নিয়মের ফাঁসই সার!
কারচুপি রোখার অস্ত্র ব্যবহার করেই ফের কারচুপির অভিযোগ উঠল ইন্দিরা আবাস যোজনা প্রকল্পে।
গরিব মানুষের বাড়ি তৈরির জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প ইন্দিরা আবাস যোজনায় টাকা নয়ছয় রুখতে ২০১৩-১৪ অর্থবর্ষে নতুন নিয়ম চালু হয়। তিন ধাপে টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সেই সঙ্গে বাড়ি তৈরির প্রতিটি ধাপের ছবি ওয়েবসাইটে আপলোড বাধ্যতামূলক করা হয়। প্রতিটি ধাপের বাড়ির ছবি আপলোড করার পরই পরবর্তী ধাপের টাকা দেওয়ার নিয়মও চালু হয়। তবে তাতেও অনিয়ম আটকানো যাচ্ছে না। অভিযোগ, একই বাড়ির সামনে একাধিক উপভোক্তাকে রেখে সেই ছবি ওয়েবসাইটে আপলোড করে দেওয়া হচ্ছে। তা দেখিয়েই পরবর্তী কিস্তির টাকা নেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে অনেকে ধরাও পড়েছে। আবার কিছু ক্ষেত্রে এ ভাবেই দ্বিতীয় কিস্তির টাকা পেয়ে গিয়েছেন কিছু উপভোক্তা! ফলে ফের জেলায় বাড়ি তৈরির প্রকল্প ধাক্কা খাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
অভিযোগ পেয়ে প্রশাসনেরও টনক নড়েছে। মৌখিক ভাবে প্রশাসনের কাছে বেশ কয়েক’টি এমন অভিযোগ এসেছে। যদিও লিখিত অভিযোগ হাতে গোনা দু’একটি ক্ষেত্রে হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের পরবর্তী কিস্তির টাকা দেওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। ওই উপভোক্তাদের জেলাতে ডাকাও হয়েছে। জেলা প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, “এই ধরনের কাজ করলে ওই উপভোক্তাকে ভবিষ্যতে কোনও সরকারি সাহায্য দেওয়া হবে না বলে জানানো হবে।”
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) পাপিয়া ঘোষ রায়চৌধুরী বলেন, “এই ধরনের অভিযোগ আসার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা প্রতিটি ব্লককে জানিয়ে দিয়েছি, তাঁরা যেন প্রতিটি ক্ষেত্রেই তদন্তে যান। ছবিগুলিও খুঁটিয়ে দেখেন। গরিব মানুষের বাড়ি তৈরির এই প্রকল্প যাতে কোনও ভাবেই ধাক্কা না খায়, সে জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ করা হচ্ছে। এমনকি যে সব ব্লক প্রকল্প রূপায়ণে পিছিয়ে রয়েছে সেই সব ব্লকে গিয়েও আমরা বৈঠক করছি। বৈঠকে ব্লক প্রশাসনের সঙ্গে পঞ্চায়েত সমিতি ও পঞ্চায়েতের প্রতিনিধিদেরও রাখা হচ্ছে।”
ইন্দিরা আবাস যোজনা প্রকল্প রূপায়ণে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা বারেবারেই ধাক্কা খেয়েছে। ২০১০-১১ আর্থিক বছরে এই প্রকল্পে প্রথম কিস্তির পেয়েছিল জেলা। টাকা খরচের হিসাব দিতে না পারায় দ্বিতীয় কিস্তির বরাদ্দ মেলেনি। ২০১১-১২ আর্থিক বছরে ফের প্রথম কিস্তির প্রায় ২৭ কোটি টাকাও পেয়েওছিল জেলা। এবারও খরচের হিসাব না দিতে পারায় জেলা দ্বিতীয় কিস্তির বরাদ্দ থেকে বঞ্চিত হয়। পরপর দু’বছর খরচের হিসাব দিতে না পারায় ২০১২-১৩ আর্থিক বছরে এই প্রকল্পে কোনও টাকাই পায়নি জেলা।
ইন্দিরা আবাস যোজনায় বাড়ি তৈরির প্রকল্পে টাকা নয়ছয়ের ভুরি ভুরি দৃষ্টান্ত রয়েছে। তাহলে খরচের হিসাব মিলবে কী ভাবে! বহু কষ্টে জেলা প্রশাসন অবশ্য ২০১১-১২ আর্থিক বছরের জন্য ২২ কোটি ৫৮ লক্ষ টাকা পায়। ২০১৩-১৪ আর্থিক বছরেও টাকার জন্য আবেদন জানায়। ২০১৩-১৪ আর্থিক বছরে ১৫৮০৫টি বাড়ি তৈরির অনুমোদনও মেলে। তবে পুরনো জট কাটিয়ে টাকা পেতে চলতি বছরের জানুয়ারি মাস হয়ে যায়। প্রায় ৬১ কোটি টাকা মিলেছিল এই প্রকল্পে। কিন্তু এ বার যাতে এই আর্থিক নয়ছয় রুখতে কেন্দ্রীয় সরকারও প্রকল্পে কিছু বদল ঘটায়। আগে দু’কিস্তিতে টাকা দেওয়া হত। তখন অবশ্য বাড়ি পিছু ৪৬ হাজার ৫০০ টাকা দেওয়া হত। গত আর্থিক বছর থেকে তা বেড়ে ৭৫ হাজার টাকা করা হয়। এবার থেকে তিন কিস্তিতে টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। প্রথম কিস্তিতে ২৫ শতাংশ, দ্বিতীয় কিস্তিতে ৬০ শতাংশ ও তৃতীয় কিস্তিতে ১৫ শতাংশ টাকা দেওয়ার কথা বলা হয়।
নতুন নিয়ম হয়, প্রতিটি কিস্তিতে টাকা দেওয়ার আগে আওয়াস সফট (awaas soft) ওয়েবাসইটে বাড়ি তৈরির ছবি আপলোড করতে হবে। আগের মতো জেলা যাতে প্রকল্পের বরাদ্দ পাওয়া থেকে বঞ্চিত না হয়, সে জন্য প্রশাসন কড়া হাতে এই প্রকল্প রূপায়ণ করতে চেয়েছিল। তা করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, এখানেও নতুন পদ্ধতিতে কিছু ব্যক্তি অর্থ তছরূপের চেষ্টা চালাচ্ছে। তা জানার পরে প্রশাসনও অবশ্য কড়া পদক্ষেপ নিচ্ছে। এখন পর্যন্ত ৮১ শতাংশ অর্থ খরচ করতে পেরেছে প্রশাসন। অতিরিক্ত জেলাশাসক বলেন, “প্রথম থেকে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ায় কাজ ভাল এগোচ্ছে। ফলে ২০১৪-১৫ আর্থিক বছরে এই প্রকল্পে আমাদের লক্ষ্যমাত্রাও বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ৩৬৯৮৯টি বাড়ি তৈরির অনুমোদন পাওয়া যাবে এ বার। তাই কয়েকজন ব্যক্তির জন্য প্রকল্প ধাক্কা খাবে, এটা মেনে নেওয়া হবে না। বাকি কাজও দ্রুত শেষ করতে বৈঠক করা হচ্ছে। যাতে ২০১৪-১৫ আর্থিক বছরের বরাদ্দ পেলেই দ্রুত কাজ শুরু করা যায়।”