পূর্ব মেদিনীপুরে সিপিএমের জেলা সম্মেলনে রাজ্য কমিটির ১০ জন সদস্য আসছেন বলে জানিয়েছেন দলের জেলা নেতৃত্ব। সিপিএম সূত্রেই খবর, একটি জেলা সম্মেলনে এত জনের উপস্থিতি কার্যত নজিরবিহীন। সদ্য শেষ হওয়া পশ্চিম মেদিনীপুরের সম্মেলনেও উপস্থিত ছিলেন সাকুল্যে পাঁচ জন। পূর্বের গত সম্মেলনেও পাঁচ জনই ছিলেন। ওই সূত্রটি জানাচ্ছে, এই জেলার সম্মেলন এবং সংগঠনে আলিমুদ্দিনের ‘বিশেষ নজর’ রয়েছে। তাই এমন সিদ্ধান্ত।
গত পঞ্চায়েত, বিধানসভা-সহ রাজ্যের একাধিক নির্বাচনেই সিপিএমের রক্তক্ষরণ অব্যাহত। নন্দীগ্রামের এই জেলায় দলবিরোধী কাজের অভিযোগে ইতিমধ্যেই বহিষ্কৃত হয়েছেন লক্ষ্মণ শেঠ। তার জেরে লোকসভা ভোটের আগেই বড়সড় ভাঙন ধরে জেলা সিপিএমে। সেই সাংগঠনিক সঙ্কটেও জেলা সিপিএমের ঝুলিতে গড়ে ৩৫ শতাংশ ভোট পড়েছিল। যা রাজ্যের চেয়ে প্রায় ৬ শতাংশ বেশি। উল্লেখযোগ্য তথ্য, লক্ষ্মণ শেঠের এক সময়ের খাসতালুক হলদিয়াতেই ৪১ শতাংশ ভোট পেয়েছে বামেরা। এই সব তথ্য ছাড়াও সাম্প্রতিক কিছু সিদ্ধান্ত এবং পরিসংখ্যান জেলা সিপিএমকে কিছুটা অক্সিজেন যোগাচ্ছে বলে জেলা নেতাদের অভিমত। এক জেলা নেতার কথায়, সম্মেলনের মঞ্চে উজ্জীবিত করতে চাইছেন রাজ্য নেতারা।
সদস্য পুননর্বীকরণের পর চলতি বছরে জেলা সিপিএমের সদস্য সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ২৬৩ জন। যা গত বছরের চেয়ে ২৭৪ জন কম। তারপরও স্বস্তিতে জেলা নেতারা। কেন? তাঁরা বলছেন, অন্য জেলায় সংখ্যাটা হু হু করে কমেছে। তার তুলনায় ঢেড় ভাল জায়গায় পূর্ব। একই সঙ্গে তাঁদের যুক্তি, লক্ষ্মণ-কাণ্ডে জেলায় বহু জনকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। তারপরও এই সংখ্যা ধরে রাখা মুখের কথা নয়! দলের যুব সংগঠনে সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধিও স্বস্তিতে রেখেছে জেলা নেতাদের। রাজ্যে যখন ডিওয়াইএফ-এর সদস্য সংখ্যা পড়তির দিকে, তখন পূর্বে সংগঠনের সদস্য সংখ্যা বেড়েছে। ১ লক্ষ ২৫ হাজার থেকে বেড়ে হয়েছে ১ লক্ষ ৫৪ হাজার ২০০। তবে ছাত্র সংগঠন এসএফআই অবশ্য সাম্প্রতিক ছাত্র নির্বাচনে দাগ কাটতে পারেনি।
তা মেনে নিয়েই জেলা নেতাদের পর্যবেক্ষণ, পূর্বে সাংগঠনিক ভাবে কিছুটা হলেও ঘুরে দাঁড়ানোর জায়গা তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি জেলায় ১৯টি জোনাল কমিটির সম্মেলন হয়। তার মধ্যে ১৫টিতেই সম্পাদক করা হয়েছে নতুন মুখকে। দলেরই একটি সূত্র আবার বলছে, নীচুস্তরে কর্মীরা ঐক্য, লড়াইয়ের আবহ তৈরি করতে পারলেও নেতৃত্বের উপরের স্তরে সেই সমস্যা কিছুটা থেকে গিয়েছে। এই প্রেক্ষিতেই আসন্ন জেলা সম্মেলনে রাজ্য কমিটির ১০ জন সদস্যের যোগ দিয়ে কী বার্তা দেন সেটাই দেখার।
আগামী ১৫ থেকে ১৭ ফেব্রুয়ারি জেলা সম্মেলন হবে সুতাহাটার সুবর্ণ জয়ন্তী ভবনে। সম্মেলন উপলক্ষে স্থানীয় আজাদ হিন্দ ময়দানে প্রকাশ্য সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে রয়েছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা দলের পলিটব্যুরোর সদস্য বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। যদিও তিনি অসুস্থতার জন্য না-ও আসতে পারেন বলে প্রাথমিক ভাবে খবর। তবে আসছেন দলের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু, বিধানসভার বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র, রবীন দেব। থাকতে পারেন দীপক দাশগুপ্ত, মৃদুল দে, শ্রীদীপ ভট্টাচার্য, বিপ্লব মজূমদার, মিনতি ঘোষ-সহ ১০ জন রাজ্য নেতৃত্ব। প্রকাশ্য সমাবেশে লক্ষাধিক মানুষের জমায়েতের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছেন জেলা নেতারা। থাকছেন মোট ৬০০ প্রতিনিধি। সমাবেশে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়ে জেলার বাড়ি বাড়ি প্রায় ৫ লক্ষ চিঠি বিলি করেছে সিপিএম।
দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নিরঞ্জন সিহি বলেন, “সম্মেলনে রাজ্য নেতাদের উপস্থিতিতে জেলায় সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানো নিয়ে কৌশলগত আলোচনা হবে।” দলের এক জেলা নেতার কথায়, “নন্দীগ্রাম, খেজুরি, পটাশপুর-সহ জেলার বেশ কিছু এলাকায় তৃণমূলের সন্ত্রাসের কারণে প্রকাশ্যে রাজনৈতিক কর্মসূচি নেওয়া যাচ্ছে না। সেখানেও ক্রমশ জনসমর্থন ফিরে পাওয়া যাচ্ছে।”
সিপিএমের জেলা সম্পাদক প্রশান্ত প্রধানের কথায়, “সারদা-সহ নানা ঘটনায় কোনঠাসা শাসক দলের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর এটাই সেরা সময়। তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা কিছুটা হলেও মনোবল হারিয়েছে। সেই সুবিধেটাই আমাদের নিতে হবে। সাধারণ মানুষকে বোঝাতে হবে তাঁদের পাশে থাকে শুধু সিপিএমই, অন্য কোনও দল নয়।”