কেলেঘাই নদী সংস্কারের কাজ চলছে। —ফাইল চিত্র।
দল আলাদা, প্রার্থী আলাদাঅথচ, প্রচারের বিষয় এক।
কেলেঘাই-কপালেশ্বরী-বাগুই সংস্কার এবং ডেবরা-সবং সড়কের সম্প্রসারণ, স্থানীয় এই দুই বিষয়কে কেন্দ্র করে এক সময়ের জোটসঙ্গী কংগ্রেস বনাম তৃণমূলের জমে উঠেছে প্রচার।
কেননা, ওই দুটি প্রকল্পের কাজই রাজ্য-কেন্দ্রের যৌথ উদ্যোগে হচ্ছে। স্বভাবতই এটাকেই প্রচারের বিষয় করেছে কংগ্রেস। যেহেতু, প্রকল্প দু’টির কাজ রাজ্য সরকারের তত্ত্বাবধানে হচ্ছে তাই প্রকল্পের ভাগিদার হতে চাইছে শাসকদল তৃণমূলও। ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের সবং, পিংলা ও ডেবরা এই তিনটি বিধানসভা এলাকায় আরও নানা বিষয়ের সঙ্গে এই দু’টি বিষয় নিয়ে দড়ি টানাটানি শুরু হয়েছে।
তৃণমূল নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের দলীয় অভিনেতা-প্রার্থী দেবের প্রচারে নদী ও রাস্তা সম্প্রসারণকে অন্যতম বিষয় করা হবে। আবার এটাকেই ‘পাখির চোখ’ করেছেন কংগ্রেসের প্রার্থী তথা সবংয়ের বিধায়ক মানস ভুঁইয়া। প্রচারে কংগ্রেস নেতাকর্মীরা কেলেঘাই-কপালেশ্বরী-বাগুই নদী সংস্কারের মানসবাবুর অবদানের কথা তুলে ধরছেন। যেহেতু, তাঁদের সময়েই এই প্রকল্পের শিলান্যাস সম্ভব হয়েছে পিছিয়ে নেই তৃণমূলও।
কেলেঘাই-কপালেশ্বরী-বাগুই নদী সংস্কার নিয়ে জটিলতার অন্ত ছিল না। প্রায় চার দশক ধরে নদী সংস্কার না হওয়ায় বর্ষায় সময় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হত। এর জেরে ভুগতে হত সবং, পিংলা, নারায়ণগড়, দাঁতন, পটাশপুর, ময়না, ভগবানপুর-সহ বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষকে। এই প্রকল্পের জন্য ১৯৬৮ সাল থেকে জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হলেও, তা আর এগোয়নি। অথচ, বহুবার একাধিক রাজনৈতিক দলগুলি এই নদী-সংস্কারকে সামনে রেখে ভোট-বৈতরিণী পার হয়েছে। গালভরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ২০১০ সালে বাম আমলে কেন্দ্রীয় সরকার প্রায় ৬৫০ কোটি টাকার ৭৫ শতাংশ বরাদ্দের অনুমোদন দেয়। তবে, এই নদীগুলির সংস্কার জন্য সবংয়ের কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়া বারবার কেন্দ্রের কাছে দরবার করেছিলেন। তবে, নানা জটিলতায় কাজ এগোয়নি বাম আমলে।
রাজ্যে পালাবদলের পরে তৃণমূল সরকার এসেই ২০১১ সালের শেষ দিকে ওই সংস্কার প্রকল্পে হাত লাগায়। সেই সময়ে রাজ্যে ও কেন্দ্রে জোটসঙ্গী কংগ্রেস ২০১২ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শরিক কংগ্রেসের সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়াকে পাশে নিয়ে ভগবানপুরের কাঁটাখালিতে এই প্রকল্পের শিলান্যাস করেন। সে দিন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন তদানীন্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়। অনুষ্ঠানে তিনিও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘আকর্ষণীয় ক্ষমতার’ কথা বলেছিলেন। মানসবাবুও মুখ্যমন্ত্রীর ‘প্রয়াসে’র প্রশংসা করেছিলেন। বর্তমানে এই প্রকল্পের কাজ অনেকটাই এগিয়েছে। গত দু’বছরে বন্যা পরিস্থিতির মুখে পড়েনি সাধারণ মানুষ।
এখন চিত্র বদলেছে অনেকটাই। এ বারের নির্বাচনে যুযুধান দু’শিবিরই। তাই একই সাফল্যে দু’পক্ষই নিজেদের মতো করে একই প্রকল্পের প্রচারে নেমেছে ভোটারদের কাছে।
এই টানাপোড়েনের আবহে এখন একে-অপরকে এক বিন্দুও মাটি ছাড়তে নারাজ। পরিকল্পনা মতো তাঁরা প্রচারেও তুলে ধরছেন এলাকার বিদ্যুদয়ন থেকে ছোট সেতু নির্মাণের কথা। তবে মূল বিষয় হিসাবে বারবারই উঠে আসছে সেই কেলেঘাই-কপালেশ্বরী নদী সংস্কারের কথা। এ দিকে ডেবরা থেকে সবং বেহাল রাস্তার সংস্কারের চাহিদা ছিলই। পরে কেন্দ্রীয় সড়ক নির্মাণ তহবিল থেকে ১০৪ কোটি টাকা বরাদ্দে রাজ্যের তৃণমূল সরকারের পূর্ত দফতরের তত্ত্বাবধানে ২৭ কিলোমিটার রাস্তা সংস্কার ও সম্প্রসারণের কাজ শুরু হয়েছে। এক্ষেত্রেও মানসবাবু কেন্দ্রের কাছে চাপ দিয়ে অর্থ বরাদ্দ করিয়েছেন বলে দাবি করে কংগ্রেস। তাই এ বারে দু’পক্ষ ওই সড়ক নিয়েও প্রচার চালাচ্ছে।
জেলা কংগ্রেস সভাপতি বিকাশ ভুঁইয়া বলেন, “কেলেঘাই-কপালেশ্বরী নদী সংস্কারে মানসবাবু যে ভাবে কেন্দ্রকে বলে বন্যা দুর্গত এলাকার মানুষের চোখের জল মুছিয়েছেন, তা আমরা প্রচারে তুলে ধরছি।” এ ছাড়াও সবং-ডেবরা রাস্তায় কেন্দ্রীয় বরাদ্দ, সবংয়ের প্রতিটি গ্রামে বিদ্যুদয়ন, ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান নিয়ে মানসবাবুর উদ্যোগের কথা তুলে ধরছে কংগ্রেস। যদিও তৃণমূলের জেলা পরিষদ সদস্য তথা লোকসভা কেন্দ্রের সবং বিধানসভার চেয়ারম্যান অমূল্য মাইতিও বলেন, “দীর্ঘ দিন পর আমাদের আমলে কেলেঘাই-কপালেশ্বরী নদী সংস্কার, ডেবরা-সবং রাস্তা সংস্কার-সহ নানা প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। নির্বাচনী প্রচারে আমরা সে কথা তুলে ধরছি।” তাঁর কথায়, “ওই নদী সংস্কারের শিলান্যাসে প্রণব মুখোপাধ্যায় নিজে মুখ্যমন্ত্রীর প্রসংশা করেছিলেন। সে কথা কংগ্রেসও জানে। তাই দলের প্রচারে আমরা স্বাভাবিক ভাবেই তাকে অন্যতম প্রধান করেছি।”