পারুল প্রামাণিক। নিজস্ব চিত্র।
বাবা-মা নিরক্ষর। তাঁরা জঙ্গলের শাল পাতা ও শুকনো ডালপালা কুড়িয়ে হাটে বিক্রি করেন। অভাবের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর মত অবস্থা। তা সত্ত্বেও চরম প্রতিকূলতার মধ্যে অসম্ভবকে সম্ভব করেছে আদিম উপজাতিভুক্ত লোধা সম্প্রদায়ের পারুল প্রামাণিক। পশ্চিম মেদিনীপুরের নয়াগ্রাম থানা বালিকা বিদ্যাপীঠের আবাসিক ছাত্রী পারুল এ বার উচ্চ মাধ্যমিকে ৬৪ শতাংশ নম্বর পেয়েছে। তার প্রাপ্ত নম্বর ৩২১। পারুলের বিষয়ভিত্তিক নম্বর-- বাংলায় ৭৬, ইংরেজিতে ৪৩, পুষ্টিবিজ্ঞানে ৫১, দর্শনে ৮০ ও সংস্কৃতে ৭১। পারুলের বাড়ি নয়াগ্রামের জঙ্গল ঘেরা কলমাপুকুরিয়া গ্রামে। পারুলের দুই দাদা লেখাপড়া করে নি। তাঁরাও জঙ্গলের কাঠ-পাতা কুড়োয়। ছোট ভাই অবশ্য পারুলের চেষ্টায় এবার মাধ্যমিক পাশ করেছে।
পারুলও ছোট বেলায় বাবা-মায়ের সঙ্গে জঙ্গলে যেত। পারুলের বাবা মতিলাল প্রামাণিক বলেন, ‘‘ছোটবেলায় মেয়েকে নয়াগ্রামের ওই স্কুলের আশ্রম হস্টেলে ভর্তি করে দিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম, হস্টেলে থাকলে সরকারি খরচে মেয়েটা দু’বেলা খেতে পাবে। বাড়ির উপর তাহলে চাপ কমবে। কিন্তু ওখানে থেকে পারুল যে এমন ভাল পরীক্ষার ফল করবে ভাবিনি।’’
পারুল জানায়, “লোধা সম্প্রদায়ের মধ্যে লেখাপড়ার চল খুবই কম। ছোটবেলায় পড়াশনার মর্ম বুঝতাম না। স্কুলের শিক্ষিকাদের দেখে মনে হত, পড়াশুনা করলে তো দিদিমণিদের মতো হতে পারব। আর জঙ্গলে গিয়ে পাতা কুড়োতে হবে না। থেকে চেষ্টা করে গিয়েছি, স্কুলের টিচার ইনচার্জ ও শিক্ষিকারা ভীষণভাবে সাহায্য করেছেন।’’ ভবিষ্যতে শিক্ষিকা হয়ে নিজের সম্প্রদায়ের মধ্যে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে চায় সে। কিন্তু আর্থিক বাধায় স্বপ্ন সফল হবে কি-না তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে তার।
নয়াগ্রাম থানা বালিকা বিদ্যাপীঠের টিচার ইনচার্জ প্রণতি দাস বলেন, “লোধা সম্প্রদায়ের ছেলে মেয়েরাও যে ভাল ফল করতে পারে, সেটা পারুল করে দেখিয়ে দিয়েছে। সলতে পাকিয়েছি আমরা। তাতে জ্ঞানের আলোক শিখা
জ্বেলেছে পারুল।”