনার্স ও পাশ মিলিয়ে চাঁইপাট কলেজের প্রায় চারশো পড়ুয়া।
জেলার মধ্যে তৃণমূলের দূর্গ বলে পরিচিত দাসপুরের চাঁইপাট কলেজ সিপিএমের ছাত্র সংগঠন এসএফআই দখল করায় অস্বস্তিতে পড়েছিল শাসকদল তৃণমূল। ঘটনার পরে একাধিক বার ওই কলেজে ছাত্র সংঘর্ষ হয়েছে। প্রায় প্রতিক্ষেত্রেই অভিযুক্ত ছিল টিএমসিপি। চাঁইপাট কলেজের এসএফআই পরিচালিত সংসদের সাধারণ সম্পাদক তথা এ বারের পরীক্ষার্থী তাপস পালের অভিযোগ, “যখনই জানতে পারি, আমাদের আসন ঘাটাল কলেজে পড়েছে তখন আগেভাগেই বিষয়টি কলেজ কর্তৃপক্ষের নজরে আনি। কেননা, ঘাটালের ছাত্র সংসদের তরফে আমাদের হুমকি দিয়ে বলা হয়েছিল ঘাটালে গেলেই মারধর করা হবে।” সাধারণ সম্পাদকের দাবি, এরপরেও চাঁইপাট কলেজ কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে গুরুত্ব দেননি। কলেজের অধ্যক্ষ দেবাশিস সর্দার অবশ্য তা মানতে চাননি। তিনি বলেন, “কোন কলেজের আসন কোথায় পড়বে এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেয়। এ বিষয়ে কলেজের কিছু করার থাকে না।” ঘাটাল কলেজে চাঁইপাটের পরীক্ষার্থীদের হেনস্থার কথা জানার পরেই পরিচালন সমিতির বৈঠক ডাকা হয়েছিল বলে তিনি জানান। দেবাশিসবাবু বলেন, “পরিচালন কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত মতো মহকুমাশাসক-সহ সংশ্লিষ্ট সকলকেই বিষয়টি জানিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।” এসএফআইয়ের দাবি, এরপরেও পরীক্ষা চলাকালীনই ছাত্রদের মারধর, বাসে ওঠা-নামার সময়ে হুমকি, ফোনে পরীক্ষা দিতে আসতে নিষেধ করা-সহ নানা ঘটনা চলছেই। এসএফআইয়ের দাসপুর এলাকার সম্পাদক বিমল দাসের অভিযোগ, “এখন ঘাটাল কলেজ কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসন কলেজে কড়া নজরদারি চালালেও চাপা সন্ত্রাস অব্যাহত রয়েছে।” তাঁর দাবি, পরীক্ষা শুরুর দিন কলেজের সাধারণ সম্পাদক তাপস পাল-সহ অন্যদের মারধরও করা হয়। বিষয়টি কাউকে জানালে ফল ভাল হবে না এই ফতোয়াও দেওয়া হয়। প্রতিবাদে ছাত্র-ছাত্রী সহ অভিভাবকেরা চাঁইপাট কলেজে ডেপুটেশনও দেন।
চাঁইপাট কলেজের পরিচালন কমিটির সভাপতি তথা তৃণমূলের দাসপুর ২ ব্লকের সভাপতি তপন দত্ত দলের ছাত্র সংগঠনের বিরুদ্ধে ওঠা এমন অভিযোগ মেনে নিয়েছেন। তিনি বলেন, “ঘটনাটি নিন্দনীয়।” তবে পরীক্ষায় কোনও রকম বিঘ্ন বরদাস্ত করা হবে না বলে তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন।
ঘাটাল কলেজের অধ্যক্ষ লক্ষ্মীকান্ত রায় জানিয়েছে, হেনস্থার বিষয়টি জানার পরেই কলেজের তরফে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। টিএমসিপি পরিচালিত ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদককে ডেকে কলেজে ফের এ রকম ঘটনা ঘটলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। ঘাটালের মহকুমাশাসক অদীপ রায় বলেন, “শুরুতেই একটা গণ্ডগোল হয়েছিল। এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। পরীক্ষার্থীদের যে কোনও রকম সমস্যা এড়াতে কলেজ কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”