জোরকদমে চলছে মেদিনীপুর পুরসভার সার্ধশতবর্ষের প্রচার। পুরসভার সেই হোর্ডিং-এর নীচেই জমে আছে আবর্জনা। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।
দেড়শোয় পা দিয়েছে মেদিনীপুর পুরসভা। কিছুটা দেরিতেই শুরু হচ্ছে সার্ধশতবর্ষ উদযাপন। পরশু, রবিবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে। তারপর এক বছর ধরে চলবে নানা কর্মসূচি।
মেদিনীপুর পুরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৮৬৫ সালে। বয়স দেড়শো পেরোলেও পরিষেবার ক্ষেত্রে এখনও বহু খামতি রয়ে গিয়েছে এই পুরসভার। থেকে গিয়েছে পানীয় জলের সমস্যা, নিকাশি সমস্যা, গলিতে পথবাতির অভাব। শহরের বিভিন্ন এলাকায় ছোট ছোট মাঠগুলিও বেহাল। সংস্কারের কোনও উদ্যোগ নেই। এই পরিস্থিতিতে কমছে খেলাধুলোর চর্চা। পরিবহণ সমস্যাতেও জেরাবার শহরবাসী। পায়ে হেঁটে বাদে শহরের এক পাড়া থেকে অন্য পাড়ায় যেতে এখনও রিকশাই ভরসা। অটো চলে গুরুত্বপূর্ণ কিছু রাস্তায়, ছোট রাস্তা কিংবা গলিতে নয়। এই পরিস্থিতিতে একাংশে রিকশাচালক বাড়তি ভাড়া হাঁকেন। এক সময় পুরসভা উদ্যোগে রিকশা স্ট্যান্ডগুলোয় নির্ধারিত ভাড়ার বোর্ড লাগানো হলে এখন আর ভাড়ার তালিকাই নেই। এই পরিস্থিতিতে পরিবেশ বান্ধব যান টুকটুক বা টোটো চালুর দাবি উঠেছে।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার এই সদর শহরে বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় পৌনে দু’লক্ষ। শহরে কালেক্টরেট আছে, জেলা পরিষদ আছে, বিশ্ববিদ্যালয় আছে, জেলা আদালত আছে। রয়েছে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, প্যারামেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল আছে, হোমিওপ্যাথি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল আছে। এর বাইরেও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। নানা কাজে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ মেদিনীপুরে আসেন। ব্যস্ত এই শহরে আর এক মস্ত সমস্যা যানজট। শহরে আলাদা ভাবে কোনও ফুটপাথ নেই। বাধ্য হয়ে পথচারীদের রাস্তা দিয়েই হাঁটতে হয়। যত দিন যাচ্ছে, জবরদখলের জেরে ততই সংকীর্ণ হচ্ছে রাস্তাও। কোথাও রাস্তার পাশে কোথাও লরি-ম্যাটাডোর-ট্যাক্সি স্ট্যান্ড, কোথাও গাড়ির গ্যারাজ রয়েছে, কোথাও আবার রাস্তা পোশাকের দোকান, ফলের দোকান, চায়ের দোকান। রাস্তা আটকে বেআইনি পার্কিংও চলছে। গত বছর শহরে এসে এই পরিস্থিতি দেখে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলোয় ফুটপাথ অর্থাৎ, পাথওয়ে তৈরির নির্দেশ দিয়ে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই মতো পরিকল্পনা হয়েছে। তবে অর্থ বরাদ্দ না হওয়ায় কাজ এগোয়নি।
কেন পুর-পরিষেবার প্রত্যাশিত উন্নতি হয়নি, কেন শহরের সার্বিক উন্নয়ন সেই ভাবে হচ্ছে না? পুর-কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, পরিষেবার উন্নতি হয়েছে। আগের থেকে রাস্তাঘাটের হাল ফিরেছে। পানীয় জল, নিকাশি, অলিগলির আলোর সমস্যার অনেকখানি সমাধান হয়েছে। তবে অর্থের অভাবে পরিকল্পনা মতো সব কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। দীর্ঘদিন কর না বাড়ানোর ফলে এখন মাঝেমধ্যেই টান পড়ে পুরসভার কোষাগারে। ইতিমধ্যে নতুন হারে পুর-কর ধার্য হয়েছে। আগামী ১ এপ্রিল থেকে তা লাগু হওয়ার কথা। এখন পুর-কর বাবদ (হোল্ডিং ট্যাক্স) পুরসভার বছরে আয় হয় প্রায় ৪ কোটি টাকা। নতুন হারে পুর-কর লাগু হলে এটা প্রায় ৮ কোটি টাকা হতে পারে। মেদিনীপুরের উপ-পুরপ্রধান জিতেন্দ্রনাথবাবু মানছেন, “অর্থের অভাবে সব কাজ হয়তো সময় মতো করা সম্ভব হয় না।” তাঁর কথায়, “পুরসভার সীমাবদ্ধতার কথাও শহরবাসীকে বুঝতে হবে। পুর-কর থেকে যা আয় হয়, তার একটা বড় অংশই তো বিদ্যুৎ বিল মেটাতে চলে যায়। শহরের ২৫টি ওয়ার্ডে প্রায় ৩০ হাজার বাড়ি রয়েছে। সার্বিক উন্নয়নেরই চেষ্টা করা হয়।”
সমস্যার এই আবহেই উদযাাপিত হতে চলেছে পুরসভার সার্ধশতবর্ষ। গত ১ এপ্রিল পুরসভা দেড়শো বছরে পা দিয়েছে। কিন্তু তখন লোকসভা ভোটের হাওয়ায় অনুষ্ঠান হয়নি। পুর-কর্তৃপক্ষ পরে সিদ্ধান্ত নেন, ঘটা করেই সার্ধশতবর্ষ উদযাপন হবে। সেই মতো রবিবার হবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। শুরু হবে ১০ মাইল দৌড় প্রতিযোগিতা দিয়ে। পরে থাকছে সার্ধশতবর্ষ ভবনের শিলান্যাস। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আতসবাজির প্রদর্শনী। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার কথা জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা, জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরা সিংহ, বিধায়ক মৃগেন মাইতি, মহকুমাশাসক (সদর) অমিতাভ দত্ত প্রমুখের। মেদিনীপুরের পুরপ্রধান প্রণব বসু বলেন, “পুরসভার সার্ধশতবর্ষ উদযাপনের সূচনা উপলক্ষে রবিবার নানা কর্মসূচি থাকছে।”
অনুষ্ঠান পরিচালনার জন্য একটি কমিটি গড়া হয়েছে। তার আহ্বায়ক উপ-পুরপ্রধান জিতেন্দ্রনাথ দাস, সভাপতি কাউন্সিলর শম্ভুনাথ চট্টোপাধ্যায়, সম্পাদক পুর-পারিষদ অনিলচন্দ্র দলবেরা। আগামী দিনে কী কী কর্মসূচি হবে সেই ব্যাপারে আলোচনার ভিত্তিতে এই কমিটিরই সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা। সার্ধশতবর্ষ উপলক্ষে পুরসভার ওয়েবসাইটও তৈরি হয়েছে। শহরের তরুণ কাউন্সিলর নির্মাল্য চক্রবর্তী বলেন, “মেদিনীপুরের মতো শতাব্দী প্রাচীন পুরসভার নিজস্ব ওয়েবসাইট চালুর প্রয়োজন ছিল। ওয়েবসাইটটি যাতে আকর্ষণীয় হয়, সেই চেষ্টাও করা হয়েছে। আশা করি, এটি জনপ্রিয়ও হবে।”